পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলে যাওয়া হোল দীনবন্ধ মিত্রের বাড়ি। ভাঙা সকেলে পরোনো কোঠা, বট আশবথের গাছ গজিয়েছে—তাঁর জন্মস্থান দেখলাম—দীনবন্ধ মিত্রের এক জ্ঞাতি ভাইপো বাড়ির পিছনে একটা সজনেতলা দেখিয়ে বললেন—ঐ গাছতলায় তখনকার আমলে অাঁতুড় ঘর ছিল-ওইখানে দীনবন্ধ কাকা জন্মেছিলেন। আমি ও মনোরঞ্জনবােব সাকোল অফিসার সন্থানটিতে প্ৰণাম করলাম। তারপর ঘোটফলের বন দেখতে দেখতে মাঠে মাঠে অনেকগলো চাষীদের গ্রাম ঘরে বেড়ানো গেল—চৌবেড়ে, নহাটা, সনেকপার, দমদমা, মামদপাের ইত্যাদি। বেলা একটার সময় এলমে কালীপদ চক্রবত্তীর বাড়ি। সেখানে কালীপদ খাব খাতির করলে। ওখান থেকে বার হয়ে আমি নামলম চালকী। সেখানে খাওয়া-দাওয়া করলাম। চালকীর পিছনের মাঠে কি ঘোটবনের শোভা। দিদিদের বাড়ি বসে ঘটার বিয়ের বড়মানষি গলপ শািনলাম। সন্ধ্যার কিছ আগে বনগাঁয়ে গিয়ে খয়রামারির মাঠে ঘোটফলের বনের মধ্যে একটা শকিনো গাছের গাড়ির ওপব কতক্ষণ বসে রইলাম। দরে গাছের ফাঁকে চাঁদ উঠেচে-মাথার ওপর দ-চারটা তারা। মনের কি অপব্ব আনন্দ ! কাছে ছিল একখানা বই—বেদান্ত দর্শনের ব্যাখ্যা। সেখানে ঐ রকম সন্থানে ফটেন্ত ঘোটফলের বনের মধ্যে বসে পড়ে যেন একটা মস্যাণ অনভূতি নিয়ে ফিরলাম। ঘোষপাড়ার দোলে এলাম অনেকদিন পরে। আজ সকালে বনগাঁ থেকে ট্রেনে বার হয়ে রানাঘাটে সাড়ে দশটায় শান্তিপর লোকাল ধরলাম, দোলের মেলায় আসতে হোল বেলা সাড়ে বারোটা। ছোট মােসীমা খেয়েদেয়ে ওপরে শহয়ে ঘামিয়েছিলেন, আমি আসতে চা করে দিলেন। দাপরের রোদে বাঁশবাগান আমার বড় ভাল লাগে-- আর এই সব বাঁশ বনের সঙ্গে আমার আশৈশব সম্পবিন্ধ। বিকেলে একটা ঘামিয়ে উঠে দোতলায় গিয়ে একটি বড় সাংঘাতিক ঘটনা চোখের ওপর ঘটতে দেখলাম। একজন গন্ডা। জনৈক যাত্রীর পকেট কেটেছিল, পাশেই ছিল একজন হিন্দ স্থানী ভলণ্টিয়ার, সে যেমন ধরতে গিয়েচে, আর গন্ডাটি ওকে মেরে দিয়েচে ছরি। আমি যখন গেলাম, তখন আহত লোকটাকে ওদের তাঁবতে এনে শাইয়েচে, খাব লোকের ভড়। একটা পরেই সে মারা গেল। ওদিকে সেই গন্ডাটিকেও পলিসে ধরে ফেলেচে তাকে লোকে মেরে আধমরা করেছে। মেলাসন্ধ লোক সন্ত্রসস্ত—সবাই বলচে, এমন কান্ড কেউ কখনও এমন সথানে ঘটতে দেখে নি! আমি আরও খানিকটা এদিক ওদিক ঘরে ফিরে চলে এলাম। রায়বাড়ির পাশের একটা ঘন বনের মধ্যের পথ দিয়ে ঢাকে একটা শকিনো পকুরের পাড়ে ঘাসের ওপর গিয়ে বসলাম। ফিরে যখন আসচি। তখন একটা শিমল গাছের বাঁকা ডালপালার পেছনে পাণচন্দ্র উঠচে—স্থানটি আফ্রিকা হতে পারতো, কি নিজজন, আর কি ভীষণ জঙ্গল-বাংলাদেশের গ্রামে এমন জঙ্গল আছে, না দেখলে কেউ বিশ্ববাস করবে ? কি মহিমময় দশ্য সেই উদীয়মান পণচন্দ্রের, সেই ঘন জঙ্গলের মধ্যে, অাঁকাবাঁকা শিমল গাছের ফাঁকে। আজ আমার ঘোষপাড়ার দোলে বেড়াতে আসা সাৰ্থক হোল মনে হচ্চে শধ্যে এই দশ্যটা দেখবার সহযোগ পেলাম বলে। সেদিনের সেই খয়রামারির মাঠে শকিনো ডালের ওপর বসে থাকা ঘোটবনের মধ্যে, আর আজকাল কামারপাকুরের পাড়ের জঙ্গলে এই পাণচন্দ্রের উদয়-এবারের দোলের ছটির মধ্যে এই দটাে ঘটনা জীবনের অনেক মাল্যবান অভিজ্ঞতার মধ্যে আসন পেতে পারে। তারপর মােসীমা ছাদে বসে চা করে দিলেন, লাচি ভাজলেন, আমি কাছে বসে গলাপ করলাম। অনেকদিন আগের কথা তুললেন, আমি গৌরী, মণি ও মােসীমা ছাদে বসে S