পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেবিনে বসে অপকৃলট চা ও ডিমের মামলেট খাব-তখন এই বিশাল পাব্বিত্যকায় সরোবর, এই শরতের রৌদ্র-ছায়াভিরা কাটতিক্ত গন্ধ ওঠা ঘন অরণ্যানী, এই জ্যোৎস্নাপলাবিত নিজজন গিরিসান—এই আস্বারা, কিন্যাসী, রামটেকের মন্দির-দগ-এসব বহকাল আগে দেখা সবপ্নের মত অস্পষ্ট হয়ে মনের কোণে উকি মারবে। একটা কথা না লিখে পারাচি নে। আমি তো যা দেখি, তাই আমার ভাল লাগে-বিশেষ করে যদি সেখানে বন থাকে। কিন্তু তবও লিখচি আমি এ পৰ্যন্ত যত পাহাড় ও অরণ্য দেখোঁচি-চন্দ্রনাথ, ত্রিকট, কাটনি অঞ্চলের পাহাড়—ডিগরিয়া ও নন্দন পাহাড়ের উল্লেখ করাই এখানে হাস্যকর, তবও উল্লেখ করাচি এইজন্যে যে, এই ডায়েরীতেই কয়েক বছর আগে আমি নন্দন পাহাড়ের সংখ্যাতি করে খব উচ্ছৰাসপাণ বৰ্ণনা লিখোঁচ—এসব পাহাড় কিন্যাসী ও রামটেকের কাছে মালান হয়ে যায় সৌন্দয্য ও বিশালতায়। কাল নাগপর থেকে চলে যাব। আজ রাত্রে নিজজন বাংলোর বারান্দাতে বসে জোৎসনাভিরা কম্পপাউন্ডের দিকে চেয়ে শরৎচন্দ্র শাস্ত্রীর দক্ষিণাপথ ভ্ৰমণ’ পড়চি ৷ সেই পরনো বইখানা, সিদ্ধেশবরবাবদের অফিসে কাজ করবার সময় টেবিলের ড্রয়ারে যেখানা লকিনো থাকত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চট করে একবার বার করে নিয়ে পাহাড়, জঙ্গল, দীর দেশের বর্ণনা পড়ে ক্লান্ত ও রন্ধশাস চেতনাকে চাঙ্গা করে নিতুম। এখনও মনে পড়চে সেই ছোট টেবিলটা, তার ড্রয়ারটা, ডাইনে কাঠের পাটিািসনটাসেই রোকড় খতিয়ানের সত্যুপ, ফাইলের বোঝা। কাল বৈকালে একা বেড়াতে বার হয়েছিলাম, কারণ সকালের বম্পেব মেলে প্রমোদবাব হাওড়া ফিরলেন। আমি তাঁকে তুলে দিতে গিয়েছিলাম। একজন হিন্দ স্থানী ভদ্রলোকের সঙ্গে ট্রেনে আলাপ হ’ল, তাঁর বাড়ি খড়গপাের, তিনি মন্তিকাকাকে চেনেন। বললাম, মন্তিকাকার কাছে আমার নাম বলবেন। তারপর বৈকালে একা বার হলাম। South Tiger Gap Road দিয়ে পাহাড়ের ওপর উঠে একটা মন্ত জায়গায় সাঁকোর ওপর বসলাম। সামনে ধন-ধ প্রান্তর, দারে। দরে শৈলশ্রেণী-বাঁয়ে সাতপরা, ডাইনে রামটেকের পাহাড় ও মানসারের ম্যাঙ্গানিজের পাহাড় অস্পষ্ট দেখা যাচ্চে। একটা পরে সােয্য ডাবে গেল, পশ্চিম দিগন্তে কত কি রঙ ফািটল। আমার কেবলই মনে আসতে লাগল। ঐ শোলাকাটা-“প্রস্থিতা দারপন্থানং’...শেলাকের টাঁকরোটার নতুন মানে এখানে বসেই যেন খাঁজে পেলাম । ভাবলাম আমার উত্তর-পািকব কোণে, আরও অনেক পেছনে কাশী ও বিন্ধ্যাচল, মিসজাপাের ও চনার পড়ে আছে—পশ্চিম ঘোষে প্রাচীন অবন্তী জনপদ-পব্বে প্রাচীন দক্ষিণ কোশল, সামনের ঐ নীল শৈলমালা-যার অস্পষ্ট সীমারেখা গোধলির শান্ত ছায়ায় অস্পষ্ট দেখা যাচ্চে—ঐ হল মহাভারতের কিংবা নৈষধ চরিতের সেই ঋক্ষবান পািব্বত। এই যেখানে বসে আছি, এখান থেকে পঞ্চাশ মাইলের মধ্যে অমরাবতীর কাছে পদ্মপাের বলে গ্রামে কবি ভবভূতির জন্মস্থান। এ সব প্রাচীন দিনের সমিতি জড়ানো প্রান্তর, অরণ্য, শৈলমালা দিগন্তহীন মালভূমির গভীর মহিমা, এই রকম সন্ধ্যায় নিজনে বসলেই মনকে একেবারে অভিভূত করে দেয়। পন্ধেব চেয়ে দেখি হঠাৎ কখন পাণচন্দ্র উঠে গেছে। তারপর জ্যোৎস্নাশোভিত Tiger Gap Roald-এর বনের ধার দিয়ে শহরে ফিরে এলাম। শরতের রাত্রের হাওয়া বন্য শিউলির সবাসে ভারাক্কান্ত ও মধর। Lawrence Road-এর মোড়ে এসে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম-তিনজন বাঙালী ছোকরার সঙ্গে দেখা-তারা আমার বাংলোর কাছে পৌছে দিয়ে গেল। Vy 83