পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেদিন বনগাঁয়ে ছকু পাড়ােইর নৌকাতে সাতভেয়েতলা বেড়াতে গিয়েছিলামএবার বর্ষায় ইছামতী কলে কলে ভরে গিয়েছে—দধারের মাঠ ছাপিয়ে জল উঠেচে— তারই ধারের বেতবন, অন্যান্য আগাছার জঙ্গল বড় ভাল লেগেছিল। অত সবজি, কালো রংয়ের ঘন সবজি-বাংলা ছাড়া আর কোথাও দেখা যাবে না, বনের অত বৈচিত্ৰ্য ও রােপ কোথাও নেই-নীল আকাশের তলায় মাঠ, নদী, বনঝোপ বেশ সন্দর লেগেছিল সেদিন। কিন্তু আজ মনে হল সে যত সন্দের হোক, তার বিরাটতা নেই-তা pretty G, majestic in চারিধারে জঙ্গলাবত-গাছপালার মধ্যে হ্রদটা। হলুদের বাংলোতে বসে লিখচি৷ প্রমোদবাব বলচেন, সয্যে ঢলে পড়েচে শীগগির লেখা শেষ করুন। এখান থেকে আমরা এখন রামটেক যাব। কি গভীর জঙ্গলটাতে এইমাত্র বেড়িয়ে এলাম-বনো শিউলি, কেন্দ, আবলস, সাইবাবলা সব গাছের বন। সামনে যতদর চোখ যায় নীল পব্বতমালা বেষ্টিত বিরাট হ্রদটা। এমন দশ্য জীবনে খািব কমই দেখোঁচ। পাহাড়ে যখন মোটরটা উঠল—তখনকার দশ্য বর্ণনা করবার নয়। সময় নেই হাতে, তাই তাড়াতাড়ি যা-তা লিখচি। সােয্য ঢলে পড়েচে—এখনও এখান থেকে পাঁচ মাইল দরবত্তীর্ণ রামটেক দেখতে যাব। প্রমোদবাবা তাগাদা দিচ্চেন। বনশিউলি গাছের সঙ্গে বনতুলসী গাছও আছে-কিন্তু তা পাহাড়ের বাইরের ঢালতে। একটা সন্দের গন্ধ বেরচ্চে। মোটরওয়ালা কোথায় গিয়েছে-হন দিচ্চি—এখনও খোঁজ পাই নি। পাহাড়ের গায়ে ছায়া পড়ে এসেচে। দরের পাহাড় নীল হতে নীলতর হচ্চে। এখানে হ্রদের সাজানো বাঁধানো সিড়ি ভেঙে জল সংগ্রহ করা অত্যন্ত কষ্টকর। বাংলোয় চৌকিদারের কাছ থেকে জল চেয়ে দজনে খেলাম। ক্ৰমে সন্ধ্যা হয় হয়। ড্রাইভারটা কোথায় ছিল-হন দিতে দিতে এল। প্রমোদবাব ছড়ি ফেলে এসেছেন—হদের ঘাটে নেমে আনতে গেলেন। ফিরে বললেন-ছায়া আরও নিবিড়তার হয়েছে বনের মধ্যে। অপরাহের ছায়ায় বন আরও সন্দর দেখাচ্চে। ওখান থেকে মোটর ছেড়ে, শৈলমালাবত সন্দর পথে রামটেক এলাম। রামটেক, যখন এসোঁচি, তখন বেলা আর নেই, সায্য অস্ত গেছে। অপরাহের ছায়ায় রামটেকের সবাহৎ উপত্যকা ও ছায়াচ্ছন্ন অরণ্যাবতে শান্ত অধিত্যকাভূমির দশ্য আমাদের কাছে এতই অপ্রত্যাশিত ভাবে সন্দর মনে হল যে, আমি মনে মনে বিস্মিত হয়ে গেলাম। এই সন্দর গিরিসান দেশ এখনি জ্যোৎস্নায় শত্র হয়ে উঠবে, এই নিজজনতা, সেই প্রাচীন দিনের সমিতি—এসব মিলে এখনি একে কি অপরােপ রােপই দেবে-কিন্তু আমরা এখানে পৌছতে দেরি করে ফেলেচি, বেশীক্ষণ এই ছায়াভিরা। ধন্সর সানশোভা উপভোগ করতে তো পারব না। পথ খািব চওড়া পাথরে বাঁধানো-কিন্তু উঠেই চলেচি, সিড়ি আর শেষ হয় না। প্রথমে একটা দরজা, সেটা এমন ভাবে তৈরী যে দেখলে প্রাচীন আমলের দরগােদবার বলে ভ্ৰম হয়। তারপর একটা দরজা, তারপর আর একটা-সব্বশেষে মন্দির। মন্দিরে প্রবেশ করে বহিরাঙ্গণের প্রাচীরের ওপরকার একটা চবতারায় আমরা বসলাম। নীচেই বাঁ ধারে কিন্যাসী হ্রদ, পন্ডেব পণচন্দ্র উঠচে, চারিধারে থৈ-থৈ করচে বিরাট Space, পশ্চিম আকাশ এখনও একটা রঙীন। মন্দিরে আরতির সময়ে এখানে নহবৎ বাজে, এক ছোকরা বাইরে পাঁচিল ঠেস দিয়ে বসে সানাই বাজাতে শার করলে। আমি একটা সিগারেট ধরলাম। একটি পরে জ্যোৎসনা আরও ফাটল। আমাদের আর উঠতে ইচ্ছে করে না, প্রমোদবাব তো শহয়েই পড়েচোন। দরে পাহাড়ের নীচে আম্পবারা গ্রামের পরিকুরটাতে জ্যোৎস্না পড়ে চিক চিক করচে। মন্দির দেখতে গেলাম। খব ভারী ভারী গড়নের VN