পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালাঝোরের দশ্যটি বেশ লাগল। বলরাম সায়েরের ধারে সেই গাছটি, নানারকমের পটভূমিতে দাপরের পরিপািণ সয্যালোকে কি অদ্ভুত যে দেখাচ্ছিল! তিনটের ট্রেনে, গেলাম টাটানগর। বাসে কাশিডি নেমে আশর বাসা খোঁজ করে বার করি। সে একটা গন্ধরাজ ফলগাছের তলায় চেয়ার পেতে বসে আছে। দ-জনে সন্ধ্যার পরে নিউ এল-টাউনে প্রতিমা দেখে এলাম। লোক-জনের ভিড়, মেয়েদের ভিড়, তারপর ওলন্ড এল-টাউনের প্রাইমারি স্কুলে ঠাকুর দেখি। একবার আশ বাড়ি এল মোটর লরি দেখতে-পাওয়া গেল না, তারা সব বন্দমা জিঙেক ঠাকুর দেখতে যাচ্চে। হোটে বৰ্ম্মমা জিঙ্ক যাবার পথে ডপ্লে প্ল্যাণ্ট ও Slug ঢালার সময়কার রক্ত আভা থেকে মনে হল আগ্নেয়গিরি কখনো দেখি নি, বোধ হয়। এই ধরনের জিনিস হবে। ওই সাদা আগনের স্রোতের মতই তার উষ্ণ লাভা-স্রোত। বৰ্ম্মমা মাইনসের ঠাকুর সাজিয়েচে খব ভাল, আবার তার সামনেই একটা কৃষ্ণলীলার ছবি সাজিয়েচে । বাসে সেন্টশনে জগন্সলাই ও বিষ্ণপাের ঘরে কাশিডি এলাম। পথে বাস হাঁকিছে, "টিন প্লেট', 'বৰ্ম্মমা জিঙক, যেমন কলকাতায় হাঁকে "ভবানীপার’, ‘আলিপরী। সকালে টাটানগর থেকে প্যাসেঞ্জারে বাসায় নামলিম। শ্যামপাের গ্রামখানা পাহাড়ী নদীর ঠিক ওপারে, কাঁকুরে জমি, কাছেই এদেশের ধরনের বনজঙ্গল। পথে সিং ভূমের প্রকৃত রােপ দেখলাম, অর্থাৎ উচ্চাবচ ভূমি, পাথরের চাই, শাল ও কে’দ গাছ, রাঙা মাঠ। তিনটের ট্রেনে মহলিয়া থেকে বাদলবাব, বিশবনাথ বসা প্রভৃতি অনেকে এল। অশ্ববখ তলায় বসে চা খাওয়া গেল। বেলা পড়ে এসেচে। দটো বাজে। সে সময় আমি একা গেলাম পাহাড়ী নদীর ধারে শালচারার জঙ্গলে - একা বসতে। সামনে পাহাড় শ্রেণী থৈ থৈ করচে, দরে কালাঝোরের নীল সীমারেখা নীল আকাশের কোলে। ঐ দিকে আজ বাংলাদেশে আমাদের গ্রামের বাঁওড়ের ধারে আড়ং বসেচে, কত দোকানদারের কত বেচাকেনা, কত নতুন কাপড়-পরা ছেলেমেয়েদের ভিড়। পাথরের ওপর অপরাহের ঘনায়মান ছায়ায় এক জায়গায় বসে চারিধারের মন্ত প্রসারিতা দেখে কেবলই বাংলাজোড়া বিজয়া দশমীর উৎসব ও কত হাজার হাজার ছেলেমেয়েদের হাসিমখ মনে পড়ল। দ-দিনের বিজয়া দশমীর কথা আমার মনে আছে ছেলেবেলাকার.যােগাল কাকা সেদিন এসে রান্নাঘর ও বড়ঘরের মাঝখানে উঠোনেতে দাঁড়িয়ে বাবার সঙ্গে বিজয়ার আলিঙ্গন ও প্ৰণাম করলেন।...আর যেদিন গঙ্গা বোল্টমকে আমরা আশদের চন্ডীমন্ডপে ব্রাহ্মণ ভেবে ভুলে পায়ের ধলো নিয়ে প্ৰণাম করেছিলাম। আজকার দিনে যেখানে যত লোককে ভালবাসি সকলের কথাই মনে পড়ল, তাদের মধ্যে কাছে কেউই নেই, অনেকে পথিবীতেই নেই, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যে আমার এ প্রীতিনিদেশ হয়তো বা ব্যর্থ যাবে না। গালডির হরিদাস ডাক্তারের সঙ্গে অনেককাল পরে আজ দেখা। সে গিয়েছিল। ধলভূমগড়ের রাজবাড়িতে রোগী দেখতে, আমরা এখানে আছি শনি বাদলবাবদের সঙ্গে এখানে ট্রেন থেকে নেমেচে ; তার সঙ্গে জ্যোৎস্নাফল্পে সন্ধ্যায় পাহাড়ী নদীর ধারে তপ্ত শিলাখন্ডের ওপর গিয়ে বসলাম। আমনি যেন অন্য এক জগতে এসে পড়েচি মনে হ'ল। দরে নদীর কুলকুল জলস্রোত, ওপারের জ্যোৎস্নাশভ্ৰ পাহাড় শ্রেণী, খাব একটি অাঁকাবাঁকা কি গাছ, আর এক প্রকারের বনফলের মিনিট সাবাস-মাথার ওপরের নক্ষত্রবিরল আকাশ-সবগলো মিলে আমায় এমন এক রাজ্যে নিয়ে গেল যে চপ করে সেদিকে চেয়ে বসেই থাকি, হরিদাস ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা আর আমার SS