পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ওখান থেকে বার হয়ে গঙ্গার ধারে বাঁধানো ঘাটের পৈঠায় অনেকক্ষণ বসে রইলাম। কালোর বৌভাতে শনিবার বাড়ি গিয়েছিলাম। দাপরে খয়রামারির মাঠে যেমন বেড়াতে যাই—গিয়েচি। একটি ঝোপের ধারে বৈচি গাছে কচি পাতা গজিয়েছে, মাথার ওপর নীল আকাশ, কী ঘন নীল, বাতাসে যেন সঞ্জীবনী মন্ত্র, মাঠের সববািন্ত্র ছড়ানো শিমল গাছ। ফলে রাঙা হয়ে রয়েচে। ট্রেনে আসতে কাল শনিবারে রাঙা শিমল। ফলের শোভা মগধ হয়ে শােধ চেয়ে চেয়ে দেখোঁচি, মনে মনে ভাবি প্রতি বছর দেখচি আজি চল্লিশ বছর। কিন্তু এরা তো পরোনো হোল না, কেন পরোনো হোল না-কেন প্রতি বৎসর শিরায় শিরায় আনন্দের স্রোত বইয়ে দেয়, তা কে বলবে : গত শব্ৰুবারে আবার বসিরহাট গিয়েছিলাম। মাঠে মাঠে শিমল গাছগালি রাঙা হয়ে উঠেচে। ফলে ফলে, বৈচি ফল ফটেচে বাঁশবনের শকিনো ঝরা লতার মধ্যে, বাতাবী লেব, ফলের গন্ধও মাঝে মাঝে পাচ্চি। বসিরহাটে নােমলােম বিকেলবেলা, প্ৰসাদের সঙ্গে বাঁধানো জেটির ঘাটে গিয়ে বসে রাঙা রোদ মাখানো ইছামতীর ওপারের দশ্যটি দেখলাম। এই সন্থানটিতে দাঁড়িয়ে একদিন গৌরী বলেছিল--'গাড়িতে কেমন কলের গান হচ্চিল, শনছিলাম মজা করে’। সে কথাটি বললাম প্ৰসাদকে। রাত্রে অনেকক্ষণ পৰ্যন্ত দিদির সঙ্গে গলপ করলাম। পরদিন সকালে অর্থাৎ শনিবার কবি ভুজঙ্গভূষণ রায় চৌধরিীর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। বয়স চৌষট্টি-পয়ষট্টি বছর হয়েচে, কিন্তু মাথায় একটা চলও পাকে নি, আমায় দখানা বই দিলেন, চা খাওয়ালেন। গীতার কাব্যানবাদ করচেন পড়ে শোনালেন, বেশ লোক। এই দিন বিকেলের ট্রেনে ফিরলাম। কলকাতায়, ওপথে গাছপালার সৌন্দয্য তেমন নয়। একটি মেয়ে ট্রেনে কেমন গান করে শোনালে। সন্ধ্যার সময় নীরদবাবার বাড়িতে সাহিত্য সেবক সমিতির অধিবেশনে যেতে যেতে নিজজন অকল্যান্ড স্কোয়ারে বসে কি অপািকব আনন্দ-পেলাম, দী-একটা নক্ষত্রের দিকে চেয়ে। এ আমার অতি সপরিচিত পরাতন আনন্দ। ছেলেবেলা থেকে পেয়ে আসচি, এতে অবিশ্যি আশচয্যের কথা কিছ নেই। অনেকে আমার এ আনন্দটা বোঝে না, কিন্তু তাতে কিই বা যায় আসে -আনন্দের উপলবিধটকু তো আর মিথ্যে নয়। বাইরে কোথাও ভ্রমণের একটা পিপাসা আবার জেগে উঠেচে। ভাবচি আফ্রিকা যাব, শম্প্ৰভু আজ এসেছিল, সে বললে, তার কে একজন আত্মীয় ম্যাকিনন ম্যাকেঞ্জী আপিসে কাজ করে, তারই সাহায্যে যদি কিছ হয় দেখবে ও চেন্টা করে। আজ সারাদিন স্কুলেও ওই কথাই ভেবেচি, বেশীদার কোথাও যেতে চাই নে। কিন্তু জগতের খানিকটা অন্ততঃ দেখতে চাই। সেদিন P. E. N. Club-এ যে মধ্যাহ্ন ভোজ হোল বোটানিক্যাল গান্ডোনে-- সেখানে অমিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হোল। মেয়েটি খব। বদ্ধিমতী, অক্সফোর্ড থেকে এম-এ পাস করে এসেচে। পরের বহিস্পতিবার ইন্দের ছটিতে বাড়ি এলাম। আসার উদ্দেশ্য এই ফাগানে বাংলার বনে, মাঠে অজস্র ঘোঁটি ফল ফোটে—অনেকদিন ঘোটফলের মেলা দেখি নি, তাই দেখব। তাই আজ সকালে এঞ্জিনিয়ার ও সাবডেপটীবাবার সঙ্গে মোটরে বেড়াতে গেলাম চৌবেড়ে। সেখানে ওদের ইউনিয়ন বোডের এক কাজ ছিল, মিটিয়ে সবাই OS