পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিয়ে হেটে সন্ধীরবাবর দোকানে এসে ভাবলাম সরোজকে গল্পটা করব, দেখি সরোজ বেরিয়ে গিয়েচে । কি একটা অবর্ণনীয় আনন্দ পয়েছি আজি! অথচ কেন যে সে ধরনের আনন্দ এল, এর কোন কারণ খাঁজে পাই নে। নীরদবাবার বাড়ি যখন বসে আছি, ত এটা প্রথম অনভব করলাম, কিন্তু তখনই পাশপাতিবাব ফোন করলেন এখনি আসন ইউনিভাসিটি ইনস্টিটিউটে প্রমথ বিশীর নাটক হচ্ছে। নীরদ যেতে পারলে না, আমি মিসেস দাসগঞ্জকে নিয়ে ওদের মোটরে ইনস্টিটিউটে এলাম। সেখানে পরিমল গোস্বামী, প্রমথ বিশী এরা সবাই হাজির। পরিমল বললে, আপনার দটিপ্ৰদীপ’ পড়েচি, কাল রাত্রে। বড় ভাল লেগেচে। আরও গল্পগজব চলল। আমি গিয়ে বৌঠাকরনের সঙ্গে দেখা করে এলাম। তারপর ওখান থেকে পাক সাকাসে মণীন্দ্র বসার বাড়িতে চা-পাটিতে এলাম, কারণ সেখানে জ্যোৎস্নার বিবাহের কথা হবে অন্নদাশঙ্করের আত্মীয়ের সঙ্গে এবং আমিই তার ঘটক। পাক সাকাসের বাসা থেকে নেমে যখন মণীন্দ্র বসার বাড়ি যাচ্ছি, তখন ছিন্নভিন্ন বাদলা মেঘের অন্তরালে প্রতিপদের চাঁদ উঠেচে, সে যে কি এক সৌন্দয্যভরা ছবি, না দেখলে বোঝানো যাবে না। তখনই আমার বিহারের জঙ্গলের ও তার হতভাগ্য দরিদ্র নরনারীদের কথা কি জানি হঠাৎ মনে পড়ল, তাদের মধ্যে ছ-বছর থেকেচি, তাদের সব অবস্থাতে দেখেছি, জানি। আর সেই নিজজন বনানী ! রাত্রে পরিপণ জ্যোৎসনা উঠেচে যখন বিছানাতে এসে শ্যই ; মণীন্দ্ৰবাবর বাড়িতে চার রায়, সরেন্দ্র মৈত্র এদের সঙ্গে Spiritualism নিয়ে ঘোর বাদানবোদ করে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েচি। তারপর হিমালয়ের শঙগরাজি ও গঙ্গার উৎপত্তিস্থান সম্পবন্ধে আর একপােলা বাদানবোদ। আজ ট্রামে স্কুল থেকে গেলাম। গঙ্গার ধারে। গিরিজাপ্রসন্ন সেনের কবিরাজি "ডিসপেনসারির মধ্যে অয়েল-পেন্টিংখানা ঠিক সেই জায়গাটিতে আছে—বাবার সঙ্গে কতবার ভগবতীপ্ৰসন্ন কবিরাজের কাছে আসতুম। বাড়িটা সেইরকমই আছে, তবে খব পারোনো হয়ে পড়েচে। ভাবলাম আজ এই যে এই ঘরে ঢািকলাম, জীবনে যা কিছ সব হয়েচে, সেবার এই ঘর থেকে বার হবার ও এবার পনরায় ঢাকবার মধ্যে, সেই যে ছেলেবেলায় কিশোর কাকা সত্যনারায়ণের পথি পড়তেন তাও...যােগাল কাকাদের ঢেকিশেলে আমি, ভরত, নেড়া বাদলার দিনে খেলা করতাম তাও, বাবার সঙ্গে আমি হ'কোর দোকানে বসে লাচি খেয়েছিলাম তাও, প্রথম যেদিন ধানবনের মধ্য দিয়ে সঙ্কুলে ভত্তি হতে যাই বনগাঁয়ে তাও, সব কিছ—সব কিছ, কত কথা মনে হোল, সারা জীবনটা যেন এক চমকে দেখতে পেলাম গঙ্গাপ্রসাদ সেনের বড় অয়েল পেন্টিংটার **८, ८ ।। তারপর গিরিজাবাবার সঙ্গে ওদের বৈঠকখানায় অনেকক্ষণ বসে গলপ করি। কত পরোনো আমলের ছবি টাঙানো, যে সব ছবি আর এখন মেলে না। উঠোনের সেই জায়গাটি যেখানে বসে বাল্যে একদিন মধ্যছন্দার অভিনয় দেখেছিলাম ভূষণ দাসের যাত্রার দলে, সব সেই রকমই আছে। তবে যেন বড় পরোনো হয়ে গিয়েচে। বারাকপরে শৈশবে যাপিত কত রাঙা সন্ধ্যা, পাখীর ডাক ও মায়ের মখ মনে পড়ল-বাড়ির পিছনে বাঁশবনের কত দিনের ছায়াগহন, রাঙা রোদ গাছের মাথায় মাখানো সন্ধ্যা। যে সন্ধ্যা, যে শৈশব, যে বারাকপর আর কখনও ফিরে আসবে না। আমার জীবনে। V)O