পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগীন্দ্ৰ সিংহ বন বিভাগের কলমচারী বলেই যে বনশ্ৰী ভালোবাসেন তা নয়-- তেমন যোগাযোগটি সব সময় ঘটে না-ভাবক লোক। অন্ধকারময়ী রজনীর রােপ দেখবার জন্যে তিনিও আমার সঙ্গে জেগে বসে আছেন বাইরে। কিসের একটা সগন্ধ বাতাসে। সিংহ বললেন-পাচ্ছেন গন্ধটা ? —ভারি চমৎকার গন্ধ বটে। কিসের ? —কোনো অজানা বনফলেরআমি একটা ভয়ানক ভুল অনেকক্ষণ থেকে করছিলাম। বামিয়াবার এবং নিকটবত্তীর্ণ অরণ্যে একপ্রকার গাছকে আমি বারবার কনকচাঁপার গাছ বলে আসচি এবং এই দই বনবিভাগের উচ্চ কম্পর্মচারীর সঙ্গে তাক করেছি নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টায়—কারণ ওঁরা বলচেন, চাঁপাগাছ নয়। ও হােল ভেডলেন্ডিয়া —আর চম্পক হোল মাইকেলিয়া চম্পক ; তার পাতা হবে কালো কালো লম্বা লম্বা। আমি বলে আসচি, না তা নয়। সবণচাঁপার পাতা। অমন হবে না। এই যাকে বলচেন ভেডলেন্ডিয়া এই হোল সাবর্ণচাঁপা। ওঁরা আমার জেদ দেখে বলেছিলেনতা হতে পারে হয়তো। কিন্তু ও গাছকে আমরা আগাছা স্বরপ বিবেচনা করি। এ ভুল আমার কি ভাবে ভেঙেছিল, সে পরে বলচি—এখন আমার হঠাৎ মনে হোল বনের সেই সবণচাঁপার সিগন্ধ নয় তো ? কিন্তু এখন তো চাঁপাফল ফোটাবার 33rS3 GNR বড় সাগন্ধ ফলটার- যে অজানা ফলই হোক বনের,-অন্ধকারের মধ্যে নিতজান আকাশতলে তার এই প্রাণঢালা আত্ম-নিবেদন নিশ্চয় ব্যথ নয়। বিশেবর বড় গোরস্থালিতে এতটকু জিনিসের অপচয় হবার জো নেই! অদভুত গভীর শোভা এই নিবিড় নিজজন অরণ্যানীর। মাথার ওপরে ঝকঝকে গায়ে ঠেকেছে-মাঝে মাঝে দ-একটা রাত-জাগা পাখীর ডাক, সব্বোপরি একটা গহনা গভীর রহস্য যেন এই রাত্রে এই বনভূমির অঙ্গে অঙ্গে মাখানো। শোওয়া কি যায় ? এমন রাত্রি নিদ্রার জন্যে তৈরী হয় নি। আমরা জেগে বসে থাকি, কি বলেন মিঃ সিংহ ? -খব ভালো। মনে হোল এমন বিরাট অরণ্য কখনো দেখি নি জীবনে। এমন বিরাট বনস্পতি শ্রেণীর সমাবেশ, সঙ্গে সঙ্গে এই অদ্ভুত-দর্শন শৈলশ্রেণী-দইয়ের এই যোগাযোগই এই অরণ্যকে সন্দরতর, অধিকতর রহস্যময় করচে ; এ দেখবার সহযোগ বা ক'জনের ভাগ্যে ঘটে ? রেলপথের নিকটবত্তীর্ণ সন্থানসমাহে অনেকে সহজেই যেতে পারেন বটে। যেমন মধ্যাপাের, শিমলতলা ইত্যাদি, কিন্তু সে সব স্থানে মানষের ভিড়, ছোট বড় ঘরবাড়ীর ভিড়। দরে বা নিকটে এমন ধরনের অরণ্য নেই। দেওঘর থেকে ১৪ ১৫ মাইল দরে এক বিরাট জঙ্গল আছে বটে, কানিবেলের জঙ্গল; সেটা লছমীপর গাড়োয়ালি সেন্টটের অন্তভুক্ত। আমি একবার ভাগলপার থেকে দেওঘর। পয্যন্ত পদব্ৰজে আসি সেই ঘন বনের মধ্যে দিয়ে। সে বন বড় একটা মালভূমির ওপর, তার শেষ প্রান্ত থেকে দরিস্থিত ত্রিকট পাহাড় নীলমেঘের মত দেখা যায়, কিন্তু সে এমন শৈলমালাবেটিত নয়, এত বড় বনস্পতি সমাবেশও নেই সেখানে। সেন্টটেন্য লোক কাঠ বেচে জঙ্গল অনেক নন্ট করে ফেলেচে। দেওঘর থেকে সেখানে যাবার এক হাঁটা পথ ছাড়া উপায় নেই; কাজেই ইচ্ছে থাকলেও যাওয়ার সংবিধা ୩୧୫ ? AG