পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাল বারাকপরে গেলাম সকাল বেলা। দাপরে ইছামতীতে স্নান করতে গিয়ে সত্যি বড় আনন্দ পেয়েচি। কলে কলে ভরা নদী, দা-ধারে অজস্র কাশফল, আরও কত কি লতা ঝোপ, বর্ষার জলে সব ঘন সবজে-চকচক করাচে কালো কচর পাতা, মাখম শিমের নীল ফল ফটেচে-একটা গাছে সাদা সাদা বড় বড় ঢোল-কলমীর ফলও দেখলাম । বৈকালে যখন খকু, আমি আর কালো নৌকোতে বনগ্রামে আসি, তখনও দেখলাম দ-ধারে গাছপালার কি অপরােপ রােপ, বনের ফলের কি শোভা! ছকু মাঝিকে জিজ্ঞেস করলাম-ওটা কি ফল ছকু ? ছকু বললে-কোয়ারা... খাঁরকুকে কাশফল দিয়ে একটা বাংলা সেণ্টেন্স তৈরি করতে দিলাম! রাঙা-রোদ-বৈকালটি মেঘমাক্ত আকাশে, নদীতীরে অপব্ব শোভা বিস্তার করচে। কাল রাত্রের ট্রেনে তারাভরা আকাশের তলা দিয়ে যখন এলাম, সেও বেশ লাগছিল। আজ স্কুলের ছাঁট হবে। সন্দির প্রভাতটি। আজ সকালটি বড় সন্দর! গয়া নদীতে হতেমখ ধয়ে এসে বটতলায় এসেচিপরে সবজি পাহাড়শ্রেণী - সকালের হাওয়ায় একটা যেন শীতের আমেজ। কাল ঘন জঙ্গলের পথে আমরা অনেকদর গিয়েছিলাম, পথে পড়ল দাখানা সাঁওতালী গ্রাম। বারমডেরা ও কুলামাতো। আর বছর যে রাস্তা ধরে সাটকিটা গ্রামে যাই, এবার সে রাস্তায় না গিয়ে চললাম সোজা ধনঝরি পাহাড়ের দিকে। বামে সিদ্ধেশবর ডাংরি। সামনে ডাইনে পিছনে চারিদিকেই পাহাড়। নীলকরনার ওদিকের পাহাড়ের বড় বড় সামনের চাইগলি নীল আকাশের পটভূমিতে লেখা আছে। ছোট একটি পাহাড়ী ঝরনা এক জায়গায়। ঝরনা পার হয়ে দহ-ধারে শাল, মহীয়া, তমালের বন, বনো শিউলি গাছও আছে। একটা ভাল জায়গা দেখে নিয়ে আমরা চা খাবো ঠিক করলাম। বন সামনের দিকে ক্ৰমেই ঘন হচ্ছে, ক্লামে একধারে উচ্চ পাহাড়ের দেওয়াল, বড় বড় বনের গাছে ভরা, আর বাঁ দিকে অনেক নিচে একটা ঝরনা বয়ে যাচ্ছে ঘন-সন্নিবিলট গাছপালার মধ্য দিয়ে। আমরা দর থেকে ওর জলের শব্দ শািনতে পেয়েছিলাম। সবাই মিলে নেমে গিয়ে বড় বড় গাছ ও মোটা কাছির মত লতা দিয়ে তৈরী প্রকৃতির একটি ছায়াশীতল ঘন কুঞ্জবনে একখানা বড় চৌরস কালো শিলাখন্ডের ওপর গিয়ে বসে চা পান করা গেল। টাঙি হাতে একজন সাঁওতাল জঙ্গলে কাঠ কাটতে যাচ্চে, বললেবেশী দেরি করবেন না, একটা পরে এখানে বনো হাতী জল খেতে নামবে। গাছপালার মাথায় মাথায় শরতের অপরাহের রাঙা রোদ। সামনে পেছনে বড় বড় পাথর, একখানার ওপর আর একখানা আকাশের দিকে ঠেলে উঠেচে-ওদিকে আরও ঘন জঙ্গলের দিকে ঝরনার পথ ধরে খানিকটা বেড়িয়েও এলাম। বেলা পড়লে রওনা হয়ে ছায়াভিরা পাৰ্ব্বত্যপথে হোটে আমরা এলাম নীলাবারনার উপত্যকার মাখ পৰ্য্যন্ত। ডাইনে সিদ্ধেশবর ডাংরি মাথা খাড়া করে আছে। আশেপাশের বন্য সৌন্দৰ্য্যা সন্ধ্যার ছায়ায় আরও সন্দরতর হয়েচে-সেইদিনই যে সদরে পথে ইছামতীতে ন্যাসবার সময় আমাদের ভিটেটাতে গিয়ে মায়ের কড়াখানা দেখেছিলাম –সে কথা মনে পডুচে। নীরদবাব ও আমি নীল ঝরনা বেড়িয়ে অনেক রাত্রে বাংলোতে ফিরি। সকালে উঠে সবণ রেখার পলের ধারে মাছ কিনতে এলাম। সকালটি বড় চমৎকার, নিশ্চেমঘা নীল আকাশের দিকে চাইলে কত কালের কত সব কথা মনে পড়ে।