পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্দরপর পয্যন্ত বেড়াতে গিয়েছিলাম। বৈকালে-ও পথের প্রাচীন বটগাছের সারির দশ্য আমি আবাল্য দেখে আসচি, কিন্তু ও পরনো হল না-যত দেখি ততই নতুন। গাছে গাছে খেজর পেকেচে, কোয়োঝাঁকা গাছের তলায় ব্যাঙের ছাতা গজিয়েচে এই বিষয়। আরামডাঙ্গার মাঠে মরগাঙের ওপারে, সবজি আউশ ধানের ক্ষেত এবং গ্রামসীমায় বাঁশবনের সারি মেঘমোদর আকাশের পটভূমিতে দেখতে হয়েচে যেন কোন বড় শিল্পীর হাতে-অাঁকা ল্যান্ডসেম্বকাপ। ক্ষেত্ৰকল। ওদিক থেকে ফিরচে, হাতে ভাঙা লগঠন একটা। বললে মোল্লাহাটির হাটে পটল কিনতে গিয়েছিল। -পটল না কিনেই ফিরলে যে ? —কি করব বাবা, দােপয়সা সেরা দর। একটা পয়সাও লাভ থাকচে না। গোপালনগরের হাটেও ওই দর। এবার তাতে আবার পটল জন্মায় নি!! যে দািব্বচ্ছর পড়েচে বাব! কলকাতাটা যেন ভুলে গিয়েচি। যেন চিরকাল এই বটের সারি, বাঁওড়, সন্দরপাের, সখীচরণের মদীখানার দোকানে কাটাচ্চি জীবনটা। এদের শান্ত সঙ্গ আমার জীবনে আনন্দ এনেচে উগ্র দরাশার মত্ততা ঘাঁচিয়ে। সে দারাশাটা কি ? নাই বা লিখলাম সেটা। আজ বিকেলে সারা ঈশান কোণ জড়ে। কালবৈশাখীর মেঘ করল এবং ভয়ানক ঝড় উঠল। হাজারী জেলেনী, জগবন্ধ, কালো, জেলি ওরা আম কুড়তে গোল বাগানে—কারণ এখনও আমি যথেষ্ট আছে, ঝিনকে গাছ, চারা বাগানে, মাঠের 55 TF তারপর ঘন বর্ষা নামলো--আমি আর কালো বান্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম বিষাসনাত গাছপালা, বটের সারি, উলর মাঠের মধ্য দিয়ে বেলেডাঙ্গাতে। সেখান থেকে যখন ফিরি, বর্ষা আরও বেশি, বিদ্যুতের এক একটা শিখা দিক থেকে দিগন্তব্যাপী—আকাশে কালো কালো মেঘ উড়ে চলেছে—আমার মনে হল আমিও যেন ওদের সঙ্গে চলোঁচ মহাব্যোম পার হয়ে চিন্তাতীত কোন সদর বিশোবআকাশ মহাকাশে আমার সে গতি—পথিবীর সমস্ত বন্ধন, সখদঃখ ঘরগহস্থালীর বন্ধনমন্ত আমার আত্মা, সে পায়ের তলায় সারা পথিবীর মোহ মাড়িয়ে চলেচেমহাব্যোমের অন্ধকার, শান্য, মেঘ, ইথার, সমদ্র ভেদ করে মক্তপক্ষ গতিতে অমিততেজে চলেচে- দিকপাল বৈশ্রাবণের বিশববিদ্রাবণকারী পৌরষের বীৰ্য্যে। নদীতে সনান করতে নেমে সাঁতার দিয়ে বলিষ্ট মাথায় চলে গেলাম ওপারে মাধবপরের চরের ওপর বর্ষা দেখতে-পশ্চিম দিকে পিঙ্গল বর্ণের মেঘ হয়েচে, ওপারের বাঁশবন হাওয়ায় দলচে-তারপর আমরা আবার এপারে এলাম-ঠিক সন্ধ্যার সময় दाgि ५८लाभ। আজকার সন্ধ্যাটি ঠিক বর্ষাসন্ধ্যা-কিন্তু কেমন যেন নিঃসঙ্গ মনে হচ্চে। যেন আর কেউ থাকলে ভাল হত—ক’ত থাকলেই তো ভাল হত—সব সময় হয় কৈ ? আমার মনে এই যে অনভূতি-এ অনেক কাল পরে আবার হল। আমি কত নিঃসঙ্গ নিতজান জীবন যাপন করেচি। কতকাল ধরে, লোকালয় থেকে কতদারে। কিন্তু ১৯২৩-২৬ সালের পরে ঠিক এ ধরনের বেদনা-মাখানো নিঃসঙ্গতার অন্যভূতি আর কখনো হয় নি। এই মনের অবস্থা আমি জানি, চিনি একে-এ আমার পরাতন ও পবিচিত মনোভাব, কিন্তু ১৯২৬ সালের পরে ভুলে গিয়েছিলাম একে —আবার সেই ফিরে এল। কাল আবার খাব আনন্দ পেয়েচি। মনের ও ভাবটা কাল আর ছিল না। CS