পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাকুল দেখা দিয়েচে, সজনে ফলের মিণ্টি গন্ধ বেরুচ্ছে, দ-একটা কোকিলও ডাকচে । ক্ৰমে দর থেকে লোকজনের কলরব শোনা গেল। দ-একটা দোকান বসেছে অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কাছে গিয়ে দেখলাম। একটা নীচ, পাচিলে ঘেরা বাগানবাড়িমত জায়গায় অনেকগলি মেয়ের ভিড়-প্রায় চার পাঁচ শো মেয়ে। পরিষ তত বেশী নয়, সবাই মহা ব্যস্ত, ইতস্ততঃ ছটোছটি করচে, ছেলেমেয়ে কাঁদচে, চীৎকার করচে। বাগান বাড়িতে ঢকে দেখি ছোট্ট একটা একতলা বাড়ির সামনের উঠোনে গাছতলায় প্রায় দ-তিনশো মেয়ে ছেলেপলে নিয়ে শালপাতা পেতে বসে আছে। শািনলাম তারা খেতে বসেচে। কিন্তু আগের দল খিচড়ি সব খেয়ে সাবাড় করে দিয়েচে। খিচুড়ি চড়োচে, আবার না নামলে এদের খেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েরাই সেখানে কত্রী, তারাই সবাইকে দিচ্চে থাচ্চে, আদর-আহবান করচে, কাউকে বা শাসন করচে। একটা ছোট ঘরের মধ্যে সবাই ভিড় করে ঠাকুর দেখতে ঢকচে দেখে আমিও ঢকলাম। ছোট্ট কালী প্রতিমা, নাম সাশীলেশবরী। এক বন্ধ ভদ্রলোক বললেন, এখানে একজন বাদ্ধা থাকেন, তিনিই এই মন্দির প্রতিস্ঠা করেচেন। একটা পরে সেই বাদ্ধাকেও দেখলাম, সবাই তাঁর পায়ের ধলো নিয়ে প্ৰণাম করচে। আর তিনি সবাইকে মিনিট কথায় বলচোন। —না খেয়ে যেও না যেন বাবা। একটা ইট বাঁধানো চৌবাচ্চায় খিচুড়ি ঢালা হচ্চে, পাশেই আর একটা চৌবাচ্চায় কপির তরকারি। সকাল সকাল খাবার জন্যে সবাই উমেদারী করচে। --অনেক দীর যাব, মেয়েছেলে নিয়ে এসেচি, ভাড়াটে গাড়ি, প্রসাদ দিয়ে দিন। আমাকে একটা ঘরে খাওয়াতে বসালে। আমার অত্যন্ত কৌতহল হোল এখানে কি খাওয়ায় না দেখে যাবো না। তাই একটি মেয়েকে বলতেই সে আমায় ঐ ঘরটায় নিয়ে একখানা পাতা কৃরে-বসিয়ে দিলে। ঘরের মধ্যে আমার বসবার আসনের কাছেই আর একটি বাইশ-তেইশ বছরের মেয়ে বসে খাচ্ছে আর তার ছোট ছোট দটি ছেলেমেয়েকে খিচুড়ি মাখে তুলে খাওয়াচ্চে। যে মেয়েটি আমায় পাতা করে বসিয়ে দিয়েছিল। সে কোথায় চলে গেল। আর একজন আমায় পরিবেশন করলে। খিচড়ি, চচ্চড়ি, আলর দম, কপির তরকারি, বেগােন ভাজা, চাটনি, পায়েস, দই, মড়কী ও রসগোল্লা। তা খাব দিলে, পাতে ঘি দিলে। এটা নেবে, ওটা নেবে- জিজ্ঞেস করে খাওয়ালে। কেমন যত্ন করলে যেন বাড়ির ছেলের মত, অথচ আমাকে তারা জীবনে এই প্রথম দেখলে। মেয়েদের এই একটা গণ, খাওয়াতে মাখাতে যত্ন করতে ওদের জড়ি মেলে না। খাওয়া শেষ হোল, আর একটি মেয়ে আবার সাজা পান দিলে। এমন মচ্ছাবের খাওয়ায় যেখানে রবাহত অনাহত কত আসচে। যাচ্চে তার ঠিকানা নেই, এখানে কে আবার খাওয়ার পরে পান দেয়া! এ আমি এই প্রথম দেখলাম। দেখে কন্ট হোল আমি যখন খাওয়া শেষ করে বাইরে এলাম, তখন সেই অলপ বয়সের বন্ধটি রোয়াকের সামনে পাতা পেতে বসে আছে—তখনও তাঁদের কেউ খেতে দেয় নি। এদের জিনিসপত্র বেশী। কিন্তু লোক কম। খাওয়ার সময়ে পরিবেশনকারিণী মেয়েরা বলাবলি কছিল—আর পারি। নে বাপ। সকাল থেকে খাটচি, আর রাত বারোটা পয্যন্ত কত খাটি ? আসচে বছর আর এখানে আসা চলবে না দেখচি। ওখান থেকে বার হয়ে একটা বাঁশবনের মধ্যের পথ ধরে অনেকটা হোটে গেলাম, বেলা পড়ে এসেচে, বাঁশবনে বেশ ঘন ছায়া, এক জায়গায় সাতটা ভাঙা শিব মন্দির সারি সারি, অনেকগলো শিমল গাছ। ফলে ফলে রাঙা। বড় মাঠে বসে খানিকটা বিশ্রাম করলাম--তারপর এসে ট্রাম ধরে চৌরঙ্গির মোড়ে নামলিম। সেন্ট্রাল এভিনিউ। ২৯