পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাঁতরাগাছি সেন্টশনে উঠলো কিশোর কাকার ছেলে সন্তোষ, তাকে উঠিয়ে দিতে এল জীবন। আজ দিনটা বাদলা, জোলো হাওয়া দিচ্চে। কোলাঘাট রপনারায়ণের কি রাপ, কলে কলে ভরা গৈরিক জলরাশি তীরবেগে ছটেচে। সেই অন্তরীপ মত জায়গাটা, যেটা প্রতিবারই মনে করিয়ে দেয় পড়জোর সময়, সেটা কেমন চমৎকার দেখাচ্চে। রেলের বাঁধের ধারে ঘন বনঝোপে কত কি ফল ফটেচে। এসব গাছের নাম জানি নে। এ অঞ্চলে গাছগলি আমার সম্পণে অপরিচিত, একমাত্র বনকলমী ফল ছাড়া। হলদে কাপাস তুলোর গাছের বড় ফল, ঘোঁটি কোল ফলের মত বড় বড় ফল, সাদা সাদা কুচো ফল, আরও কত কি। এবার জল বেজায় বেড়েচে, সব গ্রামের বাড়িঘরের চারিধারে জল ভৰ্ত্তি, ডোবা, বিল, পাকুর। কোলাঘাটে গাড়ি একঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল। লাইন বন্ধ ছিল বলে। খড়গপাের ছাড়িয়েচি, সেই সময় আবার মেঘ করে এল। ঝাড়গ্রামে থামবার কিছ আগে সন্তোষ গ্রামের কথা উপলক্ষে বললে -গণেশ মচির ছোট ছেলেটি মারা গিয়েচে। শানে খবই দঃখিত হলাম, গণেশ বড়ো হয়েচে, ওই ছেলেটিকে বড় ভালবাসতো। আর একটা খবর বললে-হরিদাদার মেয়ে কনকের বিয়ে হয়েচে এক বড়ো বরের সঙ্গে। আরও দঃখিত হলাম, কনক মেয়েটি বড় সন্দরী, তার জন্যে তার বাবা ওর চেয়ে ভাল বর জোটাতে পারলে না কেন জানি নে, কারণ তার বাবা গরীব নয়, ইচ্ছে করলে দ-পয়সা খরচ তো করতে পারতো। এইবার ঘন মেঘ করে বন্টি এল। গাড়ি এখন শালবন ছাড়িয়ে গিডনী সেন্টশনে এসে পৌছেচে। বড় ইচ্ছে ছিল বাকুডি যাবো, কিন্তু যাওয়া হোল না। সবৰ্ণরেখার ধারে এসে ঘন ছায়াভিরা বৈকালে শালবনের মধ্যে এক জায়গায় বসলাম। ওই দরে সিদ্ধেশবর ডুংরী, যার মাথায় উঠে বসে। চিগড়ে দিই খেয়েছিলাম, যার মাথায় উঠে শিলাখন্ডে নাম লিখে রেখেছিলাম। চারিধারে শ্যামল বনানী, প্রান্তর, ধানবন, শালগাছ। ওই ওপারে প্রকান্ড দীঘ পাহাড়শ্রেণী। সামনে খরস্রোতা সবৰ্ণরেখা, তীরে ছোট বড় শিলাখণ্ডড, শাল চারার জঙ্গল। সন্ধ্যা নেমে আসচে, পাহাড়শ্রেণী নীরব, বনানী নীরব, মেঘলা, সবৰ্ণরেখার কুলকুলা শব্দ ছাড়া অন্য কোনই শব্দ নেই। গত শনিবারে এমন সময় ইছামতীর ধারে বসে আছি। এই নিস্তব্ধ অপরাহের সবণ রেখার তীরে দাঁড়িয়ে পেছনের শালবনের মাথায় ওধার দিয়ে পর্বদিকে চেয়ে দেখলাম, দরে এমনি ইছামতী নদী বয়ে যাচ্চে, বাংলাদেশের এক অখ্যাত পাড়াগাঁয়ের কোল দিয়ে। সেই নদীর ধারে একটা গাঁয়ের ঘাটে এক জায়গায় একটা বনসিমের ঘন ঝোপ নত হয়ে আছে ঘাটের পথের ওপরে। একটি মনে পড়তেই অপব্ব আনন্দে ও মাধ্যায্যে এই সন্ধ্যা ভরে উঠলো, বাতাস আরও মধ্যর হোল। s আমার ঘরে গত জ্যৈষ্ঠমাসে একদল রামছাগল উঠে উপদ্রব করছিল, আমি হাট থেকে এসে ‘দর দর” করে ছাগলের দল তাড়িয়ে দিলাম, সেই কথা মনে পড়লো। এই রামছাগলের দল তাড়ানোর সঙ্গে আমার সেদিনের একটা বড় মধর ঘটনা মেশানো আছে, কেউ তা জানে না-তা আমি এখানে লিখবও না। এটকু লিখে রাখলাম। এজন্যে যে সবৰ্ণরেখার তীরে দাঁড়িয়ে এই বিষাসন্ধ্যায়। সেই ঘটনাটা আমার মনে এসেছিল। সপ্ৰভা কত দরে আছে, তার কথাও মনে হোল এ সন্ধ্যায়। বড় ভাল মেয়ে সে, তার মতো মেয়ে কখনো দেখি নি। 6; Gf