পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঁশবনে ঝড়ের কি শব্দ-আর সে কি দশ্য! প্রত্যেক গাছতলায় আমি পড়ে তলা বিছিয়ে আছে ঠিক যেন পিটলি ফলের মত, কিন্তু সন্ধ্যার অন্ধকারে আর এই ভয়ানক দিযোগ মাথায় জনপ্রাণী বাড়ির বার হয় নি। আমি যা পারলাম। কুড়িয়ে নিলাম কিন্তু কোন পাত্র সঙ্গে আনি নি, আম রাখি কিসে? মাঠের মধ্যে নদীর ধারে গিয়ে আর অগ্রসর হতে পারি নে। যে-দিকে যাব, সে-দিক থেকেই ঝড় উড়িয়ে আনছে বান্টির ধারা, ঠিক যেন বন্দকের ছররার বেগে। ধোঁয়ার মত বান্টির ঢেউ উড়ে চলেচে। গাছপালা, মাটিতে লাটিয়ে-লটিয়ে পড়েচে। ঝড়ের শব্দে কান পাতা যায় না। সে দশ্য আমাকে মগধ ও বিস্মিত করল। অনেকদিন প্রকৃতির এ রােপ দেখি নি, কেবল শান্ত সন্দের রােপই দেখে আসচি। তারপর মনে হোল আমিই বা কম কি ? এই ঝড়ের বেগ আমার নিজের মধ্যে আছে। আমি একদিন উড়ে যাব মক্তপক্ষে ওই বিদ্যুৎগভী মেঘপঞ্জের পাশ দিয়ে, ওই বিষম ঝটিকা ঝঞ্চাকে তুচ্ছ করে ওদের চেয়েও বহ গণ বেগে। আমি সামান্য হয়ে আছি—তাই সামান্য। এই কথাটা যখন ভাবি, তখন আমার মধ্যে যেন কেমন একটা নতুন শক্তির হয়। সে শক্তি কিন্তু বেশীক্ষণ সন্থায়ী হয় না, সেখানেই শেষ। কাল সাপ্রভার চিঠিখানা ডাকে ফেলে দিয়ে আজ সকালে বাগান-গাঁয়ে পিসিমার বাড়ি যাব বলে বেরিয়ে পড়েচি। আজ দিনটা সকাল থেকে মেঘ ও বন্টি, পথ হাঁটার পক্ষে উপযক্ত দিন, রোদ নেই, অথচ বটি খাব বেশীও হচ্চে না। ঠান্ডা জোলো হাওয়া বইচে। মাঝে মাঝে। কুঠীর মাঠে আসতেই আমাদের ঘাটের পথে শায়োখালী আমগাছে অনেকগলো আম পড়ল ঢবঢ়াব করে। গোটাকতক আমি কুড়িয়ে পথের ধারে বসেই খেলাম। কারণ যেতে হবে প্রায় তোর-চৌদ্দ মাইল পথ, কখন গিয়ে পৌছােব তার নেই ঠিকানা। কুঠীর মাঠ দিয়ে, বান্টি-ধোয়া বনঝোপের মধ্যে দিয়ে আসতে আসতে কি আনন্দই পেলাম। পথ হাঁটতে আমার বড় আনন্দ। এই যে বাড়ি থেকে বেরিয়েচি, পথে পথে অনিন্দিলন্ট গন্তব্য সস্থানের উদ্দেশ্যে চলেচি, এতেই আমার আনন্দ। কাঁচি-কাটার পল পার হয়ে একটা লতা-ঝোপওয়ালা সন্দর বাবলা গাছ ভেঙে পড়েচে রাস্তার ওপরে, এ রকম সন্দর গাছ ভাঙলে আমার বড় কষ্ট হয়। বড় বড় বট অশবখ গাছের ঘন ছায়া, পথের দ-ধারে বনো খেজর গাছে কাঁদি কাদি সবণবৰ্ণ খেজর দলচে, বউ-কথা-কও’ পাখী ডাকািচ-বাংলা দেশের রােপ যদি কেউ দেখতে চায়, তবে এই সব গ্রাম্য পথে যেন প্রথম বর্ষার দিনে পায়ে হোটে বহদির গ্রামের উদ্দেশ্যে যায়, তবেই সে বাংলাকে চিনবে, পাখী আর বনসম্পদ, তার পম্পরাজি, তার মেয়েদের দেখবে, চিনবে, ভালও বাসবে। আমি এই নেশাতেই প্রতি বৎসর এই সময় বেরিয়ে পড়ি। বাগানগাঁয়ের পথে বড় একটা বট গাছের তলায় বসে লিখচি। চারি ধারে মাঠ, বভিট পড়চে ঝর ঝর করে, বেলা কত হয়েচে মেঘে আন্দাজ করা যায় না, জোলো হাওয়ায় আউশের ভূই থেকে ধানের কচিজাওলার মদ সগন্ধ ভেসে আসচে, বট গাছের ডালে কত কি পাখী ডাকচে, মাঠের মধ্যে অসংখ্য খোেজর গাছ। চাষীরা ক্ষেতে নিড়েন দিচ্চে, তামাক খাচ্চে, নীল মেঘের কোলে বক উড়চে । কাঁচকাটা পল পার হয়ে খানিকটা এসেই একটা লোকের সঙ্গে আলাপ হোল । তার বয়েস ষাট-বাষটি হবে, রঙটা বেজায় কালো, হাতে একটা পেটিলা, কাঁধে ছাতি । আমি বললাম—কোথায় যাবে হে? সে বললে—আজ্ঞে দাদাবাব, ষাঁড়াপোতা ঠাকুরতলা SS -