পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পড়াচ্ছেন, তাঁর কাছে বসে একটি গলপ করে বট অশবথের ছায়ােভরা পথ দিয়ে মোল্লাহাটির খেয়া ঘাটে গিয়ে পার হলাম। কেউটে পাড়ার কাছে গিয়েচি, এক জায়গায় অনেকগলো। বেলগাছ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে। সেখানে বড় বন্টি এল। পর্বদিকের আকাশ বন্টিধোয়া, নীল ; পরিস্কার সেই ইন্দ্ৰনীল রং-এর আকাশের পটভূমিতে দর গ্রামের তাল-খোঁজরের সারি, বাঁশবনের শীর্ষ, কি চমৎকার দেখাচ্চে। আর এদিকে ঘন কালো বর্ষার মেঘ জমেচে । গোবরাপরের মোড় বেকে কুদ্দীপরের বাঁওড়ের ওপারে রানীনগর বলে ছোট একটা চাষা-গাঁয়ের দশ্য ঠিক যেন ছবির মত। এখানে একজন বন্ধাকে পথ জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন---তোমার নাম বিভূতি : সাতবেড়েতে একবার গিয়েছিলে না ? আমি বললাম--- হ্যাঁ। আপনি কি করে চিনলেন ? তিনি নিজের পরিচয় দিলেন না। গোবরাপরের একটা দোকানে মণীন্দ্ৰ চাটিয্যের ভট্টচায্যির সঙ্গে দেখা। সেখানে বসে একটা গলপ করেই আবার পথে বেরিয়ে পড়ি। কি ঘন বন পথের দ-ধারে। বড় বড় লতা কালো কালো গাছের গাড়ির গায়ে উঠেচে—এই কয়দিনের বন্টিতেই গাছের তলায় বনের ছোট ছোট গাছপালার জঙ্গল বেধে গিয়েচে । 'বোঁ-কথা-কও ডাকাচে চারিধারে। কেউটে পাড়ার গায়ে পথের ধারের একটা সৌদালিফল গাছে এই আষাঢ় মাসের প্রায় মাঝামাঝি সময়েও অজস্র ফল দেখছি। পাটশিমলের মধ্যে কি ভীষণ tropical forest-এর রাজত্ব! ছোট ছোট জাম ফলে আছে বনো জামগাছে—বড় বড় লতা-বনের মধ্যেটা মিশ-কালো। পাটী-শিমলের মোহিনী কাকার সঙ্গে বাঁওড়ের ওপারে একটা চাষাগীয়ে দেখা হোল। তিনি আমার সঙ্গে গেলেন প্রায় বাগান গাঁ পৰ্যন্ত। পিসিমার বাড়ি গেলাম। তখন সন্ধ্যা হয়েচে । পিসিমার সঙ্গে অনেকদিন পরে দেখা। দ-জনে অনেক রাত পযািন্ত গলপগজব করা গেল। সকালে কোদালার জলে নাইতে গিয়ে দেখি সে টলটলে জল আর নেই নদীর --কচরি৷ পানায় নদী মজে গিয়েচে, জল রাঙা, ঘোলা- সেইটকু জলে সব লোকে নাইচে, গোর বাছরের গা ধোয়াচ্চে। পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়া করে বাল্টি মাথায় আবার বাড়ি রওনা হই। সারাপথটা বর্ষা আর বাদলা- কিন্তু খাব ঠান্ডা দিনটা। আবার সেই ঘন বন পাটী-শিমলে থেকে গোবরাপরের পথে দ-জন চাষা লোকের সঙ্গে গলপ করতে করতে এলাম। আবার সেই ঘন tropical forest-এর মত বন, বড় বড় কাছির মত লতা-পথ নিজজন, টপ টপ করে জল ঝরে পড়ছে গাছের মাথা থেকে, আরণ্যশোভা কি অদভুত ! রানীনগরের এপারে একটা সাঁকোর ওপর কতক্ষণ বসে বসে নীল আকাশের পটভূমিতে অাঁকা গ্রামসীমার বাঁশবনের দিকে চেয়ে রইলাম। মোল্লাহাটির ঘাট যখন পার হই তখনও খাব বেলা আছে। আজ মোল্লাহাটির হাটবার, হাটে গিয়ে একটা আনারসের দর করলাম। সন্দিরপরের গোয়ালাদের একটা ছেলের সঙ্গে দেখা হোল। মনে পড়ছিল। আজ ওবেলা যখন আসছিলাম পাটী-শিমলের ঘন ক্ষদে জামবনের মধ্যের সেই পথটা দিয়ে। —মনে হচ্ছিল। আমি একজন বন্ধনহীন মন্ত পথিক, দেশে দেশে এই অপব্ব রপলোকের মধ্যে দিয়ে বেড়িয়ে বেড়ানোই আমার জীবনের পেশা। কি আনন্দ যে হয়েছিল, কি অপব্ব পালক, মক্তির সে কি আমন্তময়ী বাণী ! কেন মান যে ঘরে থাকে। তাই ভাবি। আর কেনই বা পয়সা খরচ করে মোটরে কি রেলের গাড়িতে বেড়ায় ? পায়ে হেটে পথ চলার মত আনন্দ কিসে আছে ? সে একমাত্র আছে ঘোড়ায় চড়ে বেড়ালে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ঘোড়ায় চড়ার আনন্দ আমি জানি। তার সঙ্গে কিছরই তুলনা হয় না। মোল্লারহাটির হাট ছাড়িয়েচি, পথে আমাদের গাঁয়ের গণেশ মচি নকফিল গ্রামে