পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গিয়ে দেখলাম একটা আমাকাঠের সিন্দকে অনেকগলো। পরোনো বই, বেশ ভাল বাঁধানো। দীনবন্ধ, বঙ্কিমচন্দ্র, হেমচন্দ্র, কিছ.সেকেলে বাজে বটতলার উপন্যাস, মডেলভগিনী, কঙ্কাবতী, পরোহিত দীপাণ (ওদের বাড়ি পরোহিত দাপণে কি কাজ জানি নে) রামায়ণ, হরিবংশ এই সব বই। মেয়েটা সেই সব বই পড়তো বলে পাড়ার কারও সহ্য হতো না। তাই বইগলোর ওপরে ঝাল ঝেড়েচে। আমি বললাম—যদি ওকে শবশরিবাড়ি না পাঠাও, তবে ওর লেখাপড়া শেখার ব্যবস্থা করে। পাঁচীর কান্না দেখে বড় কন্ট হোল। কতকাল আগে বাল্যে একসঙ্গে খেলা করেচি, ওদের পর ভাবতে পারি নে। হাট থেকে যখন ফিরি, তখন বেলা গিয়েচে, রোদ রাঙা হয়ে এসেচে। মাঠে নদীর ধারে একটি বসে ওপারের মেঘসন্তোপ লক্ষ্য করি, তারপর জলে নামি সনান করতে। অন্ধকার হয়ে গিয়েছে, ওপারের চরে সাইবাবলা গাছের বন, আর সেই প্রতিদিনের উত্তজবল তারাটি উঠেচে, দেখতে বড় চমৎকার হয় ওই তারাটা। সকালে বসে যখন লিখচি, মনোরমা এসে বই চাইলে-পাঁচীর মেয়ে মনোরমা। ও আমার কাছে একখানা বই চেয়েছিল এবার, কিন্তু নানা গোলমালে সবিধে হয় নি। বললাম, কলকাতায় গিয়ে পাঠিয়ে দেবো, মা। বেশ মেয়েটি মনোরমা, জেলের মেয়ে বলে ওকে বোঝাই যায় না। ওপাড়ার ঘাটে সাঁতার দিয়ে যাবার সময় নড়াইল থেকে একখানা নৌকা আসচে দেখি, যাবে গণ্ডগায় ইলিশ মাছ ধরতে, দ-দিন হোল ইছামতী নদীতে পড়েচে। তারা জিজ্ঞেস করলে-ইছামতীর মাখ আর কত দরে ? ঘাটের কেউ জানে না। আমি বললাম—আরও দদিন লাগবে চর্ণি নদীতে পড়তে। সেখান থেকে আর একদিন । বৈকালে বেলেডাঙার পল্লীমঙ্গল সমিতি প্রতিষ্ঠা করলাম। আরামডাঙা, নীতিডাঙা, সদানন্দ পাের, চিত্রাঙ্গাপাের, নতুনপাড়া, পাঁচপেতা প্রভৃতি সাত-আটখানা গাঁয়ের এক লক্ষবা বক্তৃতা ঝাড়লাম সভার উদ্দেশ্য সম্পবন্ধে। ছেলেরা গান গাইলে, ফলের মালা গলায় দিলে৷ হৈ-হৈ ব্যাপার। তারপর উপস্থিত লোকেদের মধ্যে বেছে বেছে এক কার্যকরী সমিতি গঠন করি। নদীর মহম্মদ মাস্টারের আগ্রহেই সব হোল। সে লোকটা নিঃসবাৰ্থ সেবাপরায়ণ, গ্রামে গ্রামে ঘরে লোক যোগাড় করা, সকলকে খবর দেওয়া, এসব সে-ই করেচে। মিটিং-এর পরে বৈকালে নীল আকাশের বিচিত্ৰবণ মেঘস্তাপের তলে মর্যাগাঙের ধারে সবজি ঘাসভরা মাঠের মধ্যে বসে গ্রামের লোক কত দঃখের কথা আমার কাছে বলতে লাগল। গাঁয়ে জলের কম্পট, কচারিপানায় পচা জল খাচ্ছে, বেলে জমিতে ফসল হয় না, ক-বছর অজন্মা, মোল্লাহাটির খেয়াঘাটের ঘাটওয়ালাদের জলম। তাদের বঝিয়ে দিলাম, এই পল্লীমঙ্গল সমিতি থেকে গ্রামে এসব অভাব অভিযোগ দাির করবার চেষটা করা হবে। তোমরা চাইতে জানো না, তাই পাও না। অন্য গাঁয়ে দটো টিউবওয়েল হয়। দ-পাড়ায়, তোমাদের গোটা গাঁয়ে একটাও হয় না। সন্ধ্যার আগে সেখান থেকে রওনা হলাম। যখন, তখন মাথায় সেই উক্তজবল তারাটি উঠেছে। বাড়ি এসেই উষার পত্ৰ পেলাম। ছটি শেষ হয়ে আসচে। আর আমার মন খারাপ হয়ে আসচে। এই মক্ত নদীর (k'N'