পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাথায় নিয়ে যাচ্চে। হাটটায় এইমাত্র আমি, প্রমোদবাব ও কিরণবােব বেড়াতে গিয়েছিলাম—বেগন, রেড়ির বীজ, কচি ইচড়, চিংড়ি, কুমড়ো, খই, মাড়ি বিক্লি করচে। এক জায়গায় একটি সাঁওতালী যাবতী ধান দিয়ে মড়কী নিচ্চে। এই হাটের সামনে একটা প্রাকৃতিক জলাশয়ে আমরা সন্নান করলাম। ভারী আনন্দ পেয়েচি আজ-ভাগলপার ছেড়ে আসবার পরে এত আনন্দ সত্যই অনেককাল পাই নি। রোদের রাঙা রং অতি অপৰিব! ডাকবাংলো থেকে লোক জিজ্ঞেস করতে এসেচে আমরা রাত্রে কি খাব। সকালে আমরা রওনা হলাম। পথে কি সন্দির একটা পাহাড়ী ঝরনা। সিরসির করে পাহাড়ী নদী বয়ে চলেচে। কতকগলি লোক একটা কাঠের পালের ওপর খড় বিছিয়ে দিচ্চে। তারা বললে, পাটোয়ারীর ছেলে এ-পথে চলে গিয়েচে। পাহাড়ী করবীর দল জলের ধারে ফটে রয়েচে। শান্ত শাল-পলাশের বনের ছায়া। এখানেই সবাই উড়িয়া বলি বলচে। এমন ভাল লাগে! নীল আকাশের তলে অফরান্ত বাঁশের জঙ্গল। শাল-পলাশের বনে রোদ ক্ৰমে হলদে হয়ে আসচে। প্রিশেডালা থেকে গভীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে ৭ ৮ মাইল পথ হোটে দাপরে বিক্রমখোলে পৌঁছলাম। বিক্রমখোলের গায়ে প্রাগৈতিহাসিক যাগের পাথরে উৎকীর্ণ লিপি আবিস্কৃত হয়েচে--তাই দেখবার জন্য আমরা এখানে এসেচি। লেখাটা ভারী চমৎকার জায়গায়—একটা Limestone-crag-এর নীচে ছায়াভিরা জায়গায় প্রাকৃতিক ছোট একটা গহা মত—তারই গায়ে লেখাটা। চারিধারে বন যেমন, গভীর তেমনি সন্দর-পথের মধ্যে জঙ্গলে কত ধরনের গাছ। আমলকী ও হরিতকীর বন—আমরা আমলকী ফল কুড়িয়ে খেতে খেতে এলাম। প্ৰিগ্ৰেডালা গাঁয়ের পাটোয়ারী আমাদের জন্যে মড়কী ও দধি নিয়ে এল। উড়িষ্যার এই গভীর জঙ্গলে সেই প্রাগৈতিহাসিক যাগের শিলালিপি ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক বিশেষজ্ঞদের দাৰ্লিট আকৃষ্ট করেচে। জায়গাটা অতীব গভীর অরণ্যময়।--কি অপব্ব নীল আকাশ অরণ্যের মাথায়— কি অপব্ব নিস্তব্ধতা...পাহাড়ের crag, তার ছায়ায় আমরা কতক্ষণ বসে রইলাম --ছেড়ে যেতে আর ইচ্ছে করে না-ইচ্ছা হয় না যে আর বেলপাহাড়ে ফিরি। আবার গাড়িতে উঠি। আবার কলকাতায় যাই। প্রিশ্ৰেডালা নামে একটা গাঁ পাহাড়ের পাদদেশে—এইখান দিয়ে বিক্রমখোলা যেতে হয়। আমরা বেলা দশটার সময় এখানে পৌছিলাম। একটা পরেই পাটোয়ারী গাড়ি করে এল। গাঁয়ের ‘গাঁউঠিয়া’ অর্থাৎ গ্রাম-প্রধানের নাম বিশ্বব্যাধর।--সে তাড়াতাড়ি আমাদের জন্যে দধি ও মড়কী নিয়ে এল খাবার জন্যে। একটা বিশ্রাম করে আমরা বিক্রমখোল রওনা হলাম—দেখােশানো করে ফিরে আবার গাঁয়েই এলাম। ওবেলাকার নাচের দল নাচ দেখালে। আমরা একটা ফটো নিলাম। আমাদের কোন অদভ্ৰাটপাকবািক জীব ভেবে এখানকার লোকেরা ঝাঁকে পড়েচে-দলে দলে এসে আমাদের চারিপাশে দাঁড়িয়েচে। প্রমোদবাব, মাখে সাবান মেখে দাড়ি কামাচ্ছে—এরা অবাক হয়ে চেয়ে আছে-এ দশ্য আর কখনো দেখে নি বোধ হয়। ফটোগ্রাফ নেবার সবিধার জন্য নােচ হল পথের ওপর-ঝন-ঝন করচে রোদ-নাচওয়ালীদের মাখের ওপর বড় রোন্দর পড়েচে দেখে আমি পরিমলবাবকে তাড়াতাড়ি snapটিা সেরে বিক্রমখোলের পথে GS