পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি তখনও সেই অবাক ভাবে চেয়ে আছি দেখে বললে, দাদাবাব, যদিও আমরা ভটচায্যি কিন্তু আমার উপাধি পরটা। মানে এমন পরটা আর কেউ তৈরী করতে, পারতো না নদে-শান্তিপরের মধ্যে। পাঁচ সের ওজনের একখানা খাস্তা পরটাযেখানে ধরন খসে আসবে। আমার দোকান ছিল গ্রাম চাঁদপাড়ায়, দৈনিক দশ-বারো টাকা বিক্লি, পরটা, লাচি, আলীর দম, ডিম, মাংস। আমার দোকানে যে একবার খেয়েচে দাদাবাব, সে আপনাদের বাপ-মার আশীবাদে কখনো ভুলতো না। কলকাতা পৰ্য্যন্ত আমার নাম-ডাক। খ্যাঁদা মিত্তিরের বাড়ি রুশই করেচি এক হাত-বোড়ীতে পাঁচ বছর। তার গলপ তখনও ভাল করে শেষ হয় নি, একজন ডেকে বললে,--এই যে, বেয়াই মশাই যে। আসনে আসন, কি সৌভাগ্য আমার। নমস্কার, নমস্কার। হাজারী পরটা সিমতহাস্যে বললে—নমস্কার। তা আপনারা তো খোঁজ করবেন। না, মেয়েটা আছে পড়ে, বলি এই একবার-আচ্ছা দাদাবাব, আসন একটা পায়ের, ধলো নিই। বলেই লোকটা ঝাঁকে পড়ে আমার পায়ের ধলো নিয়ে বসলো। তারপর তার বেয়াই-এর দিকে চেয়ে বললে—দাদাবাবার সঙ্গে দেখা হয়েই বঝেচি উনি মহৎ লোক । ওঁর সঙ্গে জজবাবার বাড়িতে গিয়ে খাসা আম, উৎকৃষ্ট সন্দেশ, চা, কত কি খেলাম। কি আদর সেখানে ওঁর। শনেই তার বেয়াই আমায় বিনীত ভাবে অন্যুরোধ করতে লাগলো, সেখানে দাপরে থাকবার জন্যে। ভাবলে, জজ বাবরা যখন খাতির করেচে, তখন আমিই কোন ডেপটী কি অন্ততঃপক্ষে একজন পলিসেন্ন দারোগা না হব ? আমি আমার অক্ষমতা জানিয়ে বিদায় নিলাম। তারা সকলে যতক্ষণ আমাকে দেখতে পায়, আমার দিকে প্রশংসমান দন্টিতে চেয়ে রইল এবং আমার সম্পবন্ধে কি সব কথা বলাবলি করতে লাগলো। আমি বেরিয়ে এসে মাঠে পড়লাম। দ-ধারে আউশ ধানের ক্ষেত। একটা বহৎ জিউলি গাছের তলায় যখন পৌছেচি, তখন জোর বাৰ্লিট আসতে গাছের নিচে বসলাম। মাটি ভিজে গিয়েচে, আর প্রকান্ড ডালগলোর সব্বত্ৰেই আঠার ঝরি ঝালছে —অথচ কাল সাপ্রভার চিঠি আটবার জন্যে বারাকপরে একটা জিউলির আঠা খাজে পাই নি। কি সন্দির লাগছিল উন্মােন্ড মাঠের হাওয়া, দল-ধারে সবজি ধানের ক্ষেত, বিষাসনাত গাছপালার ঝোপঝাড়। একটা প্রকাশড বটগাছ মাঠের মধ্যে, তার তলায় অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করলাম বলিষ্ট না থামা পৰ্য্যন্ত। ট্যােঙরা সন্দরপর, কমলাপাের প্রভৃতি গ্রাম পার হয়ে একটা সন্দর জলাশয়ের তীরে এক প্রকান্ড বট গাছের তলায় কলের গান হচ্চে দেখে সেখানে গেলাম। অনেক গ্রাম্য লোক জড় হয়েচে । গ্রামবধরা ওপারের ঘাট থেকে গান শনিচে। জন-দাই পথ-চলতি লোক কলের গান নিয়ে যেতে যেতে এখানে বট গাছের তলায় শ্রান্তি দাির করবার জন্যে বসে কল বাজাচে। আমিও গিয়ে দটাে রেকর্ড বাজাতে বললাম। তারা আমায় খাতির করে বসালে, বিড়ি খেতে দিলে, রেকর্ডের বাক্স এগিয়ে দিয়ে বললে,—বলন বাব, কোন গান আপনার পছন্দ ! সামনের জলাশয়টা শািনলাম জামদার বাঁওড়ের আগড়। কি সন্দের যে তার দশ্য সেই বটতলা থেকে! বাঁওড় অর্থাৎ মজা নদী। তার ওপারে যতদর দটি ; যায় বড় বড় নিবিড় বাঁশবন জলের ওপর ঝাঁকে পড়েচে-পদ্মফল আর পদ্মপাতায় । জল দেখা যায় না, আরও ওদিকে শেওলা দাম বেধে গিয়েচে। আমি গান শনতে SgO)