পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিয়ে গেলেন। সন্ন্যাসী বললেন, মা ঠাকরণ। বললাম-ও, আপনার মা ? --না, আমার শিষ্যা। ওঁরাও কেউ নেই। বাঁকুড়া জেলায় বাড়ী। ব্ৰাহ্মণ ঘরের মেয়ে। আমি কাছে নিয়ে এসে রেখে দিয়েছি আজ পাঁচ বছর। আমার রান্না করে সুদন। আশ্রমের কাজকৰ্ম্মম করেন। --কেউ নেই? প্রশনটা যেন আপন মনেই জিজ্ঞেস করি। সংসারে যার কেউ নেই, এই ভাবেই কোথাও না কোথাও তার আশ্রয় জটে যায় বৈ-কি। ভগবানই জটিয়ে দেন। সন্ন্যাসী বলছিলেন-আমার পাশে জমি কিনে রেখেছে কলকাতার একজন নাস । তারও কেউ নেই। সে আমার শিষ্যও নয়। অথচ এই আশ্রয় দেখে আর মা ঠাকরণকে দেখে বলেছে, এইখানেই আমার থাকা সবিধে হবে। এইবার বোমার হাঙ্গামার সময়ে এসে আমার এখানে কিছদিন ছিল। —জমি পাওয়া যায় ? ---কেন। যাবে না, নেবেন ? আমার একটা খারাপ অভ্যোস, যেখানে যত ভাল জায়গা দেখবো, সেখানেই আমার ইচ্ছে হবে যে বাড়ী তৈরি করি। সতরাং অন্যমনস্কভাবে বলেই ফেললামইচ্ছে তো আছে। --হ্যা, হ্যা, আসন না! জমি আমিই দিচ্ছি। ঘরদোর। আপাততঃ আমার আশ্রমের মত খড়েরই করুন, সস্তায় হবে। --বেশ, তবে ঘর তৈরির দেখােশানো আপনাকে করতে হবে। আমি তো কালই চলে যাচ্ছি, টাকা পাঠিয়ে দেবো। সেই জ্যোৎস্নার্সনাত শালবন ও উদাস প্রান্তরের মধ্যে বসে। আমি যেন ক্ষণকালের জন্য সেখানকার অধিবাসী হয়ে গিয়েছি মনে হলো। কি সন্দির হবে যখন এখানে নিজের ঘরের সামনে বসে থাকবো এমনি নিজজন রাত্রির জ্যোৎস্নার মধ্যে। একটা পরেই সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আজ পাঁচ-ছ'মাসের মধ্যে সেখানে আর যাওয়া ঘটে নি-যেমন ঘটে নি। আরও কত ওর চেয়েও ভাল জায়গায় যাওয়া-যেখানে যেখানে বাড়ী করবার অদম্য ইচ্ছা একদিন মনে হঠাৎ জেগেছিল এবং হঠাৎই মিলিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মধ্যে আমার ঝাড়গ্রামের সেই আত্মীয়টির সঙ্গে দেখা। তিনি বললেন--- তুমি কি কোনো সাধকে জমি কেনার কথা বলেছিলে ? একদিন হাটে আমার সঙ্গে এক সাধারা দেখা। আমায় বললেন, আপনাদের বাড়ীতে এসেছিলেন। কলকাতার একটি বাবা, তিনি জমি নেবেন, বলেছিলেন। জমি সব ঠিক করে ফেলেছি, তিনি যদি আসেন। তবে জমিটা লেখাপড়া করিয়ে দিই! ভাবে বকলাম, তুমি। মনে পড়লো আরও অনেক জায়গায় অমন জমি নেবো বলেছিলাম। তখন সৌন্দয্য দেখে ভুলে যাই যে অত জায়গায় বাড়ী করবার মত পয়সা নেই। আমার হাতে। সেবার দাডিজলিঙ গিয়ে ভাবলাম ঘামে একটা বাড়ী না করলে আর জীবনে ঘাম নেই! কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করে জানা গেল অন্ততঃ ছয় হাজার টাকার কমে ঘাম শহরে বাড়ী হবার সুজা নেই-তখনই—শত হস্তেন বাজিনাম। ঝাড়গ্রামের আত্মীয়টির সঙ্গে দেখা হয়েছিল কলকাতায়। ব্ল্যাক-আউটের কলকাতায় বসে ক্ষণকালের জন্যে চোখের সামনে ভেসে উঠলো খানাকুই গ্রামের প্রান্তে দিনলিপি-৫/বনে-পাহাড়ে-২