পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শবরী শাড়ি পরনে বিদ্যুতের মত। ছটে ছটে খেলে বেড়াচ্চে। মাথার খোঁপাটিতে যেমন, ঘন কালো চল, তেমনি পরিপাটী করে বাঁধা। ওকে দেখলেই মনে হোল। Out of clay ভগবান এমন সন্দের ছাঁচে গড়েচেন, এমন আকারে গড়েচেন-আর তিনি নিজে নিরাকার, এ কেমন করে ভাবতে ভাল লাগে ? কি অদ্ভুত রসায়ন যার বলে মাটি থেকে অমন সন্দেরী মেয়েটির মত চেহারা তৈরি হয়েচো! তিনি নিজেও ইচ্ছা করলে সন্দর মাত্তিতে প্রকাশ হতে পারেন নিজে, যে দেশের লোকে যা ভালবাসে সেই মাত্তিতে। যেমন ধরা যাক, আমাদের দেশে বহন শতাব্দী ধরে গলে বনমালা, মাথায় শিখিপােচ্ছ, হাতে বেণ এই শ্ৰীকৃষ্ণের কিশোর মাত্তির প্রচলন, তাও দুবারকা বা কুরক্ষেত্রের শ্ৰীকৃষ্ণকে কেউ চায় না-সে সময় তিনি নিশ্চয় প্রৌঢ় হয়েছিলেন যদি সত্যি ঐতিহাসিক ব্যক্তি হয়ে থাকেন—কিন্তু চাইবে সবাই বন্দোবনের সেই কিশোর শ্ৰীকৃষ্ণকে। সতরাং আমাদের দেশের লোকের রক্তে ওই শ্ৰীকৃষ্ণরূপী ভগবানের রােপ নিত্য করচে-আমাদের দেশের হাওয়ায় তাঁর বাঁশি বাজে, পাখীরা তাঁর নাম করে—এদেশের মাটিতে তার চরণচিহ্ন সব্বত্র। এদেশে ভগবানের সাকার মাত্তির কথা ভাবতে গেলে শ্ৰীকৃষ্ণ মাত্তিই এসে পড়ে মনে। যে ভালবাসে। ওই মত্তিকেই ভালবাসে, যে না ভালবাসে সেও পাকে চক্লে ওই মাত্তির কথাই ভাবে, শেষে ভালবাসা এসে পড়ে মনে কোন অলক্ষ্য সবারপথ < কলকাতা শহরের একটা অদভুত রােপ আছে, যেটাকে দেখতে হলে বিকেল ছ-টিা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত জনবহল স্কোয়ার, সাধারণ পাক, সিনেমা, থিয়েটার, ভাল ক্লাব প্রভৃতি ঘরে বেড়ানো দরকার। কোনও পাটিতে গিয়ে সস্থাণবৎ অচল হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিলে শহরের এ ঐশবষয্য, রােপ হারিয়ে ফেলতে হয়। এক জায়গায় বেশীক্ষণ থাকলে হয় না-ট্রামে বা বাসে ঘরে বেড়াতে হয়, মোটর যদি না থাকে। আলো না জবললে শহরের রােপ খোলে না। আজ ভোরে বেরিয়েছিলাম। একখানা। ট্রামের all day ticket কেটে। কারণ নানা জায়গায়। ঘরতে হচ্চে, রবিবার ভিন্ন সবিধে হয় না। কমলাদের হোেসন্টল হয়ে মণীন্দ্রলালের ওখানে গিয়ে দেখি পরো আন্ডা বসেচে—পরেশ সেন বিলেতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করচে, ভূপতি, মহিম, নরেনদা সবাই উপস্থিত। সেখানে ঠিক হোল ওবেলা ছ-টিার সময় বিজলীতে সবাই মিলে "She" দেখতে যাওয়া হবে। মণি বন্ধনের নাচ হবে। আজই ইনস্টিটিউটে, আমায় মণি বন্ধন একখানা কাড দিয়েচে সে-কথা বললাম। ওরা উড়িয়ে দিলে। তখন ঝমােঝম বলিটি নামল। সেই বমিট মাথায় ট্রামে ও বাসে সাঁতরাগাছি গিয়ে পৌছই ননীর বাড়ি। ননীরা বাসা বদলে আর একটা বাড়িতে এসেচে। ‘বিজলীতে এসে দেখি শািন্ধ পরেশ সেন এসেচে। একটা পরে মণীন্দ্র ও ਚ এল। আমরা সবাই ফিলম দেখলাম। ‘বিজলীতে এমন একটা atmosphere আছে যে সেখানে বসে ফিলম দেখে সবিধে হয় না। ভাল সঙ্গ, পারিপাশিবকে অবস্থা ভিন্ন যেখানে সেখানে বসে, ছবি বা থিয়েটার বা যে কোনও আমোদ-প্রমোদ ভাল লাগে। না। আলোকোত্তজবল প্রেক্ষাগাহ, সংবেশ তরণীর দল, পরিপাটি আসন-এ সবের খব বড় একটা স্থান আছে ছবি বা থিয়েটার দেখাতে। ওখান থেকে বেরিয়ে ট্রামে আলিপার ও খিদিরপর হয়ে বাসায় ফিরলাম। পথের বন্টিস্নাত গাছপালার ওপর শ্যাওলা পড়ে বেশ দেখতে হয়েচে, কালজন পাকে ফল ফটে আছে, নরনারীর চিত্র —রেশ লাগল। কলকাতার এই প্রমোদসক্তজা অতি চমৎকার। এত বড় একটা শহরের এ রােপ ভাল করে দেখবার জিনিস। 6.