পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফল-ফোটা ঝোপের ধারে কতক্ষণ বসে রইলাম। তারপর একটা নরম কাঁচ, ঘাসেভরা জলার ধারে মন্ত সান্ধ্য হাওয়ায় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ছাটোছটি খেলা করলাম কতক্ষণ—আমি এই সবই ভালবাসি। সাধে কি কলকাতা বিষ লাগে! এই শীতকালের সন্ধ্যায় এতক্ষণ ধোঁয়ায় সারা কলকাতা শহর ভরে গিয়েচে-আর এখানে কত ডাহক, জলপিপি, দোয়েল, শালিকের আনন্দ-কাকলি, কত ফটেন্ত বনফলের মেলা, কি নিৰ্ম্মমল শীতের সন্ধ্যার বাতাস, কি রঙীন অস্তদিগন্তের রােপ, শিরীষ গাছে কাঁচা সিটি ঝলচে, তিত্তিরাজ গাছে কাঁচা ফলের থোলো দলচে, জলার ধারে ধারে নীল-কলমী ফল ফটেচে। মটর শাক, কচি খেসারি শাকের শ্যামল সৌন্দৰ্য্য-এই আকাশ, এই মাঠ, বন, এই সন্ধ্যায়-ওঠা প্রথম তারাটি-জীবনে এরা আমার প্রিয়, এদেরই ভালবাসি, এরাই আবাল্য আমার অতি পরিচিত সাথী—এদের হারিয়ে ফেলেই তো যত কম্পট পাই! বিকেলে আজ বেলেডাঙার মরগাঙের আগাড়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় এক বোঝা পাকাটির ওপর গিয়ে বসে ওবেলার সেই কথাটা চিন্তা করছিলাম-ভগবান তাঁর পজো না পেলে প্রতিহিংসা-পরায়ণ হয়ে ওঠেন না-ও’র পজোর সঙ্গে ভয়ের কোন সম্পক নেই-তাঁর যে প্যাজো, সে শািন্ধ প্রেমের ও ভক্তির, এই পাড়াগাঁয়ে এদের সেকথা বোঝানো শক্ত। পিজোর ঘরে বসে আজ ওবেলা যখন শালগ্রাম পজো করাছিলাম, তখনই আমার মনে হোল, এই ঘরের বন্ধ ও অমক্তির পরিবেশটিনীর মধ্যে ভগবান নেই, তাঁকে আজ বিকেলে খাজবো সন্দরপরের কিংবা নতিডাঙ্গার বাঁওড়ের ধারে মাঠে, নীল আকাশের তলায়, অসন্ত-বেলার পাখীদের কলকাকলির মধ্যে। তাই ওখানে গিয়ে বসেছিলাম। বসে বসে। কিন্তু আজমাবাদের কথা মনে এলো। এই পৌষ মাসে ঠিক এই সময়ে আমি সেখানে যৌতুম, ঠিক এই বিকেলে রাঙা রোদের আভা মাখানো তিনটাঙার বনের ভেতর দিয়ে বটেশ্ববরনাথ পাহাড়ের এপারে যে তুম ঘোড়া ছটিয়ে বেড়াতে —কলাইক্ষেত থেকে কলাইয়ের বোঝা মাথায় মেয়েরা আসতো, গঙ্গার বকে বড় বড় পাল তুলে নৌকা চলে যেত। মঙ্গেরের দিকে, ভীমদাস-টােলায় আগমনের চারিধারে বসে গ্রামের লোকে গলপগজব করতো। ফিরবার পথে বাঁধের ওপর ওঠবার সময় দেখতুম চারিধারের মাঠ কুয়াশায় ভরে গিয়েচে—সেই ছবিগলো মনে হলো। তার চেয়ে যে আমাদের দেশের ভূমিশ্ৰী, এই নিজজন শান্তিতে ভরা অপরােপ সন্দর পল্লীপ্রান্ত, ওই মরগাঙের শকানো আগাড়ের নতুন কচি ঘাসের ওপর চরে বেড়াচ্চে যে গরর দল, ওই দরের বটগাছটা, মাঠের ওপারের বনফল-ফোটা বনঝোপ, এই ডাহক পাখীর ডাক, গ্রামসীমার বাঁশবন—এসব যে রাপের বিত্তে নিঃস্ব তা নয়, বরং আমার মনে হয়। এরা বিহারের সেই বাক্ষলতা-বিরল প্রান্তরের চেয়ে অনেক সমন্ধতর, কিন্তু সেখানে একটা জিনিস ছিল, যা বাংলাদেশের এ অঞ্চলে অন্ততঃ নেইSpace !....Wide open Space ! (sĩ8>{of fi{78518, 4, qQ88 SRyÎ5, 48ữ অদ্ভুত মন্তির আনন্দ-এ যেমন পেয়েছিলাম ইসমাইল।পরের দিয়ারাতে ও আজমাবাদে -আর কোথাও তা মিলবে না। আজ খকু দাপরে খানিকটা বসে রইল-আমি মাঠে বেড়াতে যাবো বলে গোপালনগরে গেলাম না। মরগাঙের আগাড়ে আজও অনেকক্ষণ গিয়ে বসে ছিলাম। বেলেডাঙ্গার পলের কাছে ফিরবার পথে কি একটা বনফলের সগন্ধ বেরল-খাঁজে CS