পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভরা মাঠ ও অাঁকাবাঁকা শিমালগাছটা যে অপব্ব সৌন্দৰ্য ফাটিয়ে তুলত চোখের সম্মখে তা কাকে বলি, কে-ই বা বঝবে ? যখন আসি তখনও বৌ-কথা ক' ছিল, তখনও পাপিয়া, কোকিল ডাকত, অথচ তখন তো আষাঢ় মাস পড়েই গিয়েছিল। এবার। এ-বাড়ি ও-বাড়ি এত নিমন্ত্রণ সবাই করে খাইয়েছে- কেন জানি না, অন্যবার এত নিমন্ত্ৰণ তো করে না। দেবব্রতকে কত কাল দেখি নি—তার মখ ভুলেই গিয়েছি-এতকাল পরে এইবার দেখব । সেদিন বনগাঁয়ে গেছলাম—সকালে খাকীর সঙ্গে পাকা রাস্তায় সাঁকোতে কত খেলা করলাম। খাকী কত ফল তুললে, পাতা তুললে, আমিও কত ফল পেড়ে নিয়ে এসেছিলাম ; খৰিকী রাঁধলে। খাকীর সঙ্গে ছেলেমান ষী খেলা খেলে ভারী আনন্দ পাই।।*! খাকী কিন্তু পড়ােশানো করে না, এই ওর দোষ। খকু এর মত নয়, খাকু খব বন্ধিমতী, পড়াশনোয় খাব ঝোঁক। বনগাঁয়ে সেদিন বোটের পলে বিশবনাথ, দেবেন, সরোজ সবাই বসে গলাপ করছিল, আমি যেতে অনেকক্ষণ বসে গলপ হল, বিশবনাথ নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে খব খাওয়ালে। রাত্রে এই দিন বঙ্কুর বাসায় খাওয়ার পরে জ্যোৎস্নায় বেড়াতে বেড়াতে বনগাঁ স্কুলের ফটকে ঠেস দেওয়ানো বেণ্ডিটার ওপর গিয়ে বসলাম। কত কথা মনে আসে ! চব্বিশ বছর আগে একজন বারো বছরের ক্ষমাদ্র বালক একা বাড়ি থেকে ভীতি হতে এসে। ওই জায়গাটাতে লাজক ভাবে চপ করে বসে ছিল—ক’তকাল আগে! সেদিন আর আজকার মধ্যে কত তফাত তাই ভাবি। হেডমাস্টার মশায়ের ঘরের সামনে বেড়িয়ে এলাম-বোডিং-এর সব ঘরের সামনে বেড়ালাম। কিন্তু পর পর সেদিনের কথাটা মনে আসছিল--একটি ছোট ছেলে বিষয় জলা ও আষাঢ়শ্রাবণের আউশ ধানের ক্ষেত ভেঙে এক-গা কাদা মেখে চাদর গায়ে, মায়ের কাছ থেকে ভতি হওয়ার সামান্য টাকা ও দটি পয়সা। জলখাবারের জন্যে বেধে এনে লাজক মখে চপ করে ওই স্কুলের পৈঠার উপর বসে আছে—এমন মািখচোরা যে, কাউকে বলতে পারচো না ভিত্তি কোন ঘরে হয়, বা কাকে বলতে হবে ? সেই ছোট ছেলেটি চব্বিশ বছর আগেকার আমি.কিন্তু সে এত দারের ছবি, যে আজ যেন তার ওপর অলক্ষিতে স্নেহ আসে। ওঃ, এবার যেন ছটিটা খাব দীঘ মনে হচ্চে। সেই কবেকার কথা, সশীলবাবার সত্ৰী বটতলায় ভাত রোধে আমাদের পরিবেশন করে খাইয়েছিলেন, আমরা কাঠ কুড়িয়েছিলাম, যােগল এসে দাঁড়িয়ে কথা কয়েছিল—সে কত দিনের কথা। তারপর গোপালনগরের বারোয়ারী, তুফান ঠাকরণের বিষোৎসগ শ্রাদ্ধ, সে সবও কতকালের কথা। বড় চারার আমি কেনা, মাঠের চারার আমি কেনা, সে সবও আজকার কথা নয়। অচিানোর সময়ে খড়িমাদের বাড়ির পিছনে গাছপালা ও বাঁশবনের দশ্যটা এত অদভুত যেন একেবারে শৈশবে নিয়ে যায় এক মহতো। জীবনের রােপ ও সৌন্দয্যে ডাবে গেলাম। হে ভগবান! এর তুলনা দিতে পারি নে। পঞ্চানন চক্লবতীর সঙ্গে আলাপ হল, ইউনিভাসিটির একটি brilliant ছেলে, রেবতীবাবর বন্ধ। পথে আসতে আসতে অবনী ও শৈলেন।বাবার সঙ্গে দেখা। তারা মনোজের বাড়ি কাঁঠাল-খাবার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে চলেচে। বান্টি আসচে দেখে

  • খকু এবং খাকী এক নয়,-খাঁরকু থাকে বারাকপরে আর খাকী বনগাঁয়ে।

GS