পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ দিনটা মেঘে মেঘে কেটেচে! কিন্তু সকালবেলায় একটি সয্যের মািখ দেখেছিলাম। মেঘ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল। দাপরে ঘামচ্চি, জগো এসে ওঠালে। একটা পরে খকুও এল। জানলার গরাদটা ধরে দাঁড়িয়ে তার নানা গলপা। তার মাথা নেই, লেখাপড়া কি করে হবে.এই সব কথা। আমার কত্তব্য হিসাবে তাকে যথেষ্ট আশাবাস দিলাম। তারপর পাঁচীকে আর ওকে রোয়াকে বসে সােয্য ও গ্রহনক্ষত্র সম্পবন্ধে অনেক কথা বললাম। খকু বেশ আগ্রহের সঙ্গে শনলে। বললে, এ আমার বেশ ভাল লাগে। সােয্য সম্পবন্ধে কিছই জানতুম না। আরও বলবেন একদিন। তারপর আমি বেলডাঙ্গার মাঠে বেড়াতে বার হােলাম। কি সন্দের বিকেলটা আজ! ঠান্ডা। অথচ পথঘাট শকানো খটখট করচে। মাঠের গাছপালাতে সোনালী রোদ পড়েচে। কুঠীর মাঠে যেতে যেতে প্রত্যেক সৌদালি গাছ, ঝোপঝাপ, বাঁশবন আমার মনে গভীর আনন্দের সঞ্চার করচে। নতজান হয়ে ভগবানের কাছে তাই মনের আনন্দ জানালাম। কুঠীর মাঠে ঘাসের ওপর এখনও জল বেধে আছে। কবিরাজ ও গঙ্গাচরণ পথের ধারে মাদর পেতে বট অশবথের ছায়ায় বসে গল্প করচে। কাপড় কেটে কবিরাজ নিজেই জামা সেলাই করচে। শকানো ভেষজ পাতালতা কলকাতায় চালান দেবে, তারই মতলব আটিচে। বড় ভাল লাগল বিশেষ করে আজ ওদের গলপসলপি। আসবার সময় ছাতা নিয়ে এলাম, তখন রাত হয়ে গিয়েচে, আমাদের ঘাটে যখন নাইতে নেমেচি, আকাশে অনেক নক্ষত্র উঠেচে। ক-দিনই মনে কেমন একটা অপব্ব আনন্দ। বিশেষ করে যখনই কুঠীর মাঠে যাবার সময় হয়, তখনই সেটা বিশেষ করে হয়। কাল যখন বিকেলে ঘন নীলকৃষ্ণ মেঘ করল, তার কোলে বক উড়ল, তখন আমি সেদিকে চেয়ে এক জায়গায় বসে আছি । আবার যখন পালের রেলিং ধরে উঠে দাঁড়াই, অস্ত-আকাশের পটভূমিতে সবজি বাঁশিবনের দিকে চেয়ে থাকি, তখন আমি যেন শত-যগজীবী অমর আত্মা হয়ে যাই। সেদিন যেমন হয়েছিল, আজও তাই হোল। --বেলেডাঙ্গার ওদিকের মোড় থেকে চক্রাকৃতি দিগম্বলয়লীন শ্যাম বেণীবনের অপব্ব শোভায় মেঘধসর আকাশতলে মন এক অপব্ব আনন্দে উৎফল্লা হয়ে উঠল। যখন এই শকানো মারাগাঙে। আবার ইছামতী বইবে, তখন আমি কোন নক্ষত্রে রইবো-কত কাল পরে-কে জানে সে খবর ? বাবলার সোনালী ফল দোলানো গাছের তলা দিয়ে সেই পথ। ভাবতে ভাবতে চলে এলাম। পলের ওপর খানিকটা দাঁড়াই। সেই কত কালের প্রাচীন বট অশবখ, কত কালের আইনদিদ মন্ডলের বাড়ি ও বাঁশবনের সারি। মনে এ কয়দিনই সেই অপব্ব অনভূতিটা আছে। পালের পাশে একটা হেলা বাবলা গাছে ফলের কি বাহার! যখন নদীর ঘাটে এসে নামলম সনান করতে তখন অন্ধকার হয়ে গিয়েচে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে শািন্ধ বশিচকের একটা নক্ষত্র অস্পষ্টভাবে জৰলচে। মাথার উপর দ্যুতিলোক, চারিদিকে নীরব অন্ধকার, নদীজল ও গাছপালার দিকে চেয়ে মনে যে ভাব এল, তা মানষকে অমরতার দিকে নিয়ে যায়। বড়ো ছকু পাড়াই এই সময় তার সত্ৰী আদাঁড়িকে সঙ্গে করে নদীতে গা ধতে এল। সে অন্ধকারে চোখে দেখতে পাবে না বলে সত্রী ওর সঙ্গে এসেচে। সকালে উঠে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে আজ বড় আনন্দ পেলাম। দােপারে। পাটশিমলে রওনা হওয়া গেল পায়ে হোটে। কবিরাজ মশায় পাঠশালায় ছেলে