পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চলন আপনাকে মাছ ধরার বাঁধ দেখাই আমরা পাহাড়ের নীচে নেমে এলাম। চারিধারে নিজজন ঘন অরণ্যানীর বনো খেজর পাতার চেটাই বনচে। আমরা কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তাদের কি হাসি! আমি হো-ভাষা জানি না, মিঃ সিংহ তাদের সঙ্গে তাদের ভাষায় কথাবাত্তা বললেন। আমি বললাম-কি বলছে ওরা ? --বলচে, বাব এখানে কি দেখতে এসেচে! --জিজ্ঞেস করন ওদের নাম কি। —একজনের নাম সামান কুই, একজনের নাম বন্ধন কুই-কুই অর্থাৎ মেয়ে। —বেশ নাম। ওরা কি খায় ? —শধ ভাত। না ডাল, না তরকারী, ও সব খেতে জানে না। এদেশে। - সারাদিনে কি রোজগার করে ? –S Go! | -এতেই সন্তুষ্ট থাকে ? --খব। একটা পরে দেখবেন গান করবে। সবাই এক সঙ্গে। ওদের মত অলেপ সন্তুটি জাত নেই। মিথ্যা কথা বলতে জানে না, অত্যন্ত সরল। সভ্যতার সম্পকে যারা এসেছে, তারা সবাই দন্ট, বদমাইশ হয়ে গিয়েচে। কোনো টাউন বা কারখানার নিকটে যে সব হো বা ওঁরাও বাস করে, প্রায়ই সব খারাপ ! কিন্তু এ বনের মধ্যে এরা অত্যন্ত সরল, অত্যন্ত সৎ । ওদের মখের দিকে চাইলেই সে কথা বোঝা যায়। ছেলেমানষের মত পবিত্র সরল নির্ভপাপ মািখশ্ৰী। সরলতা ও নিলোভতা। ওদের মখে সরকুমার রেখার অক্ষরে GGfq1 KQ&G5 মিঃ সিংহ বললেন--আর একটা মজা, এরা বেশী রোজগার করতে চায় না। দিনের সামান্য মজরি হাতে পেলেই খাশী। আর কিছতেই কোনো প্রলোভনেই সেদিন খাটতে চাইবে না। এক জায়গায় সবাই গোল হয়ে বসে চোটাই বনবে, গান গাইবে। কিন্তু রাঁচী শহরে গিয়ে এদের দেখান, অন্যরকম দেখবেন। আমরা এগিয়ে গিয়ে একটা বড় ঝর্ণার কাছে এলাম। ঝণার এক দিকে বাঁধ বাঁধা। বর্ষাকালে এখানে একটা পকুরের সন্টি হয়। মিঃ সিংহের মখে শািনলাম, এটাই মাছ ধরার বাঁধ। কোথা থেকে মাছ আসে একথা আমি জিজ্ঞেস করি নি। তখন সে সব তুচ্ছ প্রশেনর অবকাশও ছিল না। সন্ধ্যার অন্ধকার চারিদিকে অরণ্যের অলি-গলিতে, সড়ি পথে ঘন হয়ে নামচে। যেখানটাতে মাছের বাঁধ তার চারিধারে বড় বড় শালগাছ উচ্চ হয়ে আকাশকে ঢেকেচে-শািন্ধ অন্ধকার আর জলপতনধবনি আর নিভজনতা আর মনের মধ্যে এক রকমের গা-ছিমছম-করা ভয়ের বিচিত্র অনভূতি। মাছের বাঁধ ছেড়ে আরও প্রায় দ্য রশি গিয়েচি তখন। দ্য রশি কি তিন রশি, কিন্তু চারিদিকে চেয়ে আমার মনে হোল এ পথিবীতে আমি আর এই দই বন-বিভাগের কম্পমচারী ছাড়া (দজনেই মিঃ সিংহ-হরদয়াল সিং ও যোগীন্দ্র সিংহ) আর বঝি কেউ নেই-আফ্রিকার ঘন অরণ্যে নর-খাদক অসভ্য জাতিদের দেশে যেন এসে আটক পড়ে গিয়েচি। যেমন ঘন বনানী তেমনি ঘন অন্ধকার চারিপাশে । হরদয়াল সিং হঠাৎ বললেন—এইখানটা একটি সাবধান, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখানকার ওই সাঁড়ি পথটা দিয়ে জল খেতে নামে ঝর্ণায়। SS