পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সৰ্য্যোস্তের দশ্যটা, কিংবা গভীর রাত্রের জ্যোৎস্নায় মহলিয়ার প্রান্তরের ও নেকড়েডুংরি পাহাড়ের সে অবাস্তব সৌন্দৰ্য্য, একা থাকলে এসব দশ্যে আমার মন কত অদ্ভুত কথা বলত-কিন্তু কাল শািন্ধ আড্ডা দেওয়াই এবং চা খাওয়াই হল—মন চাপা পড়ে রইল বটে, অর্থহীন প্ৰলাপ বকুনির তলায়, সম্মিলিত সিগারেট ধমের কুয়াশার আড়ালে। তাই বলচি এসব সন্থানে আসতে হয় একা। লোক নিয়ে আসতে নেই। আজই এখান থেকে যাব। এখােন বলরাম সায়েরের ঘাটে নেয়ে আসবো।-- সারি, স্বচ্ছ শীতল জল-দীঘিটা আমার এত ভাল লাগে! শালবনে নতুন কাঁচ পাতা গজিয়েচে। দরে কোথায় কোকিল ডাকচে কালাঝোর পাহাড়ের দিকে। এত ভাল লাগচে সকালটা! খড়োদের ছাদে বসে লিখচি। গ্রীষ্মমাবকাশে বাড়ি এসেচি। এবার গালাডিতে অনেকদিন থেকে আমার যেন নতুন চোখ খালেচে, গাছপালার বৈচিত্র্য ও প্রাচয্য এবার বেশী করে চোখে পড়েচে । সমস্ত প্ৰাণটা যেন একটা পাক-আমার বাড়িতে কোন গাছ থাকুক। আর নাই থাকুক, সারা গ্রাম এমন কি কুঠির মাঠ, ইছামতীর দই তীর, শ্যামল বাঁশবন-এ সবই আমার। আমি দেখি, আমার ভাল লাগে—আমার না তো কর । প্রায়ই বিকেলে কুঠীর মাঠে বেড়াতে যাই, এবার একটা নতুন পথ খালেচে মাঠের মধ্যে দিয়ে, সেটা আরও অপব্ব । এমন সবজি মাঠে উলফল ফটেচে চারিধারে, শিমলগাছ হাত বেকিয়ে আছে, দার বানান্তশীষে বিরাটকায় Lyre পাখীর পাচ্ছের মতো বাঁশবনের মাথা দলচে, এমন শ্যামলতা, এমন শ্ৰী—এ আমাদের এই দেশটা ছাড়া আর কোথাও নেই। দাপরে আজ বেজায় গরম, কাল রাতে ভাল ঘাম হয় নি। বলে অত গরমেও খাব ঘামােলাম। উঠে দেখি মেঘ করেচে। উত্তর-পশ্চিম কোণে ঘন নীল-কৃষ্ণ কালবৈশাখীর মেঘ, --তারপর উঠল। বেজায় ঝড়। আমি আর ঘরে থাকতে পারলাম না, একখানা গামছা! নিয়ে তখনি নদীর ঘাটে চলে গেলাম। পথে জেলি বললে শিগগির নেকো তলায়। যান, ভয়ানক আম পড়চে। কিন্তু আজ আর আম কুড়েবার দিকে আমার খেয়াল নেই। আমি নদীর ধারে কালবৈশাখীর লীলা দেখতে চাই। নদীজলে নামবার আগেই বাল্টি এল। বড় বড় ফোঁটায় বন্টি পড়তে লাগল-জলে নেমে দেখি জল গরম, যেন ফটচে। এপার ওপার সাঁতার দিতে লাগলাম। কালো জলে ঢেউ উঠেচে, মাখে নাকে মাথায় ঢেউ ভেঙে পড়চে, ওপারে চরের ওপর বিদ্যুৎ চমকাচ্চে, বনোেবড়ো গাছ ঝড়ে উলেট যাচ্চে, বান্টির ধোঁয়ায় চারিধার অন্ধকার হয়ে গেল, নদীজলের অপব্ব সম্রাণ বেরাচ্চে, দার দীর সমদ্রের কথা মনে হচ্ছে। এমনি কত ঝটিকাময় অপরাহ ও নীরন্ধু অন্ধকারময়ী রাত্রির কথা-প্রকৃতির মধ্যে এমনি মিশে হােতধরাধরি করে চলা-ঐ শ্যামল-ডালপালাওঠা শিমালগাছ সাঁইবাবলা গাছ-এই তো আমি চাই। এদের সঙ্গে জীবন উপভোগ করব।-ঐ ঝোড়ো মেঘে আমার ভগবানের উপাসনা, ঐ তীক্ষম নীল বিদ্যুতে, এই কালো নদীজলের ঢেউয়ে, ঝড়ের গন্ধে, বাতাসের গন্ধে, বান্টি ভেজা মাটির গন্ধে, চরের ঘাসের কাঁচা গন্ধে- । কাল কুঠীর মাঠে বসে এই সব কথা ভাবছিলাম। তারপর নদীজলে নাইতে নেমে কেমন একটা ভক্তির ভাব মনে এল। সমস্ত দেহ মন যেন আপনা-আপনি নিয়ে Vyf