পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

টার দিকে চেয়ে! বড় ভাল লাগে এই দািরবিসিপিত আউস ধানের ক্ষেত, বাঁশঝাড়ের সারি-বসে বসে এই সখদঃখময় ভাবনা। কলকাতায় ফিরে এসব দিনের কথা বড় মনে হবে। এর মধ্যে একটা আধ্যাত্মিক পরিতৃপ্তি আছে, কলকাতায় মন থাকে উপবাসী প্রকৃতির উপভোগের দিক থেকে, এখানে দিনদিন এসে বাঁচি । তবও তো এবার রোদ না ওঠার জন্যে ছটির শেষের দিকটা মন বড় ভাল নয়। নীল আকাশ দেখা এবার ভাগ্যে বড় একটা জটবে না। মসলমান মাস্টারটি এল। দ-জনে গিয়ে পাঠশালার পেছনে মর্যাগাঙের ধারে বসব, এমন সময়ে এল ঝোড়ো কলো মেঘের রাশি, বারাকপরের দিক থেকে উড়ে এল—সঙ্গে সঙ্গে ঝমােঝম বর্ষার বান্টি। দৌড়, দৌড়, সবাই মিলে। ছটে গিয়ে পাঠশালার ঘরে আশ্রয় নিলাম। সেখানে বসে ও অম্পিবকাপরের মিটিং-এর কথা বলতে পাগল, আমায় সেখানে নিয়ে যেতে চায় তারা,---কবে আমার যাবার সবিধে হবে ইত্যাদি। আধঘণ্টা পরে থামল বান্টি। দ-জনে গিয়ে বসলাম পাঠশালার পেছনে মাঠে মারাগাঙের ধারে, আরামডাঙার চরের এপারে। মসলমান মাস্টারটির বাড়ি বরিশাল জেলা। অনেকদিন থেকে সে এদেশে আছে। তার খেয়াল গ্রামে গ্রামে চাষীদের মধ্যে শিক্ষার প্রচার করা। অস্বিকাপার, মামন্দি পাের, শচীনন্দ পাের মহৎপর, হ-দো, মানিককোল, বউজড়ি, সপরিাজপর -- এসব গাঁয়ে সে পাঠশালা বসিয়েচে, নিজে দেখােশানো করে, চাষামহলে তার খাব খাতির। নিঃসবার্থ সেবাৱতে ব্ৰতী উদার ধরনের যবক। তাই ওকে বড় ভাল লাগে। বললে—আসন, বেশ জায়গাটা, বসে একটা গলপ করি। বিড়ি নেই পকেটে-মশকিল হয়েচে, কাকে দিয়ে আনাই বলন তো। আমি গামছা পাতলাম বন্টিসিক্ত কচি ভেদলা ঘাসের ওপর। ওকে বললাম - বসন। ও বললে--আপনার গামছায় বসব ? জোর করে তাকে বসালাম। তারপর সে একটা গলপ ফাঁদলে। বললে--শােনন, সেদিন অস্বিকাপারে একটা বড় করণ ব্যাপার হয়ে গিয়েচে । অম্পিবকাপরে আমার যে পাঠশালা আছে, সেখানে একটি মসলমান মেয়ে পড়ত, তার নাম মোমেনা, ও বছর উচ্চপ্রাইমারী পরীক্ষায় বত্তি পেয়ে পাস করেচে। চাষার মেয়ে, কিন্তু চাষার ঘরে অমন রােপ কেউ দেখে নি। এই টকটকে গায়ের রং, এই পটল চেরা চোখ, এই স্বাস্থ্য, এই গড়ন—সবদিক থেকে মেয়েটি যেন আপনাদের বামন কাসিস্থের ঘরের সন্দেরী মেয়ের মত। তার ওপর তার লেখাপড়ার খাব ঝোঁক, গান জানে, শিল্পকােজ শিখেচে স্কুলে, বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। মেয়েটির এগারো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল, সেই বছরেই বিধবা হয়। উচ্চপ্রাইমারী পরীক্ষা দেবার পর যখন পাসের খবর বেরলে, তখন তার দেওর তার বাপমার কাছে যাতায়াত শার করলে তাকে বিয়ে করবার জন্যে। মেয়েটির ব্যাপ-মা রাজী হয়ে গেল। কিন্তু মেয়ের তাতে ঘোর আপত্তি। তার দেওর নিতান্ত মািখ চাষা। সবাসস্থ্য অতি খারাপ, চেহারা কালো। মেয়েটি ওই গ্রামেরই একটা ছেলেকে ভালবাসে, মসলমানেরই ছেলে, থাড ক্লাস পৰ্যন্ত পড়েছিল রাণাঘাট স্কুলে, এখনও S4