পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিয়ে ছাড়লে না। ফিরবার পথে সবৰ্ণরেখাতে ডোঙা পাওয়া গেল না-অপৰিবৰ জ্যোৎস্নারাত্রে সবর্ণরেখা রেলের পল দিয়ে চন্দ্ররেখা গ্রামের মধ্যে দিয়ে অনেক রাত্রে ফিরলাম রাখামাইনসের বাংলোতে। নদী পার হবার সময়ে সেই ছবিটা...সেই নদীর ওপরে জ্যোৎসনাভিরা আকাশে একটিমাত্র নক্ষত্র দেখা যাচ্চে, নীচে শিলাস্তৃত সবৰ্ণরেখা, পশ্চিম তীরে ঘন শাল জঙ্গল, দরে শ্যামপাের থানার ক্ষীণ আলো, লাইনের বামদিকের গাছগলো আধ জ্যোৎস্নায় আধা অন্ধকারে দেখা যাচ্চে না, কিন্তু ফটেন্ত ছাতিম ফলের ঘন স্যগন্ধ ; বাংলোতে ফিরে এসে দেখি-প্রমোদবাবা এসে বসে আছেন। পরদিন আমরা সবাই মিলে সাটকিটার জঙ্গলের পথে গেলাম--তার পরদিন গালডি থেকে চারবাব, সরেনবাব ও মেয়েরা এলেন। চার নম্বর খাদানের নীচের জঙ্গলের মধ্যে পিকনিক হল। ঝান, আশা, আমি, চারবাব, সরেনবাব ও ভিক্টোরিয়া দত্ত বলে একটি মেয়ে সিদ্ধেশবর ডাংরি আরোহণ করলাম। একেবারে সিদ্ধেশবরের মাথায়। একটা অম্লমধর বনফলের কাঁচা ডাল ভেঙে নিয়ে পাহাড়ে উঠলাম--তৃষ্ণ নিবারণের জন্য। সেদিন আমি সেন্টশনের বাইরে কি একটা গাছের ছায়ায় পাথরের ওপর বসে রইলাম। যেমন সেদিন সকালে আমি ও গ্রামের প্রমোদবাব পিয়ালতলার ছায়ায় প্রকান্ড শিলাখন্ডে শ'য়ে বটগাছটার দিকে চেয়ে প্রভাতী আলোতে অজানা কত কি পাখীর গান শািনছিলাম।. বেলা পড়ে এসেছে...বারাকপরে বসে এইসব কথা লিখতে লিখতে মন আবার ছাঁটে চলে যাচ্ছে সেই সব দেশে। শীতের বেলা এত তাড়াতাড়ি রোদ রাঙা হয়ে গাছের মাথায় উঠে গেল! বকুলগাছের মাথায়, বাঁশগাছের মাথায় উঠে গিয়েচে রোদ একেবারে । সেই সন্দর লতাপাতার গন্ধটা এবার ভরপর পাচ্চি—ঠিক এই সময়ে ওটা পাওয়া যায়। কাল এখানে চড়কতলায় কৃষ্ণযাত্রা হল, জ্যোৎসনারাত্রে গাছপালায় শিশির ট্যুপটাপ ঝরে পড়চে— আমি চালাতে তলার পথে একা শািন্ধ বেড়িয়ে বেড়াতে লগলাম। কি রােপ দেখলাম কাল জ্যোৎস্নাভিরা রহস্যময়ী হেমন্ত রাত্রির! কাল নদীর ধারে বিকেলেও অনেকক্ষণ বসে রইলাম। কাল বিকেলে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে পাটলবণের মেঘস্তপের দিকে চোখ রেখে একটা জলার ধারে বসলাম-গাছপালার কি রূপ! সেই যে গন্ধটা এই সময় ছাড়া অন্য সময় পাওয়া যায় না-সেই গন্ধ দিন রাত সকাল সন্ধ্যা আমাকে যেন অভিভূত করে রেখেচে । আজ কদিন বর্ষা পড়েচে-বসে বসে আর কোন কােজ নেই, খকুদের সঙ্গে গলপ করচি, কাল সারাদিনই এইভাবে কেটেছে, তবও কাল নদীতে এপাড়ার ঘাট থেকে ওপাড়ার ঘাটে সাঁতার দিলাম, একটা ব্যায়ামের জন্যে। আজ সকালে নদীর ঘাটে ভোরবেলা গিয়ে মেঘমোদর আকাশের শোভায় আনন্দ পেলাম। এই শিমালগাছগলো আমাদের এদেশের নদীচরের প্রধান সম্পদ! এগালো আর সইবাবলা না থাকলে ইছামতীর তটশোভা অনেক পরিমাণে ক্ষম হত। আজ সকালে নদীর ঘাটে গিয়ে চারিদিকের আকাশে চেয়ে দেখলাম মেঘ অনেকটা কেটেছে—আকাশের নীচে একটি একটি আলো দেখা যাচ্চে—বোধ হয় ওবেলা আকাশ পরিস্কার হয়ে যাবে। মনটা তপ্ত নিৰ্ম্মমল আকাশ ও প্রচার সােয্যালোকের জন্যে CASB