পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সত্যিই ওর হাসি কেউ চাইত না। ওর বাবা তো মারা গেল ; ওর মারও সঙ্কটাপন্ন অসংখ্যা হল-ওকে কেউ দেখত না-ওর খড়িমা বললে—টাকা পাই তো। ওকে মাইয়ের দধি দি। ওকে নারকোলতলায় চট পেতে শইয়ে রাখত উঠানে—আমার কািট হত—কিন্তু আমি কি করব? আমি তো আর স্তন্যদণধ দিতে পারি নে ? ওর রিকেটস হল। দিন দিন শীর্ণ হয়ে গেল—তবও মাঝে মাঝে বনগাঁয়ের বাসায় বাইরের দালানে শয়ে সেই অকারণ অর্থহীন হাসি হাসত—সেদিনও তেমনি হাসতে দেখে এসেছি ...ও-শনিবারে যখন বাড়ি থেকে আসি। Unwanted smile! কিন্তু সে হাসি কোথায় অদশ্য হয়ে গিয়েচে গত মঙ্গলবার থেকে—খয়রামারির মাঠে ওর বালিশটা পড়ে আছে সেদিন দেখেচি—এ ছাড়া আর কোন চিহ্ন কোথাও রেখে যায় নি ও। Poor little mite! কিন্তু আমি বলি ও হাসি শাশ্ববত,—এই বসন্তে বনে বনে ঘোটফলের দলে ফটেচে, ফলে ফলে কত কাল ধরে ফটে আসচে-কালের মধ্যে দিয়ে ওর জীবনধারা অপ্রতিহত, প্রতিদ্বন্দ্বীহীন ও নিত্য-খকীর হাসিও তেমনি। পাক সাকাস থেকে ট্রামে আসতে আসতে তারা-ভরা নৈশ আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে আমার মনে এ সত্য জেগেচে—এই ঘণ্যমান, বিশাল নাক্ষত্রিক জগৎ, এই সন্টিমখী নীহারিকায় প্রজবলন্ত বাল্পপঞ্জের রাশি—এই অনাদ্যন্ত মহাকালএরা যেমন নিত্য, যতটকু নিত্য, যে অর্থে নিত্য, তার চেয়ে কোন অংশে কম নিত্য নয়। আমার অবোধ, অসহায়, রোগশীর্ণ খাকীর দন্তহীন কাঁচমখের অনাদত, অপ্রাথিত, অর্থহীন, অকারণ হাসিটকু। বরং আমি বলচি তা আরও বড়-এ বিশেবর কোথাও যেন এমন একটা বিপল ও সপ্রতিষ্ঠ অধ্যাত্ম নীতি আছে, উদীয়মান সবিতার রক্তরাগের মত তা অন্ধকারের মধ্যে আলোর সাণাঃার করে, জড়ের মধ্যে প্রাণের সম্পন্দন জাগায়, সকল সন্টিকে অর্থ যন্ত করে—এইজন্য অর্থব্যক্ত করে যে, যে গৌরবে সন্টির সৌন্দয্য রােপ পেয়েচে, মহিমময় হয়েছে—সেই বর্ণ সবিতার দান, আদিম অন্ধকারে অবগঠিতা বসন্ধরার মাখের আবরণ অপসারিত করেছেন সবিতা তাঁর আলোর অঙ্গলির সপশে--তাকে সার্থক করেচেন, জাগ্রত করেচেন, মাটির মাত্তিতে প্রাণপ্ৰতিষ্ঠা তাঁরই তেজোময় মন্ত্রে। খাকীর হাসি সবিতার ওই অমতেজ্যোতির মত, তা মহত্যুঞ্জয়ী, তা বিশেবর জড়পিন্ডে প্রাণের সঞ্চার করে, বিপল সন্টিকে অথষক্ত করে, গৌরবময় করে। তা মিথ্যা নয়, অনিত্য নয়,-তা শাশবত, তা অমত। এবং তা সম্পভব হয়েচে সন্টির ওই অধ্যাত্মনীতির আইনে-ও নীতি অমোঘ-ওর শক্তি ও ওর সত্য, অস্তিত্ব অন্তরতম অন্তরে অনভব করতে পারি-কিন্তু ভাষায় বোঝানো যায় না।

  • বেলা পড়ে এসেচে। রাঙা রোদ দারের পাহাড়ের মাথায়, শালবনে, রাঙামাটির টিলার গায়ে। চারিধার কত নিঃশব্দ-আকাশ কেমন নীল--অনেকদিন এমন মনের আনন্দ পাই নি—কলকাতার মািমষ নিস্তেজ মন কাল সারারাত ও আজ সারাদিনের মাঝে বন্য-সৌন্দৰ্য্য দেখে, প্রথম বসন্তে ফটত পলাশ বনের ও ধাতুপ ফলের প্রাণবন্ত রােপ দেখে—ইব সেন্টশনের অরণ্য-নদী-পৰ্ব্ববত সমাচ্ছন্ন বিরাট পটভূমির দশ্যে একমহন্তে তাজা হয়ে উঠল--কি ঘন শাল-পলাশের বন-কি সন্দের জনহীন প্রান্তর, দরে দরে নিজজন পৰ্ব্ববতমালা-মন অভিভূত হয়ে পড়ে কিন্তু হৃদয়ের অভ্যন্তরে মাথা সতেজ হয়ে ওঠে। রোদ কি অপব্ব রাঙা হয়ে এসেচে— সেন্টশনের পাশের পথটা দিয়ে সোমড়ার হাট থেকে সাঁওতালী মেয়েরা হাট করে ঝড়ি
  • সম্পবেলপার

ᏩᏔ)