পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

থেকে আর একটা খাল-সারা রাত্রিই চলচে নৌকো। রাত এগারটায় সময় ইসলামকাটি বলে একটা বাজারে নৌকো থামিয়ে মাঝিরা খেতে গেল। বরিশালের মাঝিদের কথা ভালো বঝিনে। আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম, কত দেরি হবে রে রোধে খেতে ? ওরা কি একটা বললে, আমি ধরে নিলাম দি ঘণ্টা দেরি হবে। অন্ধকার রাত, আমি নৌকো থেকে নেমে ইসলামিকাটির বাজারে বেড়াচ্চি, ক্ৰমে বাজারের পেছনের পথ দিয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলেচি। " আমার মনে তখন নতুন দেশ দেখার তাজা নেশা, যা দেখাচি তাই ভালো লাগে। পথের ধারের বন্য শাঁঠি ঝোপ, তাই যেন কি অপব্ব দশ্য! নতুন এক হিসেবে বটে, কারণ শাঁঠিগাছ আমাদের দেশে না থাকায় কখনো চোখে দেখিনি এর আগে। পজোর ষাঠী সেদিন, যে বন্ধর সঙ্গে কলেজে একত্রে পড়তুম সে আমায় বলেছিল, বরিশালে যদি যাও তবে আমাদের গ্রামে অবিশ্যি করে যেও পড়জোর সময়। উপলক্ষে যাওয়া। কখনো এদিকে আসিনি, বরিশাল জেলার নামই শনে এসেচি এতদিন-কতদাের এসে পড়েচি কলকাতা থেকে, কতদাের এসে পড়েচি নিজের গ্রাম থেকেজগতে এত আনন্দ ও এত বিস্ময়ও আছে! কে কবে ভেবেছিল একদিন আবার ইসলােমকাটি বলে একটা বহকেদর অজ্ঞাত সথানে বনো শাঁঠিগাছের ঝোপ দেখবো। রাত্ৰিবেলা! বন্ধর বাড়ি গিয়ে পৌছাই সকালবেলা। সে গ্রাম আমার ভালো লাগেনি-ছোট কন্দামান্ত খাল বাড়ির সামনে, তার আবার বাঁধা ঘাট, আমাদের দেশের নদীর সৌন্দয্য অন্য ধরনের এবং এর চেয়ে কত ভালো কেবল সেই কথা মনে হচ্ছিল। 'গ্রামের লোকের কথা ভালো বঝতে পারিনে-কথার উচ্চারণের মধ্যে মিন্টত্ব ও সরলতা আদৌ নেই, কতকগালি স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ-রীতি কৰ্ণকে পীড়া দেয়। এ রকম আমার মনে হবার একটি কারণ, সেই আমার প্রথম পািব্ববঙ্গে যাওয়া— তখন আমি ওখানকার গ্রাম্যকথা শািনতে মোটেই অভ্যস্ত ছিলাম না—এখন কানে অনেকটা সয়ে গিয়েচে। একটি ব্রাহ্মণ-বাড়িতে পড়জোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলাম বন্ধর সঙ্গে। আমাদের অঞ্চলে শহরের টানে ক্ৰিয়াকম্পেমর খাওয়ানো ব্যাপারে যে সব শৌখিনতা ও বিলাসিতা এসে পড়েচে, বরিশাল জেলায় একটি সদর পল্লীগ্রামে সে সব থাকবার কথা নয়, সন্দেশ রসগোল্লার পরিবত্তে তাই এখানে নারিকেলের নাড় আর পক্কান্ন মেঠাই দিলেও নিন্দা হয় না। আর একটি জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম। ওখানে, প্রায় সকলেই ছাঁদা নিয়ে যায় এবং যেতে অভ্যস্ত, তাতে কোন সঙ্কোচ নেই কারোপ্রায় প্রত্যেকেই বসে যে পরিমাণ খেলে, সেই পরিমাণ মেঠাই নাড়া গামছায় কি চাদরে বোধে নিয়ে এল। আমাদের দেশে এ প্রথা আগে যথেস্ট প্রচলিত ছিল, এখন আর কেউ ছাঁদা বাঁধে না— শহরের টানে এ প্রথা একেবারে উঠে গিয়েচে । পর্ণিমার রাত্রে আবার খালপথে ওখান থেকে এলাম বরিশালে—সারারাত্রি জ্যোৎস্নালোকিত মাঠ, তারা আর শাঁঠর বনের শোভা দেখতে দেখতে ফিরলাম। ঝালকাঠি বলে একটা বড় গঞ্জ আছে বরিশাল জেলার মধ্যে। এখান থেকে একটা স্টীমার ফ্রেজারগঞ্জ পৰ্যন্ত যায় সন্দেরবনের মধ্যে দিয়ে। আমার যাওয়ার কথা ছিল মরেলগঞ্জ। অনেকে বললে ওখানে সন্দিরবনের অনেকখানিই দেখা যাবে। ঝালকাঠিতে এলাম সেই উদ্দেশ্যে। বরিশাল অঞ্চলে এমন জায়গাকে বলে বন্দর। বাংলাদেশের গািহ-পথাপত্য কোনো কালেই ভালো নয় বলে আমার ধারণা, NoO