পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রকাশ করতে পারি নে। সন্ধ্যা হয়ে আসচে, অস্তদিগন্ত রঙে রঙে রঙীন। বহলদরে দরে, উচ্চ মালভূমির সদর প্রান্ত সান্ধ্যছায়াচ্ছন্ন, দিক চক্ৰবালরেখা নীল শৈলমালায় সীমাবদ্ধ, সামনে, পিছনে, ডাইনে, বাঁয়ে যেদিকে চাই, ধন্ধ বক্ষহীন, অন্তহীন উচ্চাবচ মালভূমি, শৈলমালা, শিলাখণ্ডড,-দা-চারটা শালপলাশের গাছ। মাথার উপর অপব্ব নীল আকাশ, ঈষৎ ছায়াভরা কারণ সন্ধ্যা হয়ে আসচে-পিছনের পাহাড়টি ক্ৰমে গাড়ির বেগে খাব দরে গিয়ে পড়চে, তার ওপরকার বক্ষশ্রেণী ক্রমশঃ অস্পষ্ট হয়ে আসচে-সামনের শৈলমালা ফটে উঠেছে—ব্রুমে অনেক দরে সিতাবলডির পাহাড় ও বেতার টেলিগ্রাফের মাসতুল দেখা যাচ্ছে। তার নীচে চারিদিকের মালভূমি ও পাহাড়ে ঘেরা একটা খাঁজের মধ্যে নাগপাের শহরটা। এমন একটা মহিমময় দশ্যের কলপনা আমি জীবনে কোনদিনই করতে পারি নি-বাংলাদেশ এর কাছে লাগে না—এর সৌন্দয্য যে ধরনের অনভূতি ও পলক মনে জাগায়, বাংলাদেশের মত ভূমিসংস্থান যে সব দেশের সে সব দেশের অধিবাসীদের পক্ষে তা মনে কলপনা। করাও শক্ত। উড়িষ্যার দশ্যও এর কাছে ছোট বলে মনে হয়—সেখানে জঙ্গল আছে, বনো বাঁশের ঝাড় আছে বটে, কিন্তু এ ধরনের অবর্ণনীয় সমহান, বিরাট, রক্ষ সৌন্দয্য সেখানকারও নয়। তখন আমি এসব দেখি নি, কাজেই উড়িষ্যাকেই ভেবেছিলাম। এই প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের চরমতম সন্টি। আমি বনশ্ৰী খব ভালবাসি, বন না থাকলে আমার চোখে সে সৌন্দয্য সৌন্দৰ্য্যই নয়-কিন্তু বন না থাকলেও যে এমন অপব্ব রােপ খলতে পারে, এমন Superb অনভূতি মনে জাগতে পারে তা আমার ধারণাও ছিল না। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেচে। এখানে পাহাড়ের ওপর দটো হ্রদ আছে, একটার নাম আমবাজেরী। আর একটার নাম কি বললে যোধপরী ছাত্রটি ঠিক বঝতে পারলাম না। দটোই বড় সন্দর-অবিশ্যি আম্পবাজেরী হ্রদটা অনেক বড় ও সন্দরতর। এ হ্রদের সামনে কলকাতার ঢাকুরে লোককে লডজায় মািখ লকাতে হয়। এর গম্ভীর মহিমার কাছে ঢাকুরিয়া লেক বালিমীকির কাছে ভারতচন্দ্র রায়। এর কি তুলনা দেব ? মিলান জোৎসনা উঠল। যোধপরী ছাত্রটি লোক ভাল, কিন্তু তার দোষ সে অনবরত বকচে। প্রমোদবাবা তার নাম রেখেচোন। ‘মালো”—সে চপ করে থাকলে আমরা আরও অনেক বেশী উপভোগ করতে পারতুম। আসবার পথটিও বড় চমৎকার-পথ ক্ৰমে নেমে যাচ্চে-দধারে সেই রকম immensity। মনে হল আজ পাজার মহাস্টমী—দর বাংলাদেশের পল্লীতে পল্লীতে এখন এই সন্ধ্যায় মহাস্টমীর আরতি সম্পন্ন হয়ে গেছে, প্রাচীন পাজার দালানে নতুন জামা-কাপড় পরে ছেলেমেয়েরা মাড়ি-মািড়কি, নারকোলের নাড়া কোঁচড়ে ভরে নিয়ে খেতে খেতে প্রতিমা দেখচে । বারাকপরের কথা, তার ছায়াঘেরা বাঁশবনের কথাও এ সন্ধ্যায় আজ আবার মনে এল। সজনে গাছটার কথাও—সেই সজনে গাছটা। মহাভাটমীতে আজ ক্ল্যাডকা-টাউনে প্রবাসী বাঙালীদের দাগোৎসব দেখতে গিয়েছিলাম। নাগপারে বাঙালী এত বেশী তা ভাবি নি ; ওরা প্ৰসাদ খাবার অন্যুরোধ কুকুল, কিন্তু নীরদবাবকে রাগন অবস্থায় বাসায় রেখে আমরা কি করে বেশীক্ষণ ק মারাঠী মেয়েরা রঙীন শাড়ি পরে সাইকেলে চেপে ঠাকুর দেখতে যাচ্চে। আমরা মহারাজবাগের মধ্যের রাস্তা দিয়ে এগ্রিকালচারাল কলেজের গাড়িবারান্দার নীচে দিয়ে ভিক্টোরিয়া রোডে এসে পৌঁছলাম। রাত সাড়ে সাতটা, জ্যোৎসনা মেঘে ঢেকে গ্লফেলেচে । V O