পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাখা ছেড়ে এই মেঘ-ভরা আকাশ চিরে ওপারে বহন দরে কোথায় উড়ে যাবো! এমন আনন্দ সত্যিই অনেকদিন পাই নি। এখনও সৌদালিফােল আছে—কিন্তু এবার অতিরিক্ত বর্ষায় অনেক অনিন্ট করেচে-অনেক ফলই ঝরে পড়ে গিয়েচে। সৌদালিফােল এত ভালবাসি যে ঘাটে নাইবার সময় ঘাটের ধারে যে গাছগালো আছে, সেদিকের ফলের ঝাড়গলোর দিকে চেয়ে থাকি-নইলে যেন প্রাণের আনন্দ সম্পৰ্ণে হয় না। দ-এক ঝাড় যা আছে, তাদেরও চেহারা বড় শ্ৰীহীন। কি করি, ওদের নিয়েই যা একটা আনন্দ পাই!.. আগের দিন জগন্নাথকে সঙ্গে নিয়ে বেলেডাঙার মাঠে গিয়েছিলাম। এ দিন বভিন্ট ছিল না, সন্দর মাঠ তৃণাবত, সৌদালিফােল এখনও গাছে গাছে খাব। দটি রাখার ছেলের সঙ্গে কতক্ষণ বসে গলপ করলাম, মাঠে ছাটোছটি করে বেড়ালাম, নদীজলে সন্ধ্যায় নাইতে নেমে সাঁতার দিলাম খােব। মোড়টা ফিরতে কুঠীর পথে একটা ঝোপের মধ্যে একটা ডালে কি ফল ফটে আছে—বাল্যজীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়—এক সময়ে এরাই ছিল সহচর, এদের সব চিনি।. রোজ খেয়ে উঠে মািখ ধোবার সময় খড়িমাদের বাড়ির পিছনে বাঁশতলার দিকে যাই। ঐ সময়টা বাহ পরাতন দিনের কথা মনে পড়ে যেন—পরাতন বাল্য-দিনগলি প্রতিদিন ঐ সময়টাতে ফিরে আসে। এখনও গ্রীল্ডেমর ছটি এবার শেষ হয় নি। পরশ পয্যন্ত আছে। কিন্তু খালবার সময় হয়েচে । মনটা বড় খারাপ হয়ে আসচে। কত কথা যে মনে আসচে—ক’ত গ্রীল্ডেমর ছটি এ রকম করে কাটল। অথচ দেশে তো আমার কেউ নেই।-- যখন ছিল সে ছিল আলাদা কথা।. এবার জ্যৈষ্ঠ মাসটা বড় বর্ষা। যখন বাঁশতলী গাছে আম পেকে টকটকে করছে, যখন যািগল কাকাদের চারা বাগানে আম পাকচে-তখন বর্ষার আকাশ এমন ঘন মেঘাচ্ছন্ন, যেন শ্রাবণ মাস কি আষাঢ় মাস। যে সময়ে কলেজে পড়বার সময়ে আমি বেলেডাঙার পথের বটতলার শান্ত আশ্রয় ছেড়ে কলকাতার নিরাশ্রয়তার মধ্যে চলে আসতুম, খািব কম্পট হত। এবারে কিন্তু কত দিন পৰ্যন্ত আমি রইলাম! কি সন্দির বর্ষাব্দশ্য এবার দেখলাম ইছামতীর চরে, ইছামতীর কালো জলের ওপরে! কি বড় বড় মেঘের ছায়া!..ঘাটের পথে খেজর গাছটােয় খেজর এখনও বোধ হয় খািজলে দ-একটা পাওয়া যাবে। ওদের নিয়ে রোজ পাঠশালা করতুম, খকু sentence লিখত, জগা ছড়া বলতো ৪— “VOG GKVDG VOTANT VEVOG ধরা তো বেতাল ধরে না’- কি মানে এর, ও-ই জানে—অথচ কি উৎসাহেই আবত্তি করত! শিব ও সরো ধনকবাণ নিয়ে যাত্রা করতে আসত, খকু কত রাত পৰ্যন্ত বসে আমার কাছে গলপ শনত,--জ্যোৎসনা উঠে যেত। তবও সে বাড়ি যেতে চাইত না। এক-একদিন আবার দাপরে এসে বলত, গলপ বলন। আসবার দিন বকুলতলায় বসে ওকে খাতা বোধে দিলাম, sentence করতে দিয়ে বলে এলাম, এসে আবার দেখব । “মায়ের ভাঙা কড়াখানা উলেট পড়ে গিয়েছে, ভিটেটাতে বড় বেশী জঙগল হয়েচে —অপ” যেমন বইতে লিখোঁচ। কুঠীর মাঠে গিয়ে এক-একদিন গামছা পেতে শায়ে থাকতুম-খব হাওয়া, বড় চমৎকার লাগত। কিন্তু যখন ইছামতীর জলে নাইতে নামতুম সকালে ও বিকেলে— সেই সময়ই সকলের চেয়ে লাগত ভালো। ও পাড়ার ঘাটের সামনে সবজি ঢাল ঘাস GO