পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলে বরিশালের একটা বন্দরে সন্টীমার লাগলো। পরের দিন সকালে। এই ভোলার নামও করতো আমাদের গ্রামের নেপাল মাঝি। কি দঃসাহসিক লোকই ছিলো, ধনপতি সদাগর কি ভাস্কো-ডা-গামা জাতীয় লোক ছিল আমাদের নেপাল, ছেলেবেলায় কি তাকে ভালো করে চিনতাম ? কোথায় আমাদের সেই ছোট্ট নদী, নদীতীরে বাঁশবনে ছায়া, কুচলতার ঝোপটি—আর কোথায় সাত সমদ্র তেরো নদী পারের বন্দর ভোলা ! দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যার সময় সন্দ্বীপের উপকালে সন্টীমার গিয়ে নোঙর করলে আর সন্টীমার থেকে সব লোক নেবে চলে গেল—এমন কি খালাসীগলো পয্যন্ত নেমে গেল। সন্দ্বীপের উপকালে এই সন্ধ্যাটি আমার চিরদিন মনে থাকবে। আমার একদিকে বঙ্গোপসাগর, তার কালকিনারা নেই-আসলে যদিও এটা সন্দ্বীপের খড়ি, ঠিক বহিঃসমদ্র নয়, কিন্তু দস্টি যখন কোথাও বাধে না, তখন আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে সমদ্রের যে রােপ ফটে উঠেচে তার সঙ্গে কি বঙ্গোপসাগর, কি ভারত মহাসমািদ্র-কারো কোনো তফাতই নেই। আদরের তীরভূমি অপব্ব সদর, তাল আর নারকেল সপোরির বনে ঘন সবজি। সন্ধ্যায় যখন সবাই নেমে গেল, আমি সন্টীমারে একেবারে একা চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলম শেষ বৈকালের ক্রমবিলীয়মান রৌদ্র পীত থেকে স্বৰ্ণাভ, ক্ৰমে রাঙা হয়ে কি ভাবে তালীবনরেখার শীষ দেশে উঠে গেল, আকাশ কি ভাবে পাটকিলে, তারপর ধন্সর, ক্ৰমে অন্ধকার হয়ে এল। অনেক দিন আগের সেই সন্ধ্যায় যে সব কথা আমার মনে এসেছিল-তা আমার আজও মন থেকে মছে যায়নি, সন্দ্বীপের সমদ্র-উপকালে বহ,বৰ্ষ আগেকার সেই সন্ধ্যাটির ছবি মনে এলে, কথাগালোও কেমন করে। মনে পড়ে যায়। পরদিন খাব ভোরে সন্টীমার ছাড়লো। চট্টগ্রামের যাত্রীদল শেষরাত্রে ডিঙি করে এসে সন্টীমারে উঠলো-তাদের হৈ-চৈ আর গোলমালো ঘাম ভেঙে গেল। ডেকে ভিড় জমে গেল খােব, তার ওপর বস্তা বস্তা শটকি মাছ এসে জটলো, বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো মাছের দােগন্ধে। সকালে যখন সৰ্য্যোদয় হল, তার আগে থেকেই দক্ষিণদিকে কলরেখাবিহীন জলরাশি, বামে নোয়াখালি আর চট্টগ্রামের ক্ষীণ তীররেখা, আর কিছদরে গিয়েই নীল শৈলমালা। সন্দ্বীপ চ্যানেল ছেড়ে সন্টীমার অলপ কয়েক ঘণ্টার জন্যে বার সমন্দ্রে পড়ল—তার পরেই কর্ণফলির মোহনায় ঢকে ডবল মরিংস এ নোঙর ফেললে। চট্টগ্রাম সন্দর শহর, তবে অত্যন্ত অপরিস্কার পল্লীও আছে শহরের মধ্যেই। একটি জিনিস লক্ষ্য করেচি, কলকাতার বাইরে সব শহরের এক মাত্তি। সেই সংকীর্ণ কেন জানিনে, এসব ছোট শহরে দিনকয়েক থাকলেই প্ৰাণ হাঁপিয়ে ওঠে-দীঘকাল এখানে যাপন করা এক রকম অসম্পভব। তবও চাটগাঁ বেশ সদশ্য শহর একথা স্বীকার করতেই হবে। শহরের মধ্যে অনেকগলি ছোট বড় পাহাড় ; এর যে কোনো পাহাড়, বিশেষ করে কাছারির পাহাড়ের ওপর উঠলে একদিকে সমদ্র ও অন্যদিকে বহন্দরে আরাকানের পক্বতমালার নীল সীমারেখা চোখে পড়ে। এখানে একটি পরিবারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ আলাপ হয়ে পড়েছিল। আমি সন্টীমার থেকে নেমেই এদের বাড়িতে গিয়ে উঠি। বাড়ির কত্তার নামে আমাদের সমিতির একখানা চিঠি ছিল। SC;