পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তবে কথা এই সন্ধ্যাবেলায় নৌকা ভিড়লো গ্রামের ঘাটে, বেসতি করি। কখন ? কত ধানক্ষেত, খেজর গাছ, তারাভরা রাত। সন্ধ্যায় গ্রামের বধ্যরা কলসী কাঁকে জল নিতে এসে গা ধয়ে নিলে, জলের আলপনা একে চলে গেল বাড়ি ফিরে। কত কথা বলে এই মাঠঘাট, কতদিনের জনপদবধাদের চরণচিহ্ন অাঁকা নদীর ঘাটের পথটি, বন্ধ বকুল কি বট গাছ-আর এই সপরির সারি, অদ্ভুত শোভা এই সাপরি বাগানের! শধৰ চোখ চেয়ে বসে থাকা স্টীমারের ডেকে, খাওয়া নয়, ঘামানো নয়, শশধৰ জ্যোৎস্নালোকিত মন্ত ডেকে বসে একদৰ্লিন্টতে চেয়ে থাকা। আমার সঙ্গে এক ভদ্রলোকের সন্টীমারেই আলাপ হল। তিনি আমায় পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন, তাঁর বাড়িতে গিয়ে উঠতে হবে। বরিশালে সন্টীমার লাগলো যখন, তখন তাঁর অন্যুরোধ ক্ৰমে সক্রিয় হয়ে উঠলো-তিনি আমার জিনিসপত্র তাঁর কুলির মাথায় চাপিয়ে দিলেন। কাউনিয়াতে তাঁর বাড়ি। বেশ বড় বাড়ি, জমিদার লোক, দেখেই বোঝা গেল। ভদ্রলোকের দাদা বাড়ি পৌছলে এসে আমার সঙ্গে আলাপ করলেন। বরিশালে দজন লোক আমার বড় ভালো লেগেছিল, তার মধ্যে ইনি একজন। শািন্ধ ভালো লেগেছিল বললে এর ঠিক বর্ণনা দেওয়া হল না-ইনি একজন অদ্ভুত ধরনের লোক । পাড়াগাঁয়ের শহরে এমন একজন লোক দেখবো এ আমি আশা করিনি। তাঁর মস্ত বাতিক শেক্সপিয়ারের ভুল বার করা। এই নাকি তাঁর জীবনের ব্ৰত। কি প্রগাঢ় পান্ডিত্য শেকসপিয়ারে, কি চমৎকার পড়াশোনা ! কীৰ্ত্তনখোলা নদীর ঝাউবনের ধারে সন্ধ্যাবেলায় বেড়াতে বেড়াতে তিনি রোমিও জলিয়েট” অনগল মখস্থ বলে যেতে লাগলেন এবং ওর মধ্যে কোন কোন সথানে কি অসঙ্গতি তাঁর চোখে লেগেচে সেগলো ব্যাখ্যা করে গেলন। কখনও 'রোমিও জলিয়েট’, কখনও 'হ্যামলেট, কখনও "টেম্পেসন্ট’-এটা থেকে আবত্তি করেন, ওটা থেকে আবত্তি করেন।--সে। এক কান্ড আর কি! সমিতিশক্তি কি অদ্ভুত! কিন্তু খানিকটা শনেই আমার মনে হল শেক্সপিয়ারের সৌন্দৰ্য্য উপভোগ করা এর উদ্দেশ্য নয়। এমন কি ভালো সমালোচনাও নয়—শেকসপিয়ারের খােত বার করে তিনি একখানা বইও লিখেছিলেন-আমায় একখানা উপহার দিলেন বরিশাল থেকে আসবার সময়। আমার আরও ভালো লাগতো এই ভদ্রলোকের অমায়িক ব্যবহার ও ভদ্রতা। আমার তখন বয়স চব্বিশ-পাঁচিশের বেশি নয়। তাঁর বয়স তখন অন্তত“পক্ষে পশ্চান্ন। কিন্তু আমার সঙ্গে অন্তরঙ্গ বন্ধ বা সতীর্থের মতই কথাবাত্ত বলতেন, দোতলার ঘরে আমায় নিয়ে একসঙ্গে খেতে না বসলে তাঁর খাওয়াই হত না। তিনি খাব হাসাতে পারতেন, সামান্য একটা কি কথার সত্র ধরে এমন হাসির মশলা তা থেকে বার করতেন, আমার তো হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবার উপক্রম হত। আমার মনে আছে একদিন কে তাঁকে বললে আমার সামনেইভেরিওরাম শেকসপিয়ারের নোটগলো দেখেচোন ? ভদ্রলোক দটি আঙলি নিজের দিকে দেখিয়ে বলতে লাগলেন-আরে, ভেরিওরাম লাগবে নু (বরিশালের ইডিয়ম), আত্মারাম আছেন, আত্মারাম! আমি তো হেসে গড়িয়ে পড়ি আর কি! কি বলবার ভঙ্গি, আর কি হাত নাড়ার কায়দা ! বড় শ্রদ্ধা হয়েছিল। এই লোকটির ওপর আমর-এমন নিবিরোধ, নিম্পািহ, সদানন্দ, জ্ঞানতপস্বী চোখে বড় একটা তখনও পর্যন্ত দেখিনি-বইয়েতে টাইপ হিসেবে অবিশ্যি অনেক পড়েছিলাম। আমার বেশ মনে হয়, আজও পৰ্যন্ত সে ধরনের মানষি আর দ্বিতীয়টি চোখে পড়েনি। R