পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পালায় ঝোপে, ছায়ায় ছায়ায় বেড়ান যায়। তখন যে বনলতার কাটতিক্ত সৌরভ, বনফলের সবাস পাই, পাখীর যে কলকাকলী শনি, কোথায় এর তুলনা ? পাহাড় শ্রেণী না থাকলে রাখামাইনস তো মরুভূমি। তবে পাহাড়ের ওপরকার বন সকালের ছায়ায় ভাল হয়। কিন্তু কেন জানি না। সেখানে এ ধরনের কোমলতা নেই, স্নিগধ নয় রক্ষ। শাল তমাল গাছের বৈচিত্র্য নেই, তারা মোহ সন্টি করতে পারে না, তাদের বনে লতা নেই, প্রাকৃতিক কুঞ্জ সন্টি করতে পারে এমন পণ্ডিপত ব্যক্ষ বা লতা নেই। এই সব জন্যেই তো প্রথম হেমন্তে দেশের বন এত ভাল লাগে। সস্মিত জ্যোৎস্না স্নাতে কোথায় এমন পল্পিত তৃণপণের মন-মাতান সৌরভ ! কাল বিকেলে বেড়াতে বেড়াতে কুঠির মাঠের বানশোভা দেখে আরও বেশী করে আমার থিওরীটার সত্যতা উপলব্ধি করলাম অর্থাৎ আমাদের এ অঞ্চলের গাছপালার বৈচিত্র্য ও সৌন্দৰ্য্য সিং ভূম সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ার অরণ্যের শোভার অপেক্ষা অনেক বেশী। কত কি লতা, কত কি বিচিত্র বনফল, কত ধরনের পত্রবিন্যাস-এত বৈচিত্র্য কোথায় ওসব দেশের অরণ্যে ? আমি রাখামাইনস থেকে বারো মাইল পাহাড় ও জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সবটাই হোটে মােসাবনি রোড পৰ্যন্ত গিয়েচি, সিং ভূমের বিখ্যাত সারেন্ডা ফরেস্ট দেখোঁচি, গবনমেণ্ট প্রোটেক্টেড ফরেস্টের মধ্যে গিয়েচি। সেখানে বন খাব ঘন ও বহবিস্তৃত বটে। কিন্তু বনশোভা নিম্নবঙ্গের বনের মত নয়। ও অঞ্চলের বড় বড় গাছের মধ্যে শাল, কেন্দ, আসান, পলাশ ও মাঝে মাঝে আমলকী ও বন্য শেফালি এই কটি প্রধান। বনলতা আমার চোখে অন্ততঃ পড়ে নি। কোন কোন সন্থানে শিমল বক্ষে আছে। সারবান কাঠ বাংলাদেশের বনে তত নেই। যত ওদেশে আছে কিন্তু আমার বলবার উদ্দেশ্য বাংলা দেশটাতে যদি আজ স্যারেন্ডা রিজােভ ফরেস্টের মত একটা অরণ্য গড়ে উঠত, তার বনবৈচিত্র্য ও সৌন্দয্য এবং নিবিড়তা অনেক বেশী হ’ত—শ্ৰীনগরের ও ছঘরের পথের ধারের বন দেখে এ ধারণা আমার মনে বদ্ধমতল হয়েচে। তবে বাংলার বনে পাহাড়ী নদী বা ঝরনা নেই, ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত শিলাখণডও নেই—তেমনি ও সব বনের পথে এত পাখী নেই, বিচিত্র বর্ণের বনপল্পের সবাস নেই। এ আমি স্বীকার করি। যদি বাংলা দেশের বনভূমির পিছনে থাকত দািরবিস্তৃত নীলগিরিমালা, মাঝে মাঝে যদি কানে আসত পাহাড়ী ঝরনার কুলকুলা শব্দ, শিলাসন আস্তৃত থাকত সিনপদ্ধ ছায়া ঝোপের নিচে, চরত ময়র, চরত হরিণ-নন্দন—উপালাকীর্ণ বন্য নদীর শিলাময় দই। তটে স্তবকে স্তবকে সবাসভরা বনকুসম ফটে থাকত। — গিরি-সান দেশে থাকত ঘনসন্নিবিল্ট বাঁশবন—তবে এ বন আরও সন্দের হত। কলপলোক ছাড়া সে বন কোথায়-যেখানে এত সৌন্দয্যের একত্র সমাবেশ সম্পভব ? অন্ততঃ আমি তো দেখি নি। যদি কোথাও এমন থাকে ভারতবষের মধ্যে। তবে আমার সন্দেহ হয় তা আছে বা থাকা সম্ভব গোদাবরী তীরের অরণ্যে, রাজমহেন্দ্রী থেকে গোদাবরীর উজান পথে গিয়ে উতকামন্দ ও কোদাইকানাল অঞ্চলে। মহীশহর ও ত্রিবাঙ্কুরের রিজাভা ফরেসেন্ট, হিমালয়ের নিম্পন অধিত্যকায়, আসামের বনে। যদিও এদেশের প্রকৃতি সম্পবন্ধে আমি যা কলপনা করচি, তা আছে কিনা সে বিষয়ে আমার যথেস্ট সন্দেহ। আজি মনে বডি আনন্দ ছিল। জগো আর গোপালকে সঙ্গে নিয়ে বন-ফলের সবাসভরা বনপথ দিয়ে বেলেডাঙার আইনদিদ মন্ডলের বাডি গেলাম। আসীনােদ যত্ন করে বসালে—ও নিজে কত গ্রামে পরিচিত। সে গলপ কবলে। বহর পী সেজেছি বাপ, কাটামন্ডুর খেলা খেলোঁচ-নাগরদোলা ঘারিয়োঁচা।” SS