পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-পাথরের চৌকাঠ, দরজার ফ্ৰেম—সেকেলে ভারী দরজা, পেতলের পাত দিয়ে মোড়া মোটা গল বসানো। মন্দিরের দােপাশে ছোট ছোট ঘর, পরিচারক ও পাজারীরা বাস করে। তাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধালো করচে, মেয়েরা রান্নাবাড়া করচে। রামসীতার মন্দিরের দরজার পাশে অনেকগলি সেকেলে বন্দক ও তলোয়ার আছে। একজনকে বললাম-এত বন্দক কার ? সে বললে-ভোঁসলে সরকারকা। ১৭৮৩ সালে রঘজৰী ভোঁসলা এই বৰ্ত্তমান মন্দির তৈরী করেন। আম্পবারা সরোবরের পাশে ভোঁসলাদের বিশ্রামাবাসের ধবংসাবশেষ আছে, আসবার সময় দেখে এসেচি। মন্দিরের পিছনের একটা চবতারায় দাঁড়িয়ে উঠে নীচে রামটেক গ্রামের দশ্য দেখলাম-বড় সন্দর দেখায়! রামটেক, ঠিক গ্রাম নয়, একটা ছোট গোছের টাউন। মন্দির প্রদক্ষিণের পর পাহাড় ও জঙ্গলের পথে আমরা নেমে এলাম । জ্যোৎস্নার আলোছায়ায় বনময় সানদেশ ও পাষাণ বাঁধানো পথটি কি অদভুত হয়েচে । এখানে বসে কোন ভাল বই পড়বার কি চিন্তা করবার উপযক্ত স্থান। এর চারিধারেই অপ্রত্যাশিত সৌন্দৰ্য্যময় গলিঘাঁজি, উচ্চাবচ ভূমি, ছায়াভিরা বানান্ত দেশ। আমার পক্ষে তো একেবারে সবগ। ঠিক এই ধরনের সস্থানের সন্ধানই আমি মনে মনে করেচি অনেকদিন ধরে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের থেকে এর সৌন্দয্য অনেক বেশী, যদিও চন্দ্রনাথের মত এ পাহাড় অতটা উচিত নয়। আম্পবারা গ্রামটি আমার বড় ভাল লাগলচারিধারে একেবারে পাহাড়ে ঘেরা, অনেকগলি ছোট ছোট দোকান, গোলা ঘর, একটা সরাইও আছে। ইচ্ছে হলে এখানে এসে থাকাও যায়। আমরা খাব তাড়াতাড়ি নামতে পারলাম না, যদিও প্রতিমহত্তে ভয় হচ্ছিল, মোটর ড্রাইভার হয়তো কি মনে করবে। বেচারী সারাদিন কিছ খায় নি। আম্পবারা গ্রামটা দেখবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তার সময় ছিল না, তাড়াতাড়ি মোটর ছেড়ে সেই পাহাড়ের মধ্য দিয়ে, কাটা পথটা ঘরে রামটেক টাউনের মধ্যে ঢািকল। পাহাড়ের ঢালতে বন্য আতােবক্ষ অজস্ৰ, এখানে বলে সীতাফল- নাগপাের শহরে যত আতাওয়ালী আতা ফিরি করে-তার সব আতাই ফলে সিউনি ও রামটেক, পাহাড়ে। রাত বোধ হয়। সাতটা কি সাড়ে সাতটা। মন্দিরের ওপরে চবতে। রায় বসে দরে নাগপরের বৈদ্যুতিক আলোকমালা দেখেছিলাম ঠিক সন্ধ্যায়—তাই নিয়ে প্রমোদবাবার সঙ্গে তাক হল, আমি বললাম-ও কমিটির আলো—প্রমোদবােব বললেননা, নাগপরের। কিন্যাসী হ্রদের বাংলোতে খাবার খেয়েছিলাম, কিন্তু চা খাই নি। রামটেকের মধ্যে ঢকে একটা চায়ের দোকানে আমরা গাড়িতে বসে চা খেলাম। খাব জ্যোৎস্না উঠেচে—রামটেকের পাহাড়ের ওপর সাদা মন্দিরটা জ্যোৎস্নায় বড় চমৎকার দেখাচে --- চা খেতে খেতে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলাম। আজ কোজাগরী পণিমা, এতক্ষণ বারাকপরে আমার গাঁয়ে বাড়িতে বাড়িতে শাঁখ বাজচে। লক্ষীপ জোর লচিভাজার গন্ধ বার হচ্চে বাঁশবনের পথে-এতদর থেকে সে-সব কথা যেন সবপোেনর মত লাগে ! রামটেকের পথ দিয়ে মোটর ছােটল। কিন্যাসী হ্রদ থেকে মোটরে আসবার সময়ে যেমন আনন্দ পেয়েছিলাম, তেমনি আনন্দ পেলাম। সামনে তখন ছিল অাঁকা-বাঁকা, উচনীচ, পাব্বিত্য প্রদেশের কঙ্করময় পথ, ডাইনে ছায়াবত অরণ্যেভরা শৈলমালাএখন ঠিক তেমনি পথ দিয়ে মোটর তীরের বেগে ছটে চলেচে-প্ৰমোদবাব qGiGi a glorious drivc. রামটেক, সেন্টশনে নাগপরের ট্ৰেনখানা দাঁড়িয়ে রয়েছে, সতরাং বোঝা গোল এখনও সাড়ে আটটা বাজে নি। একটা গিয়ে প্রমোদবাব মাইল সেন্টানে পড়লেন \Ն Հ