পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোথায় লাগে গালডি, কোথায় লাগে কাশমীর, কোথায় লাগে ইটালি-আমার মনে কতটকু আনন্দ ও চিন্তা সে জাগাতে পারে—এই যদি প্রাকৃতিক দশ্যের উৎকর্ষের পরিমাপক হয়.তবে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি ইছামতী তীরের এই নিভৃত বনঝোপ, ধরফল-ফোটা মাঠের, রাঙা-রোদমাখা শিমলগাছের, বনপাখীর এই কলকাকলির অপরােপ সৌন্দয্যের তুলনা নেই। যে পরিদশ্যমান আকাশের এক-তৃতীয়াংশে দেড় লক্ষ Super Galaxy আছে, এখানে বসে বসে ভেবে দেখলাম—সে সব বড় বিশেবর মধ্যে কি আছে না আছে জানিনে—তবে এখানে যা আছে, সেখানেও তাই আছে 2G SG as What is in microcosm is also in macrocosm-i 3. দার্শনিক আলোচনা এখন থাকুক, বত্তমানে এই সবাহৎ বিশোবর এককোণে ধরফােলফোটা বনঝোপের পাশে ক্যাম্পটালটা পেতে বসে একটা আনন্দ পাচ্চি, পাই। অনেক বেলা গেলে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গেলাম। একটা আগে যেতাম, খকু বসে ছিল, বল্লে একটা দেরি করুন, আরও বেলা যাক। খাব জোর-পায়ে হোটে পৌছে গেলাম বেলেডাঙ্গার সেকােরার দোকানে—মধ্যে এই ধরফল ফোটা বিশাল মাঠটা যেন এক দৌড়ে পার হয়ে গেলাম। তারপর ননী সেকােরার কত গলপ শািনলাম বেসে বসে। তার নাটা গরম ছিল, আর বছর ফাগন মাসে একে একে সব কটা মরে গেল। গাল-গলা ফলে। দোকানের সামনে একজন লোক বসে হাল পোড়াচ্চে আর অত্যন্ত খেলো ও বাজে সিগারেট টানচে । আমি বল্লাম, ও খেয়ো না, ওতে শরীর খারাপ হয়। বল্লে, আমি খাইনে বাবা, এক পয়সায় সে দিন হাটে কিনলাম ছটাতাই এক একটা খাচ্চি! সন্ধ্যার অন্ধকার ঘন হয়েচে-কুঠীর মাঠে সাড়ি জঙ্গলের পথটা অন্ধকার হয়ে গিয়েচে, পথ দেখা যায় না। নদীর ধারে এসে দাঁড়ালাম আমাদের ঘাটে-ওপারে একটা নক্ষত্র উঠেচে—সেটার দিকে চেয়ে কত কথা যে মনে পড়ল। ঐ Supen Galaxy-দের কথা—বিরাট Space ও নীহারিকদের কথা—এই বনফল ও পাখীদের কথা। কতক্ষণ সেখানে চাপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম-এই নক্ষত্রটার সঙ্গে যেন আমার কোন অদশ্য যোগসন্ত্র রয়েছে—বসে বসে এই শীতের সন্ধ্যায়। এই ইছামতীতে কত কি ঘটেছিল। পরোনো দিনে, সে কথা মনে এলো। গৌরীর কথা মনে এলো-তারপর অন্ধকার খাব ঘন হয়ে এলো। আমি ধীরে ধীরে উঠে বাঁশবনের পথ দিয়ে বাড়ি চলে এলাম। আজ দাপরে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে আমার সেই পরোনো জায়গায় বসলাম-সেই যেখান থেকে কুঠীর দেবদার গাছটা দেখা যায়-কি অপরােপ শোভা যে হয়েচে সেখানে ফটেন্ত ধরফলের, তা না দেখলে শািন্ধ লিখে বোঝানো যাবে না। এই যে আমি লিখচি, আমারই মনে থাকবে না। অনেকদিন পরে ওই ছবিটা অস্পষ্ট হয়ে যাবে মনের মধ্যে। এরকম হয়। আমি জানি—তবও আজই দেখোঁচি, তাই নবীন অনভূতির সম্পন্ধায় জোর করে বলছি বনফলের শোভার এ প্রাচয্য আমি দেখিনি। বিহারে নেই, সিং ভূমে নেই, নাগপারে নেই-এই বাংলা দেশের Sub-tropical বন জঙ্গল ছাড়া গাছপালার এই ভঙ্গি ও ফলের এই প্রাচয্য কোথাও সম্পভব নয়। কেন যে লোকে ছটে যায় বম্বে, দিল্লী, কাশী, দেওঘর তা বলা কঠিন! বাংলাদেশের এই নিভৃত পল্লী-প্রান্তের সৌন্দৰ্য্য তারা কখনো দেখোন—তাই। আজ বিকেলে টানি, কৃতুি, জগো, বধো এদের সঙ্গে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে বনঝোপের ধারে টলটা পেতে বসলাম। রোদ ক্ৰমে রাঙা হয়ে গেল-একটা ԳԵ