পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তখনও আমি চাপ করে বসেই আছি। (কি ভয়ানক শীত পড়েচে। এবার, এই যে লিখচি আঙলি যেন অবশ হয়ে আসচে।) আমার সামঞ্জন পেছনে ফল-ফোটা সেই ঝোপ বন, পাশেই নদী। একবার ভাবলাম বেলেডাঙ্গায় যাবো, কিন্তু শেষ পৰ্যন্ত উঠতে পারা গেল না। এই সৌন্দৰ্য্যভূমি ছেড়ে। নিজজন সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মত নদীতীরে দাঁড়িয়ে পথিবীর পারের দাতিলোকের দিকে চুপ করে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম-ওপারের চরের ওপরে উঠেচে কালপরিষ, তারপর এখানে ওখানে ছড়ানো দাঁচার দশটা তারা। এই নিভৃত সন্ধ্যার আনন্দ সম্পণে আধ্যাত্মিক-আমি দেখচি কুঠীর মাঠের যে আনন্দ তার প্রকৃতি Aesthetic, কিন্তু এই জনহীন নদীতীরে কুচঝোপ, বাঁশবন, ওপারের খড়ের মাঠ, এদের সবার ওপরকার ওই দাতিলোক যে বাণী প্ৰাণে এনে পৌছে দেয়, তা বিশবিলোকের এবং অন্তরলোকের যিনি অদশ্য অধিদেবতা, তাঁর বাণী-আজকাল যেন তার প্রকৃতি একটি একটা বঝতে পারি। আর আসলে বঝতে ওইটকু পারি বলেই তো তা আমার কাছে তাঁর বাণী এবং পরম সত্য, নইলে তো মিথ্যে হোেত। যা ধরতে পারিনে, বঝতে পারিনে, আমার কাছে তা ব্যথ | কাল দাপরে রোদে পিঠ দিয়ে বসে অনেকগালি ভাল ভাল ফরাসী গলপ পড়লাম। তারপর সন্নানের পকেবা কুঠীর মাঠে বেড়িয়ে এলাম। যে জায়গাটাতে অনেকদিন যাইনি।--সেই চারিদিক বনে ঘেরা ধরেফােল-ফোটা ঝোপের বেড়া দেওয়া মাঠের মধ্যে বসে রইলাম। শীতের দাপরে নীল আকাশের রােপ, আর সৰ্য্যোস্তের রপএদের অন্য কোনো ঋতুতে দেখা যায় না। শীতকালে ইসমাইলপির আর আজমাবাদের দিগন্তব্যাপী মাঠের প্রান্তে রাঙা সােয্যাসত দেখে ভাবতাম। এ বঝি বিহারের চরের নিজস্ব সম্পত্তি—কিন্তু এবার দেখলাম বাংলাদেশেও অমনি রাস্তাভ অস্তদিগন্ত স্বমহিমায় প্রকাশ পায়। আজ বিকালেও সােয্যাস্তের শোভা দেখবার জন্যে কুঠীর মাঠে গিয়ে এক জায়গায় কটা রোদ-পোড়া ঘাসের ওপর গায়ের আলোয়ানখানা বিছিয়ে অনেকক্ষণ বসে রইলাম। ডাইনে একটা বাবলাগাছের শকানো মগডালে অনেক পাখী এসে বসে যেন নামজাদা চীনে চিত্রকারের একটা ছবি তৈরী করেচে। সামনের বনঝোপ, কুঠীর শিরীষ গাছে রোদ ক্ৰমে রাঙা হয়ে এল, নীল আকাশের কি রাপ! বারাকপরে আর হয়তো কখনো আসবো না-কুঠীর মাঠ আর দেখবো কি না। কি জানি!! আজিকার এই অপরাহ যেন চিরদিন মনে থাকে- -এর সখি, আনন্দ ও এর দঃখ। মাঠ থেকে উঠে গেলাম গঙ্গাচরণের দোকানে—সেখানে সবাই বসে দেশবিদেশের গলপ করচে। অশিবনী যাত্রা-দলের বাজিয়ে, এখানেই ঘর বোধে বাস করে। তার বাড়ি পর্ণ গোঁসাই বলে একটা লোক এসেছিল—সে এখানে এসে গলপ করে গিয়েচে যে, সে বিলেত ঘরে এসেচে। প্রমাণস্বরপ বলেচে কোথায় নাকি প্রকান্ড পিতলের মাত্তি সে দেখেচে—এ দাবীপে একখানা পা, আর একটা দাবীপে আর এক খানা পা—তার তলা দিয়ে সে জাহাজে ক’রে গিয়েচে। এ একটা অকাট্য প্রমাণ অবিশ্যি যে, সে লোকটা বিলেতে গিয়েছিল! আজই যাবার কথা ছিল। কিন্তু খকু বল্লে। আজ থাকুন। গত শনিবারে খকুদের বাড়ি বারাকপরে গিয়েছিলাম। ও দাঁড়িয়ে রইল পৈঠোতে আসার সময়। সকালে গোঁসাই বাড়ির পাঠশালা Examine করতে গেলাম। বোন্টম বাড়ীর বাড়ির সামনে বড় বটগাছের তলায় যািগল বসে কথা বলচে একজন বন্ধ মসলমানের সঙ্গে। বন্ধ বলচে, ԵՀ