পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না, কিন্তু এখানে নানা কারণে কাজ করা সম্পভব হয়ে উঠচে না-প্রথম কথা, সঙ্গে বই নেই-আমার নোটবইগলো নেই। এমন কি লেখবার উপযক্ত খাতা বা কাগজপত্র পৰ্যন্ত বেশী আনে নি। বই ভিন্ন আমি থাকতে পারি নে। বই উপযক্ত সংখ্যায় না। আনা একটা বড় ভুল হয়ে গিয়েচে। এ ছটিতে। এমন ভুল আর কখনো হবে না। দটো ছোট গলপ লিখেচি—এবারকার পজোতে তার বেশী কিছ হল না। আমাদের পাড়ার সবাই কাল সকালে সাত-ভেয়ে কালীতলায় যাবে। অভিলাষের নৌকো বলে ওই পথে আমনি সইমাদের রান্নাঘরে গিয়ে বসলাম। কতকাল পরে যে ওদের রান্নাঘরে গেলাম! নলিনীদিদি যত্ন করে বসালে-চা আর খাবার দিলে, তারপর কতকালের এ গলপ ও গলপ, কত ছেলেবেলার কথা, নলিনীদের বিয়ের সময়কার ঘটনা। ওর স্বামী উত্তম আফ্রিকায় ছিলেন সে সব গলপ । সোনার মেয়ে হয়েচে, কি সন্দির টকটকে মেয়েটি, কি চমৎকার মািখখানি, বছর দই বয়েস হবে। আমায় দেখে কেমন ভয় পেলে, কিছতেই আমার কোলে আসতে চাইলে না। টোপিদিদিকে দেখলাম আজ সকালে বছর পনেরো পরে। একেবারে বাড়ী হয়ে গিয়েচে । সেই ফস রঙ, সন্দর চোখমখের আর কিছ নেই। মানষের চেহারা এত বদলেও যায় কালে ! যা হোক, ষোল বছর পরে যে ওরা আবার দেশে এসেচে এই একটা বড় আনন্দের বিষয়। আমাদের গ্রামের প্রকৃতি অদভুত, কিন্তু মানষগলো বড় খারাপ। পরস্পর ঝগড়াদবিন্দৰ, ঈষা, পারিবারিক কলহ, জ্ঞাতিবিরোধ, সন্দেহ, কুসংস্কার এতে একেবারে ভাবে আছে। লেখাপড়া বা সৎচচ্চার বালাই নেই কারো। AEschylus-এর কথায় ৪ "They live like silly ants In hollow caves unsunned To them comes no Sun, no moon, No Stars, music, no spring Flower perfume.” আজ সকালে আমরা নৌকোয় সাত-ভেয়ে কালীতলায় গেলাম। পথে চালাতেপোতার বাঁকে কত রকমের ফল যে ফটেচে—সেই আর বছরের কুচো কুচো হল দে ফালগলি, নীল ঘাসের একরকম ফল, কলমীর ফল—সকলের চেয়ে বেশী ফটেচে তিৎপল্লার ফল, যে ঝোপের মাথা দেখি—সব্বত্র আলো করে রয়েচে ওই ফলে। বেলা একটার সময় কালীতলায় গিয়ে পৌছনো গেল। তারপর আমরা গেলাম রেলের পলে বেড়াতে। বটতলায় রান্না করে খাওয়া হোল। ক্ষদা। ছটে গেল আমাদের সঙ্গে রেলের রাসাতায়। আমরা পরোনো বনগাঁয়ের দিকে যাচ্চি—রামপদ সাইকেল নিয়ে এসে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেল। খাবার পরে আবার একটি রেল লাইনে বেড়িয়ে সন্ধ্যার সময়’নৌকোয় উঠে নৌকো ছাড়ি। পথে কত কি গলপ করতে করতে চমৎকার জ্যোৎস্না রাত্রির মায়া যেন আমাদের পেয়ে বসল। যখন চালতেপোতার বাঁকে এসোঁচি, তখন নিস্তব্ধ নিজজন সাগন্ধ বনের চরে কাটা চাঁদের শিশির-পান্ডর জ্যোৎস্না ও নক্ষত্ৰলোকের শোভা যেন সমস্ত নদী ও বনকে মায়াময় করেচে। মনে হোল। চাঁদডোবা অন্ধকারের মধ্যে আমাদের ঘাটে এসে নৌকা লাগল। তবও মনে হয়। এ সব জায়গায় বারো মাস আসা আমাদের মত লোকের চলে না। { কারণ জীবন নদীয় স্রোতধারা এখানে মন্দ গতিতে প্রবহমান-সক্রিয় , উন্নতিশীল, বেগবান জীবন এখানে অজ্ঞাত। বন্ধ জলে পানা-শেওলা জমে, জলকে শীঘ্র দাষিত করে ফেলে। যে চায় জীবনকে পরিপািণ ভাবে ভোগ করতে, যাকে তার উপযক্তি দিনলিপি ৪/উমিমাখর-২