পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাই চলেছি। এ পথে কখনো আসি নি, কোথায় কি আছে জানি নে। ভালক বেরবে না তো ? শকিনো শালপাতার ওপরে খসখস শব্দ হােলেই ভাবছি। এইবার বোধ হয়। ভালকের দশানলাভ ঘটলো। আরও এগিয়ে চলেছি-একটা ছোট পাহাড়ী নদী ঝির ঝির করে বয়ে চলেছে পথের ওপর দিয়ে। হাঁটখানেক জল, এমনি পার হয়ে ওপারের পাড়ে উঠলাম—উত্কচ, কাঁকর-মাটির পাড়। শহর থেকে প্রায় দেড় মাইল চলে এসেছি। জ্যোৎস্নাসনাত উদার বন-প্রান্তর, আমার সামনে। ফিরবার ইচ্ছা নেই। আরও খানিক গিয়ে শালবন পাতলা হয়ে এল-মাঠের মধ্যে দরে একটা আলো জবলছে দেখে সেদিকে গেলাম। ছোট একখানা খড়ের ঘর, ফাঁকা মাঠের মধ্যে-একটা দরে একটা গ্রাম আছে বলে মনে হোল। ঘরখানার চারিদিকে বাঁশকgির বেড়া, আমার সম্বর শনে গেরিয়া পরা সন্ন্যাসী ঘর থেকে বার হয়ে এসে বললেন—কোথা থেকে আসছেন ? আমি বললাম, ঝাড়গ্রাম থেকে। এটা কি আপনার আশ্রম ? -হ্যা, আসন বসন। সন্ন্যাসী একখানা দড়ির খাটিয়া ঘরের সামনে মাঠে জ্যোৎস্নায় পেতে দিলেন। বেশ চমৎকার লাগছিল। আমার, একদিকে অপটি বনরেখা, অন্য দিকে ধ। ধ করছে জ্যোৎস্নালোকিত প্ৰান্তর। শহরের পথ চিনে ফিরতে পারবো কি না। এই রাত্রে, তাই বা কে জানে ? পায়ে-চলা সর অাঁকা-বাঁকা মাটির পথের সন্ধান যদি না-ই মেলে, ফেরবার মাখে ? সন্ন্যাসী বললেন--রাতে বেরিয়েছেন একা? —কেন, কোনো ভয়-ভীত আছে নাকি ? --নাঃ, কিসের ভয়। তবে ভালক-টালিক দা একটা-ওর জন্যে ভাবনা নেই। হাট থেকে হরদম লোক যাতায়াত করছে। এপথেমানষের সাড়া পেলে ভালক থাকে না। আমার ইচ্ছে হচ্ছে এই জ্যোৎস্নায় অপরিচিত সন্ন্যাসীর সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ' ধরে গলপ করি, ওঁর জীবনের কাহিনী সব জেনে নিই। কোথায় বাড়ী, কোথায় দেশ, এসব শানি। একটা প্ৰকান্ড শিমল গাছ আশ্রমের বেড়ার গায়েই মাটিতে পড়ে আছে --অথচ তাতে অনেক ফািলও ধরেছে। বললাম-- গীত আশিবনের ঝড়েই বঝি গাছটা পড়েছে ? —হ্যা, এদিকে ততটা হয় নি, তবও দা-দশটা গাছ পড়েচে বৈকি। --মেদিনীপরের ওই দিকটার সব্বনাশ করে দিয়ে গেল, অথচ পশ্চিম মেদিনীপরের বিশেষ কিছ হয় নি দেখছি। এই গ্রামের নামটা কি ? —খানাকুই। —কত দিনের আশ্রম আপনার ? আছেন কতদিন এখানে ? —তা প্রায় আট-ন বছর। শিষ্য আছে। জন-দই কলকাতায়-তারাই আশ্রমের ঘর তৈরী করে দিয়েছে—মাসিক কিছল সাহায্যও করে। -७a <न्द्र (; स्लाळ ठाक? —আছি বেশ। গ্রামের লোকের বড় জলকন্ট। শিষ্যদের বলে আশ্রমে একটা পাতকুয়ো করে দিয়েছি, গ্রামের সবাই জল নিয়ে যায়। তবে খাওয়া-দাওয়ার কন্ট, কিছ মেলে না। এ সব গাঁয়ে। কপি আর টােমাটাের ক্ষেত করেছি। ঐ দেখান। ঐ ভরসা। তাও গরমকালে জলাভাবে সব শকিয়ে যায়। দারণ জলাভাব। বসে গলপ করছি, গেরিয়া কাপড় পরা একজন সন্ন্যাসিনী এসে এক পেয়ালা চা