পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হলো মাইকেলিয়া চম্পক, চম্পক ফলের গাছ। আমি বললাম—এ চম্পক গাছ হতে পারে, সাবর্ণচাঁপা নয়। —আমরা অন্য চাঁপাগাছ চিনি নে—এ গাছে চম্পক ফল হয়। --হতে পারে, কিন্তু অন্য শ্রেণীর চাঁপা, আপনারা যাকে ভেড লেন্ডিয়া বলচেন ওই হোল সাবর্ণচাঁপা। এ গাছের পাতা আমাদের দেশের নোনাগাছের মত দেখতে - এ সবর্ণচাঁপা গাছ নয় কখনো। তবে এ চম্পক ফল আমি কখনো দেখি নি, সে আমি দাবীকার করাচি । বড় বড় গাছ বেয়ে এক ধরনের লতা উঠেচে। ওঁরা বলেন-বানো মেটে আল হয়। এর তলায়। এদেশের হো-মেয়েরা বন থেকে এগালো সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ঘন অরণ্যশীর্ষে প্ৰভাতের সােয্যালোকে, কচিৎ কোন বনপল্প সাবাস, এ বড় বনানীর একটা গভীর রহস্যের ভাব আমার মনে এনে দিয়েচে ; ভুলতে পারাচি নে অরণ্য-সমাকুল সিং ভূমের যে অংশে বিচরণ করচি, এটি ব্যাঘ্র ও অন্যান্য শব্বাপদঅধ্যুষিত এক মহাবিন ; ঠিক শৌখিীন কোন পাকে বেড়ানো নয়। এটি।--যে কোন সময়ে মত্ত হস্তীযথ বা মহাকায় ব্যান্ত্রের সামনে এসে পড়তে পারি, আমরা সম্পর্ণে নিরস্ত্র --ফরেস্ট' গাডের সাকন্ধস্থ কুড়ল তখন কি কোনো কাজে আসবে ? হরদয়াল সিং বললেন—এখান থেকে টাইগার হিলে যাবেন ? -সে কোথায় ? -মাইল পাঁচেক দরে এই বনের নিবিড়তম অংশে। বিহারের গবানর একবার কনজারভেটরিকে না কি বলেছিলেন- তোমাদের বনের খব। wild জায়গাটি একবার দেখতে চাই। তাই বনবিভাগ থেকে এই সস্থানটি নির্বাচিত করা হয়। অবিশ্যি এর মধ্যে লাটসাহেবের সখি সবিধের দিকে কিছ দন্টি রাখা হয়েছিল বই কি ! —কেমন জায়গাটি ? —খানিকটা পাহাড়ের উপর উঠতে হবে। একটা পাহাড়ের ওপরে সমতলভূমি টেবিলের মত। সেখান থেকে চারিদিকে চাইলে মনে হবে পথিবীতে ঘন বন ছাড়া আর বঝি কিছ নেই। দশ্য বড় চমৎকার। সত্যিকার বনের সৌন্দৰ্য দেখবেন যাবার কোন আপত্তি ছিল না, কিন্তু পাঁচ মাইল কি যাওয়া যাবে হোটে সস্ত্রীক ? উনি সঙ্গে না থাকলে কোন কথা ছিল না। দেখি কত দর কি হয়। যে নালার ধার দিয়ে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সে নালাটির কালো জলে বিশাল বনস্পতিশ্রেণীর ছায়া। এক জায়গায় খাব বড় কনটর ট্ৰেণ্ড, এখন জল নেই।-- বর্ষাকালে এর মধ্যে জল জমে বনভূমিকে আদ্র করে, মাটিকে সরস করে। বত্তমান অবস্থা দেখলে সে কথা বিশবাস করা শক্ত । এইবার আমরা বনের উত্পচিদিকে যাচ্ছি মনে হােল। কারণ লম্বা লম্বা ঘাস দেখা গেল এবার। ভূমি যেখানে অপেক্ষাকৃত নীরস ও পাষাণময়, সেখানে নাকি ঘাস দেখা যায় বনে । এ ধরনের ঘাস আর কোথাও জলময় না। একজন ফরেসন্ট গাড, কি ধরনের এক পাতা তুলে নিয়ে এল। শািনলাম, এ পাতা দিয়ে বনের লোকেরা দিব্যি চাটনি তৈরী করে খায়। আমার সন্ত্রী বললেন-কি করে চাটনি তৈরি হয় ? --শাধ বেটে একটি নতুন দিয়ে খেলেই হোল। পদিনার মত। বেলা প্রায় দশটা। ঘড়ি দেখে সেটা বোঝা গেল বটে, কিন্তু এই বনের মধ্যে থেকে তা কিছই বোঝবার জো নেই। রোদ্দর পড়ে নি মাটিতে বিশেষ কোথাও। ঘাস, পাতা এখনও শিশিরাদ্র। S4