পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাঁপাচে-কাকাদের শিউলি গাছটার দিকে চেয়ে দেখচি গাছপালার স্বাভাবিক প্রভাতী রং ফিরে এসেচে-সে ঘষা কাচের মত রং নেই আকাশের। কিন্তু একটা পরেই ঘন। মেঘে সব ঢেকে দিলে। আমি আবিস্কার করেচি আমাদের দেশের প্রথম হেমন্তের সে অপব্ব সীগন্ধটা প্রস্ফটিত মরচে-লতার ফলের গন্ধ। হঠাৎ কাল বিকেলে আমি এটা আবিস্কার করেচি। কুঠীর মাঠে আজ সন্নানের পকেবা বেড়াতে গিয়ে বনে বনে খানিকটা বেড়ালাম, লক্ষ্য করে দেখলাম। এই সময়ে কত কি বনের লতাপাতায় ফল ফোটে। মরচেলতা তো পল্পিত হয়েছেই, তা ছাড়া মাখমসিমের গোলাপী ফলের দল ঘন সবজি পাতার আড়ালে দেখা যাচ্চে, কোয়োঝাঁকার লতায় ক্ষদে ক্ষদে ফল ফটেচে, ফলে বলে মনে হয় না, মনে হয় যেন হলদে পল্পরেণ-কি ভুরিভুরে মিষ্টি গন্ধ, ডালের গায়ে পৰ্যন্ত ফল ফটেছে। ছাতিম ফলের এই সময়, কুঠীর মাঠের জঙ্গলে একটা নবীন সপ্তবর্ণ তরর দেখা মিলল, কিন্তু ফল হয় নি। তাতে। মেটে আল তুলিবার বড় বড় গৰ্ত্ত বনের মধ্যে, এক জায়গায় একটা খাব বড় কেয়োঁঝাঁকার ঝোপকে কেটে ফেলেচে দেখে আমার রাগ ও দঃখ দই-ই হল, নিশ্চয় যারা মেটে আল তুলতে এসেছিল, তাদেরই এই কাজ। সজীব পশিপত গাছ—কারণ এই সময় কোয়োঝাঁকার ফল হয়—কেটে ফেলা যে কতদর হৃদয়হীন বব্বরতা, তা আমাদের দেশের লোকের বাঝতে অনেকদিন যাবে। সেবার অমনি যািগল কাকাদের বাড়ির সামনের কদমগাছটা কালো বিক্ৰী করে ফেললে তিন টাকায়, জবালানি কাঠের জন্যে। এমনি কি কেউ কোথাও শীনেচে ? কদমগাছ, যা গ্রামের একটা সম্পদ, যে পল্পিত নীপ সকল বৈষ্ণব কবিকুলের আশ্রয় ও উপজীব্য-সামান্য তিনটে টাকার জন্যে সে গাছ কেউ বেচে ? শািন্ধ আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা সম্পভব হয়, সন্দরকে দেখবার চোখ থাকলে, ভালবাসার প্রাণ থাকলে এ সব কি আর হত ? কাল বিকেলে অলপক্ষণের জন্য সোনালী রাঙা রোদ উঠল-বেলেডাঙ্গার পথে যেখানে একটা বাবলা গাছের মাথায় একটা বনো চালকুমড়ো হয়ে আছে, ঐখানটাতে বসলাম-কত দিনের মেঘমোদর আকাশের পরে আজ রোদ উঠেচে, এ-যেন পরম প্রাথিত ধন ! এক জায়গায় সৌদালি ফল ফটে থাকতে দেখলাম মাঠের মধ্যে। কাত্তিক মাসে সোদালি ফল, কলপনা করতেই পারা যায় না। কেলেকোঁড়ার ফলও এসময়ে হয়। কাল মেয়েরা চোদ্দ শাক তুললে, চোদ্দ পিদিম দিলে-খাির্কুদের বোধনতলায় বড় একটা প্ৰদীপ দিয়েছিল, বিলবিলের ধারে, উঠোনের শিউলিতলায়। বারাকপরে চোদ্দ পিদিম দেওয়া দেখি নি কতকাল! আজ বিকেলে খকুদের কুঠীর মাঠে বেড়াতে নিয়ে গেলাম। পরেনো কুঠীর হাউজঘরে ঘোর জঙ্গল হয়ে গিয়েচে-কত কি বনের লতা হয়ে আছে—খকুর তা দেখে আনন্দ উৎসাহ দেখে কে! একটা লতার মধ্যে কি ভাবে ঢকে সে খানিকটা দলিলে, মাঠে গিয়ে ছটোছটি করলে—আমায় কেবল চোচিয়ে বলে—দাদা, এটা দেখােন, ওটা দেখান। তারপর ফিরে এসে ছেলেদের নিয়ে গোপালনগরে গেলাম কালী পজোর ঠাকুর দেখাতে। হাজারীর ওখানে অনেক রাত হয়ে গেল তাস খেলতে বসে -অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরি। পরদিনও আবার কুঠীর মাঠে যাওয়ার কথা ছিল—ওরা সবাই গেল, কিন্তু AG