পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছ-বছর পরে খন্দদের ওখান থেকে বেড়িয়ে এসে দােপর বেলাতে মনে বেশ আনন্দ হোল, কারণ পথে পথে নতুন-পাতা-ওঠা গাছ, কোকিলের ডাক। রাত দশটার পরে জ্যোৎস্না উঠেচে, চেয়ার পেতে বাইরে বসে দেখি আর ভাবি, কাল ঠিক জ্যোৎস্না উঠতে দেখে মণি আমার সঙ্গে তক করলে যে এটা নাকি শক্লেপক্ষ-ওদর বাড়ির ছাদে। তারপর, তিন আর আমি খয়রামারির মাঠে গেলাম বেড়াতে। বেশ জ্যোৎস্না উঠেচে-পথে ঝোপেবাড়ে কত কি ফলের সিগন্ধ। এই গ্ৰীস্মকালে বনঝোপে রাত্রে নানারকম বনফল ফোটে—তার মধ্যে বনমল্লিকা বেশী। মনে এমন একটা অদভুত আনন্দ ও উত্তেজনা আসে যে মনে হয় খয়রামারির মাঠেই সারারাত বসে থাকি। খকুর কথা ও রেণির কথা যত মনে হয়। আর তত আনন্দ বেশী পাই। মাথার ওপরে কেমন নক্ষত্রে উঠেচে, এই জ্যোৎসনারাত্রে সারা বিশেবর কেন্দ্রস্থলে যে প্রীতি ও ভালবাসা উৎসারিত হচ্চে, পবিত্র প্রাণের অবলম্পবনে তারা আমার জন্যে, তোমার জন্যে, সেই প্রীতি ভালবাসার কিছ- অংশ homely ভাবে পরিবেশন করবে। কাতরাত্রে ফিরে এলাম, তবও ঘািম আসে না। একে গরম, তাতে আনন্দের উচ্ছবাস মনের মধ্যে, কি করে ঘমোই ? জীবনে আজকাল বড় বেশী আনন্দ পাচ্চি, খানিকটা প্রকৃতি থেকে, খানিকটা মানষের সঙ্গে মানষের সম্পক থেকে। নৌকা করে সকালে বারাকপরে যাচ্চি। এ সময়টা আর কখনও ইছামতীতে নৌকো করে যাই নি, বর্ষাকালের চেয়ে প্রকৃতি এখন আরও সবজি-—সত্যিই আরও সবােজ। গাছে গাছে নতুন শোভা। চারিদিকে পাখী ডাকচে পিড়িং পিড়িং, কোকিল ডাকিচে, ঠ্যাং উচ করে বকগলি শেওলার দামে বসে আছে--শিমল গাছগালোর রােপ কি অদ্ভূত ! শিমল ষাঁড়া আর বাবলা গাছে নদীর শোভা বাড়িয়েচে । আমি বসে কাগজ দেখাঁচি মেয়েদের, প্রায়ই সব পাস করিয়ে দিচ্চি—মেয়েদের ফেল করাতে মন সরে না—আর রেণির কথা ভাবচি, কাল খাদ্য বলেছিল বিকেলে—“আপনার সঙ্গে কথা বলে যেমন অদ্ভূত আনন্দ পাই, এমন আর কারও সঙ্গে কথা বলে পাই নে সেই কথা ভাবচি। খােদ কাল যেতে বলে দিয়েচে কিন্তু আজ রাত্রেই আমি যাব চলে, সতরাং কাল কি করে তার সঙ্গে আর দেখা করব ? এ ক-দিনই কি অদভুত আনন্দে কাটচে। আমাদের ঘাটে গিয়ে নৌকো লাগল। এবার বন জঙ্গল কেটে দেশের শোভা অনেকটা নষ্ট করে ফেলেচে। দর্পাের হয়ে গিয়েছিল, আমি কুঠীর মাঠের দিকে একটা ঘোড়াতে গেলাম। --পাটি দিদিদের বাডি ব্যাগ রেখেই। বাঁশবনে পাতা পড়িয়েচেচারিদিক যেন ফাঁকা ফাঁকা দেখাচ্ছে। সনান করতে গেলাম। ঘাটে, সেই বননিমের ঝাড় দাঁড়িয়ে আছে, খড়কু আর আমি সেই ঘাটে নাইতে আসতাম, খারক ওর তলায় দাঁড়িয়ে থাকত—মনে হোল যেন কত কাল হয়ে গেল। খেয়ে বিশ্রাম করে চড়কতলায় গেলাম। উমা এসেচে। অনেকদিন পরে, তার সঙেগ দেখা করতে গেলাম। মণিকন্তলার পত্রখানা ও আবার দেখলে। চড়কতলায় এসে কতযাগ পরে কাদামাটি দেখি। সোনা, নলিনীদির মেয়ে তাকেও দেখলাম কতকাল পরে। পাগলা জেলে সন্ন্যাসী সেজেচে, ওকে কত ছোট দেখোঁচ। অজয় মন্ডল বড় বড়ো হয়ে গিয়েচে । সে জিজ্ঞেস করলে আমার বাড়ির কথা, আমার ভাই কেমন আছে। চালতেপোতার বাঁধ দিয়ে যেতে-মোতে এখন এই অংশটা লিখচি। কি অপবােব গাছপালার শোভা—বারাকপরের পলে—আর এই চালতেপোতার পালে। নদীর জলের ও হাকরা বনের এই যে সগন্ধ এটা আমাদের ইছামতীর নিজস্ব। এবার গড OG