পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বার করে দেখি কাঁটাওয়ালা একটা লতার ফল। লতাটা আমি চিনি, নাম জানিনে ॥৪ ননী সোঁকরার দোকানের কাছেই ঝোপটা। ননী কাদা দিয়ে রাপো গালাবার মচি, গড়চে। ওদের সঙ্গে খানিকটা গলপ করবার পরে নদীর ধারে এসে খানিকটা দাঁড়ালাম —ওপারে কালপরিষ উঠেচে, নীল Rigel-এর আলো নদীর জলে পড়েছে। নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় নিঃসঙ্গ একা দাঁড়িয়ে ওপারের তারাটার দিকে চেয়ে থাকবার যে আনন্দ, যে অনভূতি, তার বর্ণনা দেওয়া যায় না-কারণ অনভূতির স্বরপ তাতে বর্ণিত হয় না, অথচ কতকগলো অর্থহীন কথা দিয়ে বৰ্ণনা করতে গিয়ে অনভূতির প্রকৃতি সম্পবন্ধে লোকের মনে ভুল ধারণা জন্মিয়ে দেওয়া হয়। এ অব্যক্ত, অবৰ্ণনীয়। আজ এই সন্ধ্যাতেই একটা উল্কাপাত দেখলাম-ওপাড়ার ঘাটের মাঝামাঝি আকাশে-প্রথমে দেখা, তারপর নীল ও বেগনি রং হয়ে গেল। জবলতে জবলতেজলে ছায়া পড়ল। আমি আমন ধরনের উলম্বকাপাত দেখিনি! আজ এখানে বেশ শীত পড়েচে। দর্পরের আগে ফল-ফোটা মাঠে বেড়াতে যাওয়া আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। আজ আকাশ কি অদ্ভুত ধরণের নীল! সেই দেবদার গাছটা, কানাই ডোঙার গাছ, শিরীষ, তিত্তিরাজ কি সন্দির যে দেখাচ্চে নীল আকাশের পটভূমিতে! মাঝে মাঝে দ্য একটা চিল উড়চে বহন্দরে নীল । আকাশের পথে ! এসব ছবি মনে করে রাখবার জিনিস। কি আনন্দ দেয়, কত অননভূত ভাব ও অনভূতির সঙ্গে পরিচিত করে এরা। প্রকৃতির একটা বৈশিষ্ট্য এই যে, নিজজন স্থানে প্রকৃতির এই রােপ মনে নতুন ধরণের অনভূতি ও চিন্তা এনে দেয়। এ আমি জীবনে কতবার দেখলাম--তার প্রমাণ পাই প্রতি সন্ধ্যায়। আজকাল কুঠীর মাঠ থেকে ফিরবার পথে, নিভৃত সন্ধ্যায় আমাদের ঘাটে দাঁড়িয়ে ওপারের চরের আকাশে প্রথম-ওঠা দাঁচারটা নক্ষত্রের দিকে যখন চেয়ে থাকি তখনই বৰ্ব্বতে পারি। যে দেবলোকের সংবাদ তখন আমার মনের নিভৃত কন্দরে ঐ রিগেল, বা অন্য অজানা নক্ষত্র বহন করে আনে। সে গহন গভীর উদাত্ত বাণী অমতের মত মনকে বৈচিত্র্যময় করে, সাধারণ পথিবীর কত উদ্ধ লোকের আয়তনে মনকে উঠিয়ে নিয়ে যায় একমহত্তে । এ একটা বড় সত্য। বড় বড় সাধক, কবি, দার্শনিক, সরস্রন্টা, চিত্রকর, শিলপীযাদের চিন্তা আর ভাব নিয়ে কারবার, এ সত্যটা তাদের অজ্ঞাত নয়। এজন্যেই এমাসন 2GG, "Every literary man should embrace solitude as a bride.' এ সম্পবন্ধে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক হিউ ওয়ালপোল গাত জলাই মাসের Adelphi কাগজে বড় চমৎকার একটা প্ৰবন্ধ লিখেছেন। নিব্বাসিত দান্তে বলেছিলেন, “কি গ্রাহ্য করি আমি, যতক্ষণ আমার মাথার ওপর আছে নীল আকাশ আর অগণ্য তারকালোক’ । জাম্পমান মিস্টিক একহাট কখনো লোকের ভিড়ে বা শহরের মধ্যে থাকতে ভাল3Pir N is "Our Heart's Brotherhood' গাথাগালির মধ্যে অনেকবার উল্লেখ আছে। এ কথার। ওকথা যাক। আমি নিজের একটা ভুল আবিস্কার করেচি, যাকে এতদিন বলে এসেচি ধরফল, তার আসল নাম হোল এড়া শিশুর ফল। ধরফল লতার ফল বিলবিলেতে ছিল, সাদা বড় বড় ফল ফাটত—পটি দিদি বলছিল। আজকাল আর দেখা যায় না। শ্যাম-লতা, ভোমরা-লতার ফলও এসময় ফোটে ; আগে নাকি আমাদের পাড়ার ঘাটে শ্যাম-লতার ফল ফটে বৈকালের বাতাসকে মধর অলস গন্ধে ভরিয়ে দিত-আজকাল সে লতাও নেই, সে ফলও নেই। কাল সন্ধ্যার পরে অন্ধকারে কুঠীর মাঠে বেড়াতে বেড়াতে রঙীন অসন্ত-আকাশের ԵO