পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সিংডুম জেলার বন-জঙ্গল ও পাহাড়শ্রেণী ভারতবর্ষের মধ্যে সত্যিই অতি অপব্ব । বেঙ্গল নাগপাের-রেলপথ হওয়ার আগে এই অঞ্চলে যাবার কোন সহজ উপায় ছিল না, কেউ যেতোও না সে সময়ে—যা একটা আধটা যেতো-এবং যে ভাবে যেতো-তার কিছটা। আমরা বঝতে পারি। সঞ্জীবচন্দ্রের ‘পালামৌ পড়ে। সিং ভুম জেলার ভেতরকার পাহাড়-জঙ্গলের কথা ছেড়ে দিই-বাংলাদেশের প্রত্যন্ত সীমায় অবস্থিত মেদিনীপর ও বাঁকুড়া জেলার অনেক স্থান জনহীন অরণ্যসঙ্কুল থাকার দরণে ঝাড়খণ্ড’ অর্থাৎ বনময় দেশ বলে অভিহিত হোত। লোকে প্রাণ হাতে করে যেতো ঐ সব বনের দেশে। কিন্তু না গিয়ে উপায় ছিল না—যেতেই হােত। ওই দেশের মধ্যে দিয়ে ছিল পােরী যাওয়ার রাস্তা। মেদিনীপর জেলার বাৰ্ত্তমান ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যে দিয়ে এই পরোনো পথ এখনও বৰ্ত্তমান আছে। শ্ৰীচৈতন্য সাঙ্গোপাঙগ নিয়ে এই পথে একদিন পরী গিয়েছিলেন। কত লোকে যেতো সেকালে। সাধ ঈশবরপােরী একা এই পথে পরী রওনা হন। ঝাড়গ্রামের রাজবাড়ীর সামনে দিয়ে এই পথ আজও আছে, আজকাল জেলাবোডের রাস্তার সঙ্গে এক হয়ে গিয়েছে। রাজবাড়ী থেকে পাঁচ মাইল কিংবা তার কিছ বেশি গেলেই বম্বে রোডের সঙ্গে এই রাস্তা মিশে গিয়েছে এবং তারপর সোজা চলেছে উড়িষ্যার দিকে, ময়রভঞ্জের মধ্যে দিয়ে। এই রাস্তাকে কেন যে বম্বে রোড বলা হয় তা জানি নে—কারণ বম্বের সঙ্গে এর কোনো সম্পপক চন্মচক্ষে আবিস্কার করা যায় না। তবে যদি কেউ বলে, এ রাস্তা দিয়ে কি মশাই তবে বম্বোেব যাওয়া যায়। না ? আমায় বলতে হবে-বিশেষ করে বম্বোেব যাবার জন্যে এ রাস্তা নয়। ময়রভঞ্জের মধ্যে দিয়ে এ রাস্তা সোজা চলে গেল সমদ্রতীরের দিকে। তবে এ রাস্তা থেকে অন্য একটা রাস্তা বেরিয়েছে ময়রভঞ্জের বাঙ্গিপোস নামক জায়গায়। সে রাস্তায় বেকে গেলে কি হয় বলা যায় না-হয়তো বম্বে যাওয়া যেতে পারে, সে রকম দেখতে গেলে তো যে কোনো রাস্তা দিয়েই বম্বোেব যাওয়া যায়। যে কোনো জেলার যে কোনো রাস্তাকে তবে বন্ধেব রোড কেন বলা হবে না ? চিরকাল পথে পথে বেরিয়ে অভ্যোস দাঁড়িয়ে গিয়েছে। খারাপ। পথ যেন ডাকে, হাতছানি দেয়। সেদিন ছিল অম্ৰাটমী তিথি। সন্ধ্যার পরেই কি চমৎকার জ্যোৎসনা উঠলো। ঝাড়গ্রামে আমার এক আত্মীয়বাড়ীতে গিয়ে দিন দাই আছি—হঠাৎ ইচ্ছে হলো এমন জ্যোৎস্নায় একটখানি বেড়িয়ে আসি। জায়গাটা রাজবাড়ীর পাশে-পরোনো ঝাড়গ্রাম। স্টেশনের কাছে হয়েছে নতুন কলোনি, কলকাতার অনেক ভদ্রলোক বাড়ী করেছেন সেখানে, কিন্তু পরোনো ঝাড়গ্রামের একটি নিজস্ব সৌন্দৰ্য আছে। এখানে পরোনো দিনের রাজাদের গড়খাই ও দিগপ্রাচীরের চিহ্ন আজও দেখা যায়, আর আছে। শালবন, আগাছার জঙ্গল, পরোনো দেউল, দীঘি। দিব্যি রোম্যাণ্টিক পরিবেশ। পরোনো দীঘির ধারে হাট বসে, তার আগে সাবিত্ৰী-মন্দির। সাবিত্ৰী-মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেল গ্রামের বাইরে মাঠ ও বনের দিকে। একাই চলেছি, শালবনের কচি পাতা গজিয়েছে, কুসম-গাছের রঙিন কচি পাতার সম্পভার দাির থেকে ফল বলে ভুল হয়। গ্রাম ছাড়িয়ে পায়ে-চলা মাঠের পথ শালবনের মধ্যে দিয়ে দীর থেকে দারান্তরে অদশ্য হয়েছে-সড়ি পথের দ ধারে শালবন।