পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হঠাৎ মিঃ সিংহ বললেন-ওই আলোটা দেখচোন আকাশে, কিসের বলন তো ? একটা পাহাড়ের চড়ার ওপরকার আকাশে কিসের আলো বটে। যেন দরের কোনো অগ্নিস্রাবী আগ্নেয় পব্বতের আভা আকাশপটে প্রতিকলিপত হয়েচে । আমি বাঝলাম না। মিঃ সিংহ বললেন— ওটা টাটার আলো। -এতদর থেকে ? খাব দীর কোথায়! সোজা ধরলে ত্ৰিশ মাইলএকটি পরেই আলোটা মিলিয়ে যেতে আমার আর কোন অবিশ্ববাস রইল না। কিন্তু ঘন বনের দিকে কুকুর ডাকে কোথায় ? বললাম-কোনো বাসিত আছে না কি ও পাহাড়ের মধ্যে ? মিঃ সিংহ বললেন-ও হোল একরকম হরিণের ডাক ; বাকিং-ডিয়ার, ঠিক কুকুরের মত ডাকে; যদি জেগে থাকেন, এ বনে আরও অনেক রকম জানোয়ারের আওয়াজ শািনতে পাবেন। হাতীর ডাক, বাঘের ডাক বেশি রাত পয্যন্ত জেগে বসে থাকা আমাদের আদলেট ছিল না। বাংলোর মধ্যে থেকে হরদয়াল সিং ডাকাডাকি করতে লাগলেন, এত রাত পয্যন্ত বাইরে থাকা ঠিক নয়। এসব জায়গায়। বিশেষতঃ ঠান্ডা লেগে অসংখও তো হতে পারে। পরদিন সকালে উঠে। মিঃ সিংহ আমাকে এক অপব্ব সংয্যোদয় দেখালেন। সম্পমাখের শৈলচড়ার অন্তরাল থেকে লালসায্য নিজের মহিমায় আত্মপ্রকাশ করতে লাগলো। আগে সমস্ত বড় বড় শিখরগলোতে কে যেন সিন্দর আর সোনার রেণ। ছড়িয়ে দিলে। যে-দিকে চাই সেই অজানা আকাশ-পরীর অদশ্য হস্তের ইন্দ্ৰজাল । ধীরে ধীরে রোদ ফটে বেরলো, শৈলশিখরবাসী সামান্য কুয়াশা দিনের আলোর সামনে মিলিয়ে গেল।--কি সন্দির সস্নিগাধ প্রভাত। আমরা চা পান করে বন ভ্ৰমণে বেরিয়ে পড়লাম। চা খেতে একটি বেলা হোল ; এখানে জঙ্গলে কোথায় দাঁধ মিলবে! দশমাইল দরবত্তী সেই কুইরী গ্রাম থেকে বনবিভাগের লোকে সাইকেল যোগে দধি নিয়ে এল। ঘরে ঘরে পাহাড়ী পথ-খানিকদর নেমে এসে রাস্তায় উঠলাম। আমরা চারপাঁচজন লোক; দজন বনবিভাগের উচ্চ কম্পমচারী, দজন ফরেস্ট গাড, আমার সত্ৰী ছিলেন সঙ্গে, আরও কয়েকটি লোক। রাস্তার পাশের একটা সর পায়ে চলার পথ নিস্তব্ধ, ঈষৎ অন্ধকার, ঘন বনের মধ্যে প্রবেশ করেচে। একটা সংকীর্ণ পাহাড়ী নালা বনের মধ্যে কুলকুল করে বয়ে চলেছে। এই নালার হো-নাম হচ্চে পোগা-মারো-গাঢ়া। বনের মধ্যে ঢাকেই মনে হলো এতক্ষণ অরণ্যানীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করি নি, যা দেখছিলাম তা বাইরে থেকে। এ যেন একটা ভিন্ন জগৎ-সউচ্চ, সোজা, খাড়া শাল, কেন্দ, বারম প্রভৃতি বনস্পতিশ্রেণীর ঘন সন্নিবেশ দিনের আলোক আটকেচে। সারাদিনের মধ্যে এখানে ‘সায্যের আলোক প্রবেশ করে। কিনা সন্দেহ, সতরাং বনভূমি ঈষৎ আদ্র, একটা বেশি শীতল, কাছে কাছে কত সাদশন অকিড, নিম্পেন আগাছার জঙ্গলও বেশ ঘন। এক জায়গায় ছোট-এলাচের গাছ হয়েচে, মিঃ সিংহ দেখালেন খাব বড় হলদি গাছের মত পাতায় ছোট এলাচের গন্ধ। এদিক-ওদিক থেকে ক্ষীণ জলধারা আমাদের পথের ওপর দিয়ে গড়িয়ে চলেচে, তার ওপর প্রস্তর-সঙ্কুল পথ, সতরাং আমাদের যেতে হচ্ছিল খােব সন্তপণে। একটা মাঝারি গোছের গাছ দেখে ওঁরা বিজয়ের হাস্যে বলে উঠলেন- এই। এই NSN: