পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হয় না, কথা বলবার মত মনও নেই, কেমন যেন হয়ে গেলাম। দ-জনেই চপচাপ, কতক্ষণ বসে থেকে রাত দশটার কাছাকাছি বাংলোতে ফিরি। বৈকালে নীলকারনা বেড়াতে গেলাম। কিন্তু বেলা গিয়েছিল বলে বেশীক্ষণ নীলঝরনার উপত্যকায় বসে থাকা সম্পভব হ’ল না। পাহাড়ের ওপারে উৎরাই-এর পথে বনতুলসীর জঙ্গলে ঘন ছায়া নেমেচে, তার মধ্যে বড় বড় কেদি গাছ, সিদ্ধেশবর, ডুংরির * মাথায় অস্তমান সংয্যের আভা একট। ঝরনা পেরিয়ে বরম-ডেরার পথে খানিকটা উচ, জায়গায় পাথরের সন্তাপ খাজাঁচি, জনকয়েক লোক কুলামাতোর দিক থেকে আসচে, ওদের সঙ্গ নিলাম। ওরা বললে, তুই এখানে কি করচিস রে ? বললাম, পাথর কিনতে এসেচি। ৪নং shift-এর কাছে এসেচি। তখনও জ্যোৎসনা ওঠে নি, মদীর দোকানটা আজি বন্ধ, রাধাচড়া গাছে যে ফলের লতাটা সেদিন দেখেছিলাম, তাতে আজ আর ফল নেই। এঞ্জিনিয়ারের বাংলোতে লোক খাটচে কারণ ডেপটি কনজারভেটর অফ ফরেস্টস এখানে একমাসের মধ্যে এসে বাস করবে। পট্টনায়েক যে বাংলো দেবে বলেছিল, সেটা দেখলাম। বড় বড় গাছের মধ্যে বাংলোটা, বারান্দায় বসে সিদ্ধেশবর ডাংরির দশ্য উপভোগ করা যায়। নিকটেই নীলকারনা, জলের কম্পট হবে না। কবিরাজ নেই, ডান্তারও নেই। ওদের বাংলোতে। কবিরাজ গিয়েচে টাটানগর, ডাক্তার গিয়েচে মহলিয়া, কাজেই বিজয়ার সম্পভাষণ। এদের আর জানানো গেল না। ফিরবার পথে আমি গররা নদীর ধারের পলের ওপর বসে রইলাম অনেকক্ষণ। দারে কালাঝোর জ্যোৎস্না রাত্রে অস্পষ্ট দেখাচ্চে। পাহাড়ী নদীর কুলকুলা শব্দ যেন সওগীতের মত শোনাচে। তােমা পাহাড়ের মাথার ওপর দ-একটা তারা মনকে নিয়ে যায় অনেক দর, কতদার, পথিবী পার করিয়ে অসীম দ্যতিলোকের মধ্যে। একটা পরে পট্টনায়েক এল পলের ওপরকার কাঠ ধরে। আমি বসে আছি দেখে বললে, চলন আমার বাসায়! একটা বিজয়ার মিনিটমাখ করবেন। অামি বললাম- হোটে ক্লান্ত আছি, আজ আর নয়। তারপর সে অনেকক্ষণ বসে নানা গলপ করলে। রাত নটার সময় বাড়ি ফিরি। পশপতিবাব আজি আসবেন কথা ছিল, এলেন না, সেজন্যে মনটা একটি খারাপ হয়ে গেল। আমি আর নীরদবাবা * বোরলাম সন্ধ্যায় ঠিক সময়ে। যাওয়ার পথে অপরাহের ঘন ছায়া নেমে এসেচে পাহাড়ের অধিত্যকায়, তার কোলে-কালে এদিকে ওদিকে চারিদিকে সাদা সাদা বকের দল উড়চে। সমস্ত দিনের অবসাদ একমহত্তে কেটে গেল যেন, সেদিকের অপরােপ সন্ধ্যার পানে চাইলাম। ওখান থেকে এসে নীলঝরনার দিকে চলি। তােমা পাহাড়ের ওপর উঠলাম। পিয়ালতলা দিয়ে। বড় বট গাছটাতে একরাশ জোনাকী জবলচে, ওধারে উঠেচে ত্রেয়োদশীর চাঁদ, তামা পাহাড়ের বিরাট অধিতাকার গায়ে পাব থেকে পশ্চিমে দীঘ বড় বড় ছায়া পড়েচে । আমরা দ-ধারে পাহাড়ের গিরিপথটা পার হয়ে নামলিম ওপারের জ্যোৎস্নাশভ্ৰ উপত্যকায়। বনতুলসীর জওগল আর তার মাঝে মাঝে দাঁডিয়ে আছে। শাল ও তমাল। চারিধারে রােপ যেন থৈ থৈ করচে। পাহাড়ের মাথায় এদিকে ওদিকে দ-চারটি নক্ষত্র। নীলকরনার জল পার হয়ে বরাম ডেরার পথে একজন পাহাড়ী লোকের সঙ্গে

  • নীরদরঞ্জন দাশগািপ্ত।

noNR