পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাল কলকাতা থেকে এসেছি, বেশ ভাল লাগল। আজ সকালে খয়রামারির মাঠ ও বন। বনে সাদা সাদা সেই কুচো ফল—শীতকালে অজস্র ফোটে। এদেশের বনে জঙ্গলে-নদীয়া ও যশোর জেলার সব্বত্র দেখেছি। এ সময়ে। কলেজে পড়বার সময় যখন প্রথম প্রথম মামার বাড়ি যেতাম—তখন ভবানীপরের মাঠের ওদিকের পথ দিয়ে, যাবার সময়ে দেখতাম একটা বড় ঝোপে। ঐ ফলাটা ফটে থাকত। কেলো এসেছিল আমার সঙ্গে আমার বাসায়-একসঙ্গে বাক্স, বিছানা বোধে বাসা থেকে রওনা হলাম । অনেকদিন পরে ওকে দেখে মনে বড় আনন্দ পেয়েছি। কাল। বড়দিনের ছটিতে অনেককাল বারাকপরে আসিনি-এবার এলাম। শীতের পল্লীপ্রান্তরে কি শোভা, তা এতদিন ভুলে ছিলাম। বিকেলে আজ যখন বেলেডাঙ্গা বেড়াতে গেলাম—বনের কোলে সব্বত্র ফন্টন্ত ধর ফলের প্রাচৰ্য্য ও শোভা দেখে, মনে হোল, সেদিন মণি বোসের আড্ডায় যারা বলছিল যে, বাংলাদেশের বনে ফল তেমন নেই, তারা বাংলাদেশ সম্পবন্ধে কতটকু জানে ? ক্রোকাস, মাগারেট, কি কণাফ্লাওয়ার এখানে ফোটে না বটে-কিন্তু যে দিকে চোখ তাকাই, সে দিকেই এই যে প্রসফট নীলাভ শত্ৰবণের ধর ফলের অপব্ব সমাবেশ-এর সৌন্দৰ্য্য কম কিসে? কি প্রাচয্য এই ফলের-ঝোপের নীচেও যে ফল-সেখান থেকে থাকে থাকেউঠেচে ঝোপের মাথা পৰ্যন্ত, আগাগোড়া ভত্তি। এত নীচ ও অত উপচতে ও ফল কি করে গেল। তাই ভাবি। ঋতুতে ঋতুতে কত কি ফল ফোটে আমাদের দেশের বনেঝোপে, আমার দঃখ হয়। এর সন্ধানও কেউ রাখে না, নাম পৰ্যন্ত জানে না। অথচ সন্দরকে যারা ভালবাসে-তারা বাংলার নিভৃত মাঠ বনঝোপের এই অনাদত অথচ এই অপব্ব সন্দের ফলকে কখনো ভুলবে না। বেলেডাঙ্গায় গিয়ে সেকরার দোকানে বসে গলপ করলাম। ছোট্ট খড়ের ঘরে দোকান। বাঁশের বেড়া। ননী সেকরার মেজছেলে বিড়ি বাঁধাঁচে-তার দোকানঘরের সামনে একটা নতুন কামার-দোকান হয়েচে—সেখানে হাল পোড়াচ্ছে। হালের চারধারে ঘাটের সনসনে আগনে অনেক লোক বসে আগনি পোয়চ্চে। দোকানের পিছনের বেড়ায় ধরফল ফটে আছে। যেদিকে চাই সেদিকেই এই ফল--এক জায়গায় মাঠের মধ্যে থাকে থাকে কতদার পর্যন্ত উঠেচে এই ফলের ঝাড়। রাঙা রোদ ও রাঙা সােয্যাসত শীতকালের নিজস্ব ! এমন অস্ত-আকাশের শোভা অন্য आकाश 62ा दाश ०ा । যািগল বোল্টমের সঙ্গে দেখা ফিরবার পথে—সে বল্লে তার চলচে না, আমি তার G, T. পড়বার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। কিনা। g কাল আবার ক্যাম্প-টলটা নিয়ে কুঠীর মাঠের নিভৃত বনঝোপের ধারে গিয়ে বসলাম। ধরফল কি অপব্ব শোভাতেই ফটেচে। পাখী এত ভালবাসি কিন্তু কাক ছাড়া কলকাতাতে আর কোন পাখী নেই-এখানে কত কি অজস্র পাখীর কলকাকলি, গাছপালা বন ঝোপের কী সীমারেখা, যেন নিত্যশীল নটরাজ, ওপারের কাশচরে শিমালগাছটা দেখা যাচ্ছে, নীলাকাশে রৌদ্দ ঝলমল করচে। একটা বাবলাগাছের ফাঁকি দিয়ে চাইলে কোন অজানা দেশের কথা মনে আনে—শীতের অপরাহে বাংলার এই নিভৃত পল্লীপ্রান্তে যে কি সৌন্দৰ্য ভরে থাকে, চোখে না দেখলে সে বোধ হয় নিজেই বিশ্ববাস করতুম না। আর দেখলাম এক জায়গায় বসে থাকলে অনেক, বেশী আনন্দ পাওয়া যায়। ভাল করে সে জায়গার রস অনেক বেশী পাওয়া যায় CCA