পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্যামাপ্রসাদ বাবার বাড়ি। পাশের বৈঠকখানায় রমাপ্রসাদবাব আছেন দেখলামশ্যামাপ্রসাদবাবও তাঁর লাইব্রেরী ঘরে কি কাজ করছিলেন। সেখানে খানিকটা থাকার পরে বাসায় ফিরলাম। বৈকাল বেলা। আজ রামনবমী। কতদিনের কথা মনে পড়ে। বৈকালে বসে বসে তাই ভাবছিলাম।--বেলা পড়ে এসেচে-কত পাপিয়ার ডাকভরা এই সময়ের সেই পরাতন দােপারগলো।...বাঁশের শকিনো পাতার কথা কেন এত মনে হয় তা বাঝতে পারি নে। সভদ্রাকে কাল যখন পত্র লিখলাম--তখনও বাঁশবনের কথা ও শকিনো পাতার রাশির কথাই মনে এল। পাপিয়ার গানের কথা বিশেষ করে মনে আছে। এই সব দিনের অতীত দ্যপারগলোর সঙ্গে পাপিয়ার গান জড়ানো আছে, আর জড়ানো আছে অদ্ভুত ধরনের wild আনন্দ!. বেলা পড়ে এসেচে। গোসাঁই-পাড়ার নারকোলতলায় আজও তেমনি মেলা বসচে, অতীত দিনের মত। বাদা ময়রা মড়ক ও কদমা বিক্ৰী করচে, গোপালনগর থেকে হয়তো যােগল ও হাজরা ময়রা তাদের তেলে-ভাজা জিবে-গজা ও জিলিপীর দোকান frIG8 ACPICb বাবার সেই শেলাকটা—অনেক কালের সেই আমবনের ছায়ায় উচ্চারিত শেলাকাটা আজও আমার মনে আছে। পরেনো খাতাখানা আজও আছে, নন্ট হয় নি। সকালবেলা। নেড়াদের ছাদে বসে লিখচি ; গ্রীল্ডেমর ছটিতে গ্রামে এসেচি। বাসতবিকই গ্রামের লোকের সংকীর্ণতা এত বেশী-মনকে বড় পীড়া দেয়। এদের মন চারিধার থেকে শঙ্খলিত-—খলবার অবকাশ নেই। আবাল-বন্ধ-বণিতার এই দশা দেখচি, এদের আচার শতক ও সৌন্দয্যবিভিজাত - স্বাস্থানীতির সঙ্গে এদের কোন সম্পাক নেই। কাল বিকেলে নদীর ধারে গিয়ে অনেকক্ষণ একলা বসে ছিলাম। বাংলা দেশের, বিশেষ করে আমাদের অঞ্চলের প্রকৃতির এই যে সৌন্দয্য—এ অন্য ধরনের। কিছদিন আগে আমি উড়িষ্যায় গিয়ে সেখানকার বন পাহাড়ের সৌন্দয্যের কথা যা লিখেছিলাম—এখানে বসে মনে মনে বিচার করে দেখে আমি বাবলাম তার অনেক কথা আমি ভুল লিখেছিলাম। বাংলার সৌন্দৰ্য্য more tropical এখানে অলপ একটা সস্থানের মধ্যে যত বিভিন্ন শ্রেণীর গাছপালা ও লতা আছে-ওসব দিকে তা নেই। এখানে বৈচিত্র্য বেশী। নীল আকাশ ওখানেও খোলে—-মনে অন্যরকম ভাব আনে, তা মহনীয়, বিরাট-এ কথা ঠিকই। কিন্তু বাংলার আকাশ-বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলের কি গ্রাম্য নদীর উপরকার যে আকাশ--তার সৌন্দৰ্য মনে অপবােব শিল্পরসের সন্টি করে— মনে বৈচিত্ৰ্য আনে। হয়তো বিরাটতা নেই, ঠিকই—কি তু Poetry of Life এতে যেন বেশী। বাঁশগাছে ও শিমলগাছে এ দেশের, বিশেষ কের আমাদের এই অঞ্চলের, সৌন্দয্যকে এক অভিনব রূপ দিয়েচে । জ্যৈষ্ঠ মাসে এর সঙ্গে গ্রামে জোটে কচি উলবন ও আউশ ধানের ক্ষেত। এত সবজের সমাবেশ আর কোথাও দেখি নি। —a feast of green-তবে গ্রামের মধ্যে মক্ত আকাশ বড় একটা দেখা যায় না-ওই একটা দোষ। বড় চাপা। কিন্তু মাঠে, নদীর ধারে—মন্তের প্রকৃতি যেমনি লীলাময়ী তেমনি রােপসী। উদার প্রান্তর, উদার আকাশ- নানা বর্ণের মেঘের মেলা অস্তদিগন্তে, সন্ধ্যার কিছ পাব্বে মেঘ-চাপা গোধলির আলোয়, গাছপালায়, শিমলগাছের মাথায়, নদীজলে, উলখেড়ের মাঠে কি যে শোভা!. CC