পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পদব্ৰজে কইনা নদী পার হয়ে ওপারে গেলাম। দরে দরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে, প্রাকৃতিক দশ্য চিরকালই ভালবাসি, নীল পাহাড়শ্রেণী দেখে মনে বড় আনন্দ হোল। ওখান থেকে যেতে পথের ধারে ধারে দ-দশটি শালগাছ, মাঝে মাঝে ছোটখাটাে পাহাড়, তার ওপর গাছপালা। আমার বন সম্পবন্ধে কোনো ধারণা নেই পকেবই বলেছি। বিন্ধ্যাচলে বন দেখে ভেবেছিলাম। এই বঝি নিবিড় অরণ্য। এর চেয়ে আর কি বড় বন হতে পারে ? আমার দেশ আরা জেলায়, বন বলে কোনো জিনিস নেই, শািন্ধ ক্ষেতখামার আর চাষা জমি। জমির বড় দাম, এতটকু পড়তে পায় না। আমি বললাম-কত দাম জমির ? -পাঁচ-ছাঁশো টাকা বিঘে। তাও ভাববেন না খব ভাল জমি। --Sp3 p --তারপর মাইল পাঁচেক পথ এসে কোল-বোংসা বলে একটা ছোট গ্রাম। হোজাতীয় অধিবাসীদের বাস। সেখানে এসে কুলিরা আর যেতে চাইলে না। তারা বললে সে গ্রামেই তাদের বাড়ী। আর এক পাও তারা নড়বে না, তাদের মজরি চাকিয়ে দেওয়া হোক। অগত্যা আমাদের সেখানে রাত কাটাতে হোল গ্রামের প্রান্তে বনবিভাগের একটা ছোট খড়ের ঘরে। ঘরটাতে কেউ থাকে না, ঘরের চারিদিকে বড় বড় শাল গাছ, সারা রাত্রি ধরে শিশির পড়তে লাগলো, যেন মনে হচ্ছিল টপ টপ করে বভিট পড়ছে। সময়টা ছিল কাত্তিক মাস। --খেলেন কি ? -- আমার পাচক ঠাকুর দটি ভাত রান্না করলেন। তাই খেয়ে শয়ে পড়ি। পরদিন সকালে উঠে। জিজ্ঞেস করে জানলাম পোংসা সেখান থেকে দশ মাইল রাস্তা। পাচককে বললাম, কুলি যোগাড় করে আমার পরে পোংসা রওনা হতে। আমি তখনই সাইকেলে চললাম। ঠাকুর বারণ করলে তখন যেতে। আমি বললাম-বন তো ফরিয়ে ಇಂಗ್ಹ এ রাসােতা বিশেষ খারাপ হবে না। বন যে আরম্ভ হয় নি। তখন কি তা G মিঃ হরদয়াল সিং বললেন-পোংসাতে আমিও ছিলাম ট্রেনিং-এর সময় । দেরাদনে ফরেস্ট কলেজে যাওয়ার পকেব। ওখানে বেঙ্গল টিম্পবার ট্ৰেডিং কোম্পানীর আপিস ছিল সে সময়। মিঃ সিংহ বললেন-কোল-বোংসা থেকে মাইল খানেক রাসােতা বেশ বন পেলাম । কিন্তু নিকটেই গ্রামের গর, মহিষ চরছে, কাঠারে কাঠ কাটাচে, সতরাং তত ভয় হবার কথা নয়। তারপরে মহাদেবশাল বলে একটা ঝণা পার হলাম, নিবিড় বনের মধ্যে ঝির ঝির করে বইছে পাথরের ওপর দিয়ে। ভাবলাম, বন আর কতদার হবে ? এই শেষ হয়ে গেল ! ক্ৰমে পাহাড়ের ওপর রাসােতা উঠতে লাগলো, উঠচে, উঠচে, সাইকেলে যেতে যেতে পা ভেঙে পড়চে, বকের মধ্যে কেমন অস্বসিত হচ্চে, এদিকে বন ক্রমশঃ নিবিড় থেকে নিবিড়তম হতে লাগলো। জনমানবহীন সনিজজন সানিবিড় বনানী সেই ক্ৰমোচ্চ পাহাড়ী পথের পাশে। আরা জেলার অধিবাসী আমি, অমনতর বনের ধারণাই নেই আমার। ভয়ে বিস্ময়ে আমি কেমন হয়ে গেলাম। একটা মানষি কি নেই সেই পথে ? যত যাই পথেরও কি শেষ নেই ? অত বেলা হয়েছে কিন্তু সে বনে ভালো করে তখনও সায্যের কিরণ পড়ে নি। এ রকম আবার বন হয়! আমরা যেখানে পাথরের চাতালে বসে গল্পটা শািনছিলাম, বরকেলা পাহাড়শ্রেণীর সান প্রদেশের বনানীর মধ্যে সেখানে অন্ধকারে চারিদিকে যেন মিঃ সিংহের এ অভিজ্ঞতা নিজেদের কাছেই বাস্তব হয়ে উঠেছিল। এ গলপ শািনতে হয় এমন জায়গাতে OO