পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর সারবে না। আমি কত বোঝালম, বললাম, আপনার বয়েস হয়েচে, তার তুলনায় আপনার শরীর ঢের ভাল। কেন মিছে ভাবচোন?” ভদ্রলোকের ছেলে আমার সঙ্গে গোপালনগর স্কুলে পড়তো অনেক দিন আগে। সে ছেলেটি শানেচি মারা গিয়েচে । আমি সে কথা জিগ্যেস করিনি। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে খানিকদরে এলেন। আমি তাঁকে বোঝাতে বোঝাতে এলাম। তুত তলায় সঙ্কুলের কাছে তিনি চলে গেলেন। সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়েচে, মাথার ওপর বশিচক উঠেচে, জবল জবল করছে নক্ষত্ৰগলো-বাঁওড়ের মাথার ওপরে উঠেচে সপ্তর্ষি । এতক্ষণ বিয়ের বড়লোকী-ফলদািরপ বন্ধ হাওয়ার মধ্যে থেকে মনটা হাঁপিয়ে উঠেছিল, এইবার এসে আকাশের দিকে মক্ত বাহাদর নাক্ষত্রিক জগতের দিকে সেটা ছড়িয়ে দিয়ে বাঁচলাম। হাট থেকে এসে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গেলাম। বেলা খাব পড়ে গিয়েচে । আমাদের দেশে গ্ৰীস্মকালের নিম্পেমাঘ অপরাহের শোভা এত সন্দির যে যার অভিজ্ঞতা নেই তাকে ঠিক বোঝানো যাবে না। এই অপরােপ সৌন্দৰ্য্যলোকের মধ্যে বসে কত কথাই মনে আসে ! হাজার বছর কেটে যাবে-এই রঙীন মেঘমালা, এই গায়কপাখীর দল, এই সব নরনারী, গাছপালা-কোথায় ভেসে যাবে কালস্রোতে, কিন্তু মান যা তখনও থাকবে। নতুন ধরনের কি রকম মানষ আসবে, কি রকম হবে তাদের সভ্যতা, কি জ্ঞানের আলো তারা পথিবীতে জেবলে দেবে—এই সব ভাবি। নদীতে সন্নান করতে নেমেচি, পটি দিদি তখনও ঘাটে। বশিচক রাশির একটা নক্ষত্রে খাব জৰল জবল করচে। নদীর ওপারে সাঁই-বাবলা গাছগালোতে অস্তদিগন্তের রঙিন মায়া-আলো পড়েচে। সারারাত কাল আমি কুড়িয়েচে লোকে লন্ঠন ধরে। আমার মাঝে মাঝে ঘােম ভাঙে, মাঝে মাঝে দেখি সবাই আম কুড়চ্চে। কাল করণার সঙ্গে আকাইপরে গেলাম। যেমন প্রতি বৎসর যাই। কারণার মায়ের মখে সেখানের গলপ শনে বড় তৃপ্তি পাই। সহায়হাঁর ডাক্তারের দ্বিতীয়বার বিবাহের কথা আবার শািনলাম। সে এক কারণে কাহিনী। তারপর শািনলাম মধ মািখয্যে ও প্রেমচাঁদ মািখয্যের বাড়ির ডাকাতির গলপ। এ গল্প অবিশ্যি আমি ছেলেবেলায় শানেচি, তবও আবার ভাল করে শািনলাম। কারণোদের বাড়ির অতিথি-সেবা ও তার বাপের টাকা ওড়ার গলপ বড় মজার। টাকা আদায় করে নিয়ে আসছিল গোমস্তা। ২৫o৩ টাকার হিসাব দিলে না। বললে, কত্তা মশায়, মাঠে ঝড়বাল্টি হয়েছিল, টাকাগলো। উড়ে গিয়েচে, আর পেলাম না।" ওর বাবা তাকে রেহাই দিলেন। মরবার আগে সবাইকে ডেকে যত বন্ধকী খত ছিড়ে ফেললেন। ওর ছেলেরা কার নামে নালিশ কত্তে যাচ্ছিল, কারণার মা বললেন-শোন, তা তো হবে না, কত্তা বারণ করে গিয়েচেন মরবার সময়ে। ওদের পীড়ন করতে পারবে না। যা দেয় নাও গে যাও। একদিকে যেমন কারণার বাবা, অন্যদিকে তেমনি সহায়হাঁর ডাক্তার। সহায়হরির মত অর্থ পিশাচ মানষ পাড়াগাঁড়ে বেশী নেই। খতে টাকা উশােল দিলে দেয় না, অথচ আদায়ী টাকার জন্যে খাতকের নামে নালিশ করে। চক্ৰবন্ধি হারের সদের এক আধলা রেহাই দেবে না খাতককে ।