পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখা। সে একা একটা লাঠি হাতে গান গাইতে গাইতে চলেচে। কুলামাতোর দিকে { তাকে বললাম-অত জঙ্গলে এত রাত্রে একা যাবি, যদি বাঘের হাতে পড়িসী। সে বললে-খেদিয়ে দিব বাব! অর্থাৎ সে লাঠি দিয়ে বাঘ তাড়িয়ে দেবে। আমরা আর একটা এগিয়ে যেতেই চারিধারের পাহাড়ী অধিত্যকার নিজজনতায় জ্যোৎস্না-ধৌত সৌন্দয্যে যেন কেমন হয়ে গিয়েচি। একটা ভারি। আশচয্য জিনিস দেখা গেল। দরে ধঞ্জরী শৈলমালার গায়ে একটা নক্ষত্র জবলছিল, খানিকক্ষণ থেকে সেটা আমরা দেখচি। আর আমি মাঝে মাঝে দেখচি ডাইনের রথম পাহাড়ের দিকে, বাংলা দেশের আলো ছায়া ভরা কোজাগরী পণিমা রাত্রের কথা ভাবচি, এমন সময় নক্ষত্রটা যেন টপ করে খসে গোল পাহাড়ের ঢাল থেকে। আর সেটা দেখা গেল না। আমরা দ-জনেই অবাক হয়ে রইলাম । সবজি, ঝরনার কাছে এসে বসলাম, ওখানে একটি সবাহৎ শিমল গাছের শাখা নত হয়ে আছে। ঝরনার জলের ওপর কুলকুল, ক্ষীণ শব্দ হচ্চে ঝরনার জলধারার, জ্যোৎস্না রাত্রে ঝরনার জল চিকচিক করাচে, বড় শিমল গাছের মাথায় একরাশ জোনাকী জৰলচে, সে এক অপরােপ ছবি। ছবিটা বহদিন মনে থাকবে। তারপর রথামের পাহাড়ের একেবারে মাথায় একটা বড় শিলাখন্ডের ওপরে উঠে বসি। যেদিকে চাই, জ্যোৎস্নাবিধৌত বনরাজিশোভিত শৈলমালা, দরে টাটার কারখানার রক্ত-আভা যেন বহন্দরের কোন অজানা আগ্নেয়গিরি, অশিনিগহবরের রক্তশিখার আভা বলে মনে হচ্ছে। পিছন দিকের ঢালটো সহজ বলে মনে হ’ল, সেখানেই নেমে জঙ্গলের মধ্যে পথ ঠিক করতে পারাচি নে। নারীকন্ঠে বললে, কে, এদিক দিয়ে বাবা। চেয়ে দেখি নিচে একটা সাঁওতালদের ঘর। নেমে এলাম তাদের উঠোনে। দটি মেয়ে ও একটি পরিষ উঠোনে আগন জেবালে সম্পভবতঃ আগােন পোয়াচ্চে। আমরা তাদের জিজ্ঞেস করলাম— এই বনে পাহাড়ের নিচে আছিস কেমন করে, হাতী বাঘ নামে না ? তারা সবাই দেখলাম। অদন্টবাদী। বললে-বাবা, ভয় করে কি হবে ? যেদিন বাঘে নেবে সেদিন নোবেই। রথম থেকে আমাদের বাংলো প্রায় দা-মাইল, এদিকে রাত হয়েচে, ন-টা বাজে । আর বেশীক্ষণ এ সব জায়গায় থাকা ভাল নয় বঝে দজনে বেশ জোর পায়ে হোটে রাত পৌনে দশটায় পরিপািণ ব্ৰয়োদশীর জ্যোৎস্নার মধ্য দিয়ে বাংলোতে পৌছে (6वा । আজকার রাতের জ্যোৎস্নাটি আমাকে ইসমাইল।পরের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে কেন এত ? Shuqul সাহেবের বাগানের মধ্যের গাছগালো ঠিক যেন ইসমাইলপির কাছারীর চারিপাশের সেই বনঝাউ গাছ। আহারাদির পরে বাংলোর সামনে বসে। গল্প করচি. একটা প্রকান্ড উলকা জবলতে জবলতে অত জ্যোৎস্নাভিরা আকাশেও ঠিক যেন হাউই-বাজির মত আগানের রেখা সন্টি করে আকাশের গায়ে মিলিয়ে গেল। ভরি সন্দর ভূমিশ্ৰী সিং ভুমের, ভারি চমৎকার জ্যোৎস্না-রাত্রিটা আজি! অনেককাল এদের কথা মনে থাকবে । রাখামাইনস থেকে এসেও যখন বারাকপরের এই গাছগালোর গন্ধ, ছায়া ও শ্যামলতা আমাকে এত মগধ করেচে। তখন আমাদের এ অঞ্চলের সৌন্দৰ্য্য সম্পবন্ধে আমার মত আরও দঢ় হয়ে গেল সন্দেহ নেই। সকালে একটি রোদ উঠলে যখন গাছ-- خ