পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিনতে সেই দিকে চেয়ে চেয়ে দেখি। মনে একটা অপৰিব মন্ডির সখি। বেলা সাড়ে দশটা কি এগারটা-কলকাতা হলে এতক্ষণ ছািটতে হোেত সবুকুলে। রাটিন বাঁধা জীবন স্বপন বলে মনে হচ্ছে এই সন্দের পল্লীগ্রামের পদ্মফলে ভরা জলাশয়ের তীরে প্রাচীন বটতলায় বসে। পিসিমার বাড়ি বেলা একটার সময় এসে পৌছে দেখি পিসিমা খেতে বসেচেন । আমিও সনান করে এসে খেয়ে নিয়ে একটা বিশ্রাম করলাম। পিসিমার ঘরটাতে কেমন একটা পরানো পরানো গন্ধ পাওয়া যায়। ১৩oo সালের পরে আর এঘরে নতুন পাঁজি আসে নি (১৩oo সালে পিসেমহাশয় মারা গিয়েছিলেন)। সেকালের গন্ধে, সেকালের আবহাওয়ায় ঘরটা ভিত্তি। কড়ির আলনা, সেকালের কাঁথা, কড়ির চাবাড়ি, কাঁঠাল কাঠের সিন্দক, গড়র মাত্তি বসানো পেতলের ঘণ্টা, বেতের প্যােটরা-যে সব জিনিস একালে কোনও বাড়িতে দেখা যায় না। একখানা কাশীদাসী মহাভারত আছে ১২৭৬ সালে ছাপা। অনেকক্ষণ ভয়ে ভয়ে সেই সব প্রাচীন দিনের বাতাসে নিঃশবাস প্রশবাস নিলাম, কত পরোনো দিনের কথা মনে হয়.যেদিন মেনকা পিসিমা আমার বাল্যে বাবার ওপর রাগ করে এখানে চলে এসেছিলেন...বাবা এসে একবার কথকতা করেছিলেন। বিকেলে হাটতলায় এক ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ হোল। ডাক্তারটি অত্যন্ত ‘দরবস্থাগ্রস্ত। একটা বাঁশের মাচায়। মলিন শয্যা, একখানা ভাঙা টেবিল, গোটা বিশপাঁচিশ শিশি, অন্যদিকে আর একটা মাচাতে এক বস্তা তামাক। একটখানি বসবার পরই তিনি নিজের দঃখের কাহিনী বলতে আরম্ভ করলেন। আজ চার মাস থেকে এখানে এক পয়সা রোজগার নেই। হাটখোলার মজিবর মিঞার দোকানে চালডাল ধার নিয়ে আজ চার-পাঁচ মাস চলচে। এদিকে বাড়িতে মেয়ের বিয়ের দিন স্থির হয়েছিল চৌঠো জ্যৈষ্ঠ। টাকা যোগাড় না করতে পারায় বিয়ে ওদিনে হয়নি। তারপর বললেন-দেখােন এখানে একঘর বামন আছে, বেশ বড় গতিদার, তাদের বাড়ির এক বোঁ আজি চার মােস শয্যাগত, তা মশায় একবার ডাকে না। বলে ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়ে কি হবে, আমরা ফকির দেখাচ্চি। হাটখোলার এক দোকানো এক মৌলবী সাহেব আমাদের ডাকাডাকি করলেন বলে গেলাম-এখানকার মক্তবে তিনি নতুন মৌলবী হিসেবে এসেচেন। মাসে বারোটা টাকা পাবেন, হাটখোলাতে একটা মসলমানদের দরগা। ঘর আছে, সেইখানেই আপাততঃ থাকবেন। তাঁর মাখে। মধ্যবােব সাব-ইনস্পেক্টরের গলপ শািনলাম। মধ্যবােব আমাদের কালে, আমরা যে পাঠশালায় পড়তাম, সেখানে গিয়ে আমায় একবার ‘গ্রন্থ” বানান জিজ্ঞেস করেছিলেন। সে ১৯০৫ সালের কথা হবে। সন্ধ্যার পরেই বলিট এল। আমি হাটখোলা থেকে চলে এলাম। রাত্রে একটা গোয়ালার ছেলে অনেক গলপগজব করলে। সকালে সনান করে পিসিমার কাছে বিদায় নিয়ে পাটশিমলে মোহিনী কাকার সঙ্গে দেখা করবার জন্যে রওনা হোলাম। আজ খাব রোদ উঠবে, আকাশ নীল, সকালের হাওয়ায় বিলের জল আর ধানের জাওলার গন্ধ। হাটখোলার ডাক্তারবাবর সঙ্গে দেখা করে মাঠের পথে হাঁটি। এদেশে যেখানে সেখানে আমগাছের তলায়, পিটলি ফলের মত, দিব্যি বড় বড় রাঙা রাঙা আমি তলা বিছিয়ে পড়ে রয়েচে, কেউ কুড়োয় না দেখে আশচয্য হয়ে গেলাম। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম-তোমাদের এখানে আম কুড়োয় না কেন ? সে বললে-বাবা, এখানে একপয়সা আমের পণ বিক্রি হয়এত আমি এখানে। কে কত খাবো! পাটশিমলে ঢাকতেই একপাশে একটা বড় বন, একটা উচ শিমল গাছ বনের মধ্যে মাথা উচ করে দাঁড়িয়ে আছে—তার ডালে পাতা S8